উচ্চকক্ষ ফাংশনাল হলে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি কমবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন। তিনি বলেন, দেশে রাজনীতির মাঠে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি হয়। আমার ধারণা যদি উচ্চকক্ষকে ফাংশনাল করা সম্ভব হয় তাহলে মাঠে এই যে অবরোধ-হরতালের মতো কর্মসূচি আছে, সেটার সংখ্যা কমে আসতে পারে।
তিনি বলেন, উচ্চকক্ষ পলিসি নির্ধারণের ক্ষেত্রে যারা সরকারি দলে থাকবেন তাদের যথেষ্ট ভাবার পরিবেশ তৈরি করবে। আমাদের রাজনীতিতে একটা গুণগত পরিবর্তনের জায়গা তৈরি হতে পারে।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘প্রস্তাবিত উচ্চকক্ষ কি জাতীয় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারবে?’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
আখতার বলেন, আমরা উচ্চকক্ষের যত উপযোগিতা নিয়ে আলোপ করব এসব উপযোগিতা একটা শর্তের ওপর নির্ভরশীল। সেটা হলো উচ্চকক্ষ ভোটের পিআর অনুপাতে প্রতিনিধিত্ব নির্বাচিত হতে হবে। যদি এই পিআর পদ্ধতিতে প্রতিনিধিত্বের বিষয়টা না থাকে, তাহলে আর এই উপযোগিতার বিষয়গুলো নিয়ে আলাপ করার কোনো প্রাসঙ্গিকতাই থাকে না।
উচ্চকক্ষে পিআর সিস্টেমের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে যে সাংবিধানিক সংকটগুলো অতীতে তৈরি হয়েছিল সেটা যেন ভবিষ্যতে তৈরি না হয়। তার জন্য উচ্চকক্ষে পিআর সিস্টেম একটা রক্ষাকবজ হিসেবে কাজ করবে। এর বাইরে আরও কিছু উপযোগিতা আছে। আমরা নিম্নকক্ষে যে বিষয়গুলো নিয়ে আলাপ-আলোচনা হতে দেখবো, একটা আইন প্রণয়ন করা হলে সে আইনটা কতটুকু ভালো হলো, কতটুকু খারাপ হলো সেই বিষয়গুলো নিয়ে উচ্চকক্ষে আলোচনার একটা দীর্ঘ সুযোগ আছে।
সংবিধান সংশোধনের ব্যাপারে এনসিপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, আমরা বাংলাদেশের রাজনীতিকে যদি ফলো করি এখানকার একটা বড় সংকট দলীয়ভাবে টু থার্ড মেজরিটির বলে সংবিধান সংশোধন করতে পারার ক্ষমতা। এটা আমাদের অনেক ভুগিয়েছে। আমাদের এমন অনেকগুলো সংশোধনী হয়েছে যেই সংশোধনীগুলো শুধু একটা দলের আদর্শ, চিন্তা ও একটা দলের কর্মসূচি পরিকল্পনাকে মাথায় রেখে করা হয়েছে। সংবিধান তো সেই জিনিস নয়। সংবিধান এমন কিছু মূলনীতির সমষ্টি যেখানে মোটা দাগে পিপলস উইলয়ের একটা রিফ্লেকশন থাকবে। কিন্তু যখন আমরা দেখি এই সংবিধানকে যারা টু থার্ড মেজরিটি পেলেন তারা তাদের মতো করে পরিবর্তন করতে পারে সেটা আমাদের এখানে একটা সংকট তৈরি করে।
পূর্বেকার রাজনীতিতে পলিসি ডায়ালগ মুখ্য ছিল না উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেখানে পেশিশক্তিই ছিল মুখ্য বিষয়। কারা কতটা শক্তিশালী, কতটা জনবল তাদের আন্ডারওয়ার্ল্ডের সঙ্গে কানেকশনস বিষয়গুলোই ক্ষমতায় আসা না আসার বিষয়গুলোকে নির্ধারণ করতো। কিন্তু যখন উচ্চকক্ষে প্রতিনিধিরা থাকছেন তারা সেই কাঠামোর মধ্য থেকেই সংসদে বসে যে কথা বলার একটা পরিসর তৈরি করতে পারলেন সেটা একটা ডায়ালগের পরিবেশ তৈরি করবে। সেটা একটা পলিসি দেওয়ার পরিবেশ তৈরি করবে। ইভেন বাংলাদেশে কোনো আইন পাস করার সময় নিম্নকক্ষে যতটা না আলাপ আলোচনা হয় আমার ধারণা উচ্চকক্ষে তার থেকেও বেশি আলাপ আলোচনা হবে।
সিপিডির ফেলো অধ্যাপক রওনক জাহানের সভাপতিত্বে সংলাপে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, গবেষক ও কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রকাশক ও সম্পাদক- আলি আবরার । নিরালা, খুলনা থেকে প্রকাশিত