স্বাধীনতা সংগ্রামের ৫৪ বছর পর মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের আসাদুজ্জামান বাচ্চুর সমাধির সন্ধান পেয়েছে তাঁর পরিবার। যুদ্ধের সময় আওয়ামী লীগ নেতা বাবাকে খুঁজে না পেয়ে ছেলে বাচ্চুকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি সেনারা।
শনিবার দুপুরে সিলেট সদর উপজেলার সালুটিকর নামক স্থানে সিলেট ক্যাডেট কলেজের পাশে অবস্থিত শহীদ স্মৃতি উদ্যানে তাঁর সমাধির খোঁজ মেলে। পরে সেখানে তাঁর নামফলক উন্মোচন করা হয়। ফলক উন্মোচন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আব্দুস সালাম বীরপ্রতীক, বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল কামাল, লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মহিত চৌধুরী, প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাসন, লন্ডনভিত্তিক টিভি চ্যানেল এসের চেয়ারম্যান আহমেদ উস সামাদ জেপি, প্রখ্যাত জিন বিজ্ঞানী আবেদ চৌধুরী এবং শহীদ আসাদুজ্জামান বাচ্চুর ছোট ভাই, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মানিকুজ্জামান মিরন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মুক্তিযোদ্ধাদের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন তৎকালীন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আসকর আলী। ১৯৭১ সালের ৪ মে পাকিস্তানি সেনারা ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় প্রবেশ করে তিন ভাগে বিভক্ত হয়। তাদের একটি দল ফেঞ্চুগঞ্জ থানা রোড, দ্বিতীয় দলটি ডাকঘর সড়ক এবং তৃতীয় দলটি ফেঞ্চুগঞ্জ দিকে ডাকবাংলোর কাছে অবস্থান নেয়। এ সময় তারা আসকর আলী ও তাঁর বড় ছেলে আসাদুজ্জামান বাচ্চুর খোঁজ করতে থাকে। এ সময় এক ব্যক্তি বাচ্চুকে দেখিয়ে দিলে হানাদার বাহিনী তাঁকে ধরে নিয়ে তাদের বাড়িতে হাজির হয়। সেখানে আওয়ামী লীগ নেতা আসকর আলীকে না পেয়ে তাদের বাড়িঘরে আগুন দেয়। সঙ্গে করে নিয়ে যায় বাচ্চুকে।
৫৪ বছর পর্যন্ত তাঁর পরিবারের লোকজন জানতেন না বাচ্চু কোথায় আছেন। হত্যা করা হলে কোথায় তাঁর সমাধি? পরিবারের ওই শহীদ সদস্যের সমাধির খোঁজ পাওয়া যায়।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষক ও ফেঞ্চুগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি রিয়াজ উদ্দীন ইসকা জানান, তারা জানতেন শহীদ আসাদুজ্জামান বাচ্চুকে ফেঞ্চুগঞ্জের কাইয়ার গুদামের টর্চার সেলে নির্যাতন করে হত্যার পর কুশিয়ারা নদীতে লাশ ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ৫৪ বছর তাঁর সমাধি শনাক্ত না হওয়ায় ফেঞ্চুগঞ্জবাসী তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারেনি। এখন তাঁর সমাধি শনাক্ত হওয়ায় বাঙালি জাতি আরও একজন বীর শহীদের সন্ধান পেল।
শহীদ বাচ্চুর ছোট ভাই মানিকুজ্জামান মিরন জানান, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সিলেট জেলা শান্তি কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ফতেহ ইউনুস খান তাদের পরিবারকে জানিয়েছিলেন, বাচ্চু সালুটিকরে আছেন। পরে আর তিনি ফিরে আসেননি। তাঁর লাশ বা সমাধির সন্ধানও মেলেনি। পরে সিলেটের সাংবাদিক ও সেনাবাহিনীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সহায়তায় বাচ্চুর সমাধিস্থলের খোঁজ পেয়েছেন।
জানা যায়, সিলেটের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষক ও সাংবাদিক অপূর্ব শমমার মাধ্যমে এক মাস আগে সংবাদ পেয়ে স্বাধীনতার স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আবদুস সালাম বীরপ্রতীকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শহীদ আসাদুজ্জামান বাচ্চুর ছোট ভাই মানিকুজ্জামান মিরন। পরে সেখান থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে বড় ভাই শহীদ বাচ্চুর সমাধির সন্ধান পায় তাঁর পরিবার।
Leave a comment