গল টেস্টে গতকালই ধরাশায়ী হতে পারতো নিউজিল্যান্ড। যদি না বৃষ্টি বাগড়া দিত। গতকাল ৫ উইকেট ১৯৯ রান নিয়ে তৃতীয় দিন শেষ করে কিউইরা। ইনিংস হার এড়াতে তখনো কিউইদের করতে হতো ৩১৫ রান। গোলের ঘূর্ণি পিচে চতুর্থ দিনে এসে জয়সুরিয়া-নিশানের স্পিন সামলিয়ে টিকে থাকা যে সম্ভব না, তা বুঝতে অসুবিধা হয়নি নিউজিল্যান্ডের ব্যাটারদের। তাই দ্বিতীয় ইনিংসে আক্রমণাত্নক খেলতে থাকে সফরকারীরা। তা সত্ত্বেও দুই দফায় ব্যাট করে শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংসের রান টপকানো সম্ভব হয়নি কিউইদের পক্ষে। দ্বিতীয় ইনিংসে তারা গুটিয়ে গেছে ৩৬০ রানে। এতে নিউজিল্যান্ডকে ইনিংস ও ১৫৪ রানের ব্যবধানে হারিয়েছে স্বাগতিক লঙ্কানরা। দুই টেস্টের সিরিজ খেলতে এসে কিউইরা পেল হোয়াইটওয়াশের লজ্জা। সিরিজের প্রথম টেস্ট ৬৩ রানে জিতেছিল লঙ্কানরা।
শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংসে ৬০২ রান করে। যেখানে কামিন্দু মেন্ডিস ১৮২ এবং দিনেশ চান্দিমাল ১১৬ রান করেন। সেঞ্চুরি করেছেন কুশল মেন্ডিসও। নিউজিল্যান্ডের হয়ে প্রথম ইনিংসে ১৪১ রানের বিনিময়ে ৩টি উইকেট নেন গ্লেন ফিলিপস। গল টেস্টের প্রথম দুই দিনে ৩ সেঞ্চুরি করে যে রান বন্যায় ভাসিয়েছেন লঙ্কান ব্যাটাররা, সেখানে কিউই ব্যাটাররা টিকতে পারেননি ৪০ ওভারও। মাত্র ৮৮ রানেই শেষ হয় তাদের প্রথম ইনিংস।
নিউজিল্যান্ডকে এভাবে ধসিয়ে দেওয়ার কারিগর প্রভাত জয়সুরিয়া। ৪২ রানে ৬ উইকেট নিয়েছেন তিনি। ২ উইকেটে ২২ রান নিয়ে গতকাল শুরু করেছিল নিউজিল্যান্ড। শুরুতেই উইলিয়ামসনকে ফিরিয়ে দেন প্রভাত। এর পর রাচিন রবীন্দ্র, এজাজ প্যাটেলকে তুলে নেন অভিষিক্ত স্পিনার নিশান প্যারিস। এর পরই শুরু প্রভাত ম্যাজিক। ৩ বলের মধ্যে টম ব্লান্ডেল ও গ্লেন ফিলিপসকে ফেরান এই স্পিনার। সব মিলিয়ে ১৬ বলের মধ্যে ৫ উইকেট হারায় কিউইরা। এর পর দলীয় ৬৬ রানে ড্যারিল মিচেলের পর টিম সাউদিকেও ফেরান প্রভাত। মিচেল স্যান্টনারের ২৯ রানের সুবাদে ৮৮ পর্যন্ত স্কোর টেনে নেয় তারা। শেষ ব্যাটার হিসেবে স্যান্টনার আউট হওয়ার সময় উপমহাদেশে নিজেদের পঞ্চম সর্বনিম্ন রানের লজ্জার রেকর্ডে নাম লেখায় কিউইরা।
নিউজিল্যান্ড ৮৮ রানে অলআউট হওয়ায় ৫১৪ রানের লিড পায় লঙ্কানরা। যেটা টেস্ট ইতিহাসের পঞ্চম বৃহত্তম লিড। ফলোঅনে পড়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমেও সুবিধা করতে পারেনি কিউইরা। রানের খাতা খোলার আগেই ফিরে যান টম লাথাম। এর পর ডেভন কনওয়েকে নিয়ে ৯৭ রানের জুটিতে প্রতিরোধ গড়েন উইলিয়ামসন। ১২১ রানে তারা পাঁচ উইকেট হারানোর পর টম ব্লান্ডেল ও গ্লেন ফিলিপস আবার রুখে দাঁড়ান। দ্বিতীয় ইনিংসে শনিবার ৭৮ রানের জুটি গড়ে অপরাজিত ছিলেন টম ব্লান্ডেল ও গ্লেন ফিলিপস। ৪৭ রান নিয়ে প্রথমজন ও ৩২ রান নিয়ে অপরাজিত ছিলেন ফিলিপস। ব্লান্ডেন চতুর্থ দিন আর ১৩ রান যোগ করেই আউট হন, ফিলিপসও বেশি দূর যেতে পারেনি। ৯৯ বলে ৭৮ রান করেন তিনি। দুজনই নিশান প্যারিসের শিকার হন।
এরপর মিচেল স্যান্টনার বড় ইনিংস খেলেন। তার ৬৭ রানে কেবল হারের ব্যবধানই কমেছে। আজাজ প্যাটেল করেন ২২ রান। ৩৬০ রানে শেষ হয় তাদের ইনিংস। ৬ উইকেট পূর্ণ করেন প্যারিস। প্রভাত জয়সুরিয়া ৩টি ও ধনঞ্জয়া ডি সিলভা নেন ১ উইকেট।
দুই ম্যাচে মোট ১৮ উইকেট শিকার করা প্রভাত জয়সুরিয়ার হাতে গেল সিরিজসেরার পুরষ্কার। একাধিক রেকর্ড ছুঁয়ে ১৮২ রানের হার না মানা ইনিংস খেলা কামিন্দু মেন্ডিস জিতলেন ম্যাচ সেরার পুরষ্কার। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে কিউইদের থামাতে অবদান রাখেন নিশান প্যারিস, একাই নেন ৬ উইকেট।
এ নিয়ে টানা তিন টেস্ট জিতল শ্রীলঙ্কা। দ্য ওভালে ইংল্যান্ডকে ৮ উইকেটে হারানোর পর ঘরের মাঠে এসে নিউজিল্যান্ডকে দিল হোয়াইটওয়াশের লজ্জা। আইসিসি ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট টেবিলে নিজেদের অবস্থান আরও শক্ত করল তিনে থাকা শ্রীলঙ্কা। ৯ ম্যাচে তাদের সংগ্রহ ৬০ পয়েন্ট। ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ার সাথে চারটি টেস্ট খেলবে শ্রীলঙ্কা।