ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে উদ্বেগের মাঝে ব্রিটিশ সরকার ইরান-সংশ্লিষ্ট কয়েক ডজন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। সোমবার ব্রিটিশ সরকার নিষেধাজ্ঞা আরোপের এই তথ্য জানিয়েছে। এর আগে, জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নও ইরানের বিরুদ্ধে একই ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে।
ব্রিটেন বলেছে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির বিস্তার ঠেকাতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। গত রোববার পরমাণু কর্মসূচি ঘিরে ইরানের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা ও অন্যান্য নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করে জাতিসংঘ। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর উদ্যোগে ইরানের ওপর নিষোজ্ঞা আরোপের এই প্রক্রিয়া নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে তেহরান।
ইরান ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি লঙ্ঘন করেছে অভিযোগ তুলে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে তেহরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের প্রক্রিয়া শুরু করে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং জার্মানি। ইরানকে পারমাণবিক বোমা তৈরির সক্ষমতা অর্জন করা থেকে বিরত রাখাই ছিল ওই চুক্তির লক্ষ্য। যদিও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির অভিযোগ বরাবরের মতো অস্বীকার করে আসছে তেহরান।
সোমবার যুক্তরাজ্য ইরানের ৭১টি নতুন নাম নিষেধাজ্ঞার তালিকায় যুক্ত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এবং দেশটির প্রধান আর্থিক ও জ্বালানি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
ব্রিটেনের নতুন নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পদ জব্দ, আর্থিক লেনদেনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং তাদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, রাশিয়া এবং চীনের সঙ্গে ইরানের স্বাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তির সমাপ্তি মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল ইরানের পরমাণু স্থাপনায় বোমা হামলা চালানোর পর ওই অঞ্চলে ইতোমধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ২০০৬ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে গৃহীত বিভিন্ন প্রস্তাবের মাধ্যমে ইরানের ওপর আরোপিত সব নিষেধাজ্ঞা শনিবার ইউরোপের স্থানীয় সময় রাত ৮টার দিকে পুনর্বহাল করা হয়েছে। চলতি সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে এসব নিষেধাজ্ঞা ফেরানোর প্রক্রিয়া বিলম্বিত করার চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত তা ব্যর্থ হয়।
ইউরোপীয় দেশগুলোর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমরা ইরান এবং অন্যান্য সব দেশকে এসব প্রস্তাব সম্পূর্ণভাবে মেনে চলার আহ্বান জানাচ্ছি। যৌথ এই বিবৃতিতে ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীরাও স্বাক্ষর করেন।
এদিকে, রোববার এক বিবৃতিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান কায়া কালাস বলেছেন, জাতিসংঘ ও ইইউর পূর্বে প্রত্যাহার করা সব ধরনের পরমাণু সংশ্লিষ্ট নিষেধাজ্ঞা অবিলম্বে পুনর্বহাল করার পদক্ষেপ নেবে ইইউ ব্লক।
তিনি বলেন, ইরানের পরমাণু ইস্যুর টেকসই সমাধান কেবল আলোচনা ও কূটনীতির মাধ্যমেই সম্ভব। অন্যদিকে, নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের বিরুদ্ধে সতর্ক করে দিয়ে ইরান বলেছে, নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করা হলে এর কড়া প্রতিক্রিয়া জানাবে তেহরান। এর আগে, শনিবার ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানিতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতদের পরামর্শের জন্য দেশে ফিরিয়ে নিয়েছে ইরান।
গত শুক্রবার ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেন, ইরানের পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি) থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কোনও ইচ্ছা নেই।
জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালকে অবৈধ বলে অভিহিত করেছে তেহরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র রাশিয়া। শনিবার জাতিসংঘের সদরদপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের এই পদক্ষেপ অবৈধ এবং কার্যকর করা সম্ভব নয়।
প্রকাশক ও সম্পাদক- আলি আবরার । নিরালা, খুলনা থেকে প্রকাশিত