ইরানের তেহরানে গত বুধবার (মঙ্গলবার দিবাগত রাতে) হামলায় নিহত হন হামাসের শীর্ষ নেতা ইসমাইল হানিয়া। এ হত্যাকাণ্ডে ইসরায়েলকে দায়ী করেছে হামাস। হানিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক পরিস্থিতি আরও সংকটময় হয়ে উঠছে।
ইতিমধ্যে হানিয়া হত্যার জবাব দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের খানানি বলেছেন, হানিয়ার রক্ত কখনোই বৃথা যাবে না। এমতাবস্থায় ইসরায়েলে কখন, কোথায় হামলা করবে ইরান, তা নিয়ে কৌতুহল তৈরি হয়েছে।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা জানিয়েছে তেহরান। ইসরায়েলের পক্ষ থেকেও হুঁশিয়ারি দিয়ে জানানো হয়েছে, হামলা হলে বসে থাকবে না তারা।
এমন উত্তেজনার মধ্যে পেন্টাগন বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী অতিরিক্ত জেট বিমান এবং রণতরী মোতায়েন করেছে।
এ অবস্থায় আমরা দুটি বিষয় নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। প্রথমত- আমরা উত্তেজনা নিরসনে কাজ করছি। দ্বিতীয়ত- সামরিক শক্তিগুলোকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
আর এটি হচ্ছে কারণ, ইসরায়েল মনে করে একটি আক্রমণ আসবেই। এবং ইরান ও তার প্রক্সি মিত্ররা এ হামলায় অংশ নেবে বলে নিশ্চিত যুক্তরাষ্ট্রও।
এটা এমন একটি বিষয় যে কখন, কোথায় থেকে থেকে হামলা হবে কেউ জানে না।
গত এপ্রিলে ইসরায়েলে এক দফা হামলা চালিয়েছিল ইরান। অবশ্য ওই সময় ইরানের ৩০০ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের ৯৯ শতাংশই আকাশে থাকা অবস্থায় চার দেশের (যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল, জর্ডান ও যুক্তরাজ্য) জোট ধ্বংস করতে সক্ষম হয়। এবারে ইরান কীভাবে প্রতিশোধ নিতে চায়, তা এ সংঘাতে পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। ইরান যদি আগের মতোই সরাসরি হামলা চালায়, তাহলে উত্তেজনা আরও বেড়ে যাবে।
ওয়াশিংটনের ধারণা, গত ১৩ এপ্রিল সিরিয়ার দামেস্কে কনস্যুলেটে ইসরায়েলি হামলার জবাব দিতে দেশটিতে হামলা চালায় ইরান। তবে এবার ইরান কীভাবে প্রতিশোধ নিতে চায়, তা এ সংঘাতে পার্থক্য গড়ে দিতে পারে।
এ হামলায় দু’পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ হামলা ইরান হবে হানিয়া মৃত্যুর প্রতিহিংসার জবাব এবং আর এটি দৃষ্টান্তমূলক হবে। কারণ, তেহরান আর কোনো গুপ্ত হত্যা দেখতে চায় না। তবে এ হামলার লক্ষ্য হলো সামরিক এলাকায়, সাধারণ মানুষরা এর বাইরে থাকবে বলে জানিয়েছে ইরান।
কিন্তু এবারের হামলায় ভিন্ন দৃশ্য দেখা যাবে। কারণ, এর আগের বার ঠিকমতো লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করা যায়নি। তবে কীভাবে হামলা চালানো হবে এ বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। আসলে কেউ জানে না কখন, কোথায় ইরান হামলা করবে। আর হামলার লক্ষ্য কোন এলাকা, তা-ও জানা যায়নি।
এদিকে ইসমাইল হানিয়ার মৃত্যুতে লেবান, ইয়েমন, জর্ডানসহ মধ্যপ্রাচ্যের হাজারো মানুষ শোক মিছিলে অংশ নেন। হানিয়ার মরদেহে শ্রদ্ধা জানানোর পর তাকে কাতারের রাজধানী দোহার উত্তরে লুসাইল এলাকার একটি কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এর আগে ঈদুল ফিতরের দিন গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় হানিয়ার তিন ছেলে ও চার নাতি-নাতনি নিহত হন। তারা গাড়িতে করে আত্মীয়ের বাসায় যাচ্ছিলেন। ওই সময় হানিয়া বলেছিলেন, গত ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর থেকে ৬০ আত্মীয়-স্বজন হারিয়েছেন তিনি। সবশেষ তিনিও হত্যার শিকার হলেন।
এদিকে জাতিসংঘ বলছে, গত ৭ অক্টোবরের পর থেকে ইসরায়েলে হামলায় গাজা সিটির দুই-তৃতীয়াংশ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হামলায় দেড় লাখেরও বেশি স্থাপনা ধ্বংস হয়। ফিলিস্তিনের ৩৯ হাজার ৪৮০ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ১৬ হাজার ৩১৪ জন শিশু মারা যায়। এছাড়াও ইসরায়েলি হামলায় ৯১ হাজার ১২৮ জন মানুষ আহত হন। অন্যদিকে হামাসের হামলায় আনুমানিক ১ হাজার ১৩৯ জন ইসরায়েলি নিহত হন। এছাড়াও ২০০ জনের বেশি ইসরায়েলি নাগরিককে বন্দি করা হয়।