জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) সংশোধনের নানা জটিলতা নিরসনে হিমশিম খাচ্ছে নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ। এক্ষেত্রে এসব জটিল সংশোধন সহজ উপায়ে নিষ্পত্তির পন্থা খুঁজতে অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপে বসতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

ইসি কর্মকর্তা জানান, নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংশোধনের যেসব আবেদন আমাদের কাছে আসে সেগুলোর এমন কিছু আবেদন থাকে, যা সংশোধন করাটা নৈতিক নয়। আবার সেগুলো সংশোধন না করলে তার সঙ্গে জড়িত পুরো পরিবার অচল হয়ে পড়বে, এসব মানবিক দিকে বিবেচনা করে ওই সব এনআইডি সংশোধন করে দেওয়া হয়।

ওই কর্মকর্তা বলেন, কিন্তু এখন প্রশ্ন উঠেছে, এভাবে সংশোধন করলে ভোটারের ডাটাবেইজ প্রশ্নবিদ্ধ হবে। আবার সংশোধন না করলে অনেক পরিবার ধ্বংসের মুখে পড়বে। তাই আমার চিন্তা করছি এ সঙ্গে যারা জড়িত তাদের নিয়ে একটি সংলাপ করে এনআইডি সংশোধনের একটি সহজ প্রক্রিয়া তৈরি করতে। এ সংলাপে রাজনৈতিক দল, শিক্ষক, সুশীল সমাজসহ বিশেষজ্ঞরা থাকবেন।

এ বিষয়ে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংশোধনের কার্যক্রম সহজ করার লক্ষে অংশীজনদের সঙ্গে একটি সেমিনার করার জন্য কমিশন সম্মতি দিয়েছে।’

সেমিনারে কারা কারা অংশগ্রহণ করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কারা থাকবেন তা এখনো আমরা ঠিক করিনি। যেহেতু এটা নিয়ে পরিকল্পনা হচ্ছে, যা নাগরিকদের জন্য একটি ভালো কাজ হবে বলে আমি মনে করি।’

কবে নাগাদ এ সেমিনার করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যেহেতু কমিশন এ সেমিনার করতে সম্মতি দিয়েছে সেহেতু চলতি মাসে দ্বিতীয়ার্ধে এই সেমিনার করার পরিকল্পনা রয়েছে।’

সেমিনারের উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমরা যে সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হচ্ছি, আবার মানুষও কিন্তু সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। এই দুই দিকের সমস্যাগুলো কীভাবে একটা সুন্দর সমাধানে আসা যাবে এবং মানুষকে এ সমস্যা থেকে কীভাবে শান্তি দেওয়া যায় সেটির একটি সুন্দর সমাধান খুঁজতে এই মাসের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে শেষের দিকে অংশজনদের নিয়ে একটি সেমিনার করব।’

সংশোধনের উদ্দেশ্য দেখে হবে এনআইডি সংশোধন

জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করতে আসা নাগরিকদের এনআইডি সংশোধন করা হবে নাগরিকদের সংশোধনের উদ্দেশ্য যাচাই করে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘এনআইডি সংশোধন দীর্ঘদিন ঝুলে থাকে, এটাকে কী করে সহজীকরণ করা যায় সে আলোচনা হয়েছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, বিষয়গুলো মনে হবে ব্যক্তি নাগরিকদের যদি অসৎ উদ্দেশ্যে না থাকে, সেগুলোকে সহজভাবে সমাধান করে দেওয়া হবে। আবার পুরো পরিচয় পরিবর্তন করতে চাইলে আমরা কঠোর হবে। এক্ষেত্রে সময় লাগলেও জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে এটা করতে হবে। ডাটা সেন্টারের স্বচ্ছতার জন্যও এটা করতে হবে।’

ইসি বলেন, ‘অনেকে দ্বৈত কার্ড বা এনআইডি নিয়েছেন। এই সংখ্যা খুব বেশি নয়। এদের ক্ষেত্রে ভুলভাবে কেউ দুইবার নিলে প্রথমটা থাকবে, দ্বিতীয়টা বাদ যাবে। এছাড়া বয়স বেশি কিন্তু তা কমিয়ে একটা চাকরি নিয়েছে এমন হলে আমরা নিরুৎসাহিত করব। এমন হলে সেটা কমিশন পর্যন্ত আসবে। আবার পুরো পরিচয় পরিবর্তন করতে চাইলে আমরা কঠোর হবে।’

সহজ হচ্ছে এনআইডি সংশোধন আইন

যেসব নাগরিক জাতীয় পরিচয়পত্রের সেবা নির্বাচন কমিশনের কাছে নিয়ে থাকে তাদের জন্য একটি সহজ আইন করার পরিকল্পনা করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এতে নাগরিকরা খুব সহজেই এনআইডি সংশোধন ও অন্য সব সেবা পেয়ে থাকবেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘যারা আমাদের সেবা নিয়ে থাকে, সেই আইনটা সহজ করা, যেন সেবাটা সহজে দেওয়া যায়।’

এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘ম্যাচ ফাউন্ড আছে দুই লাখ নয় হাজার। যেটা দশমিক ১৬ শতাংশ। অনেক সময় শ্রমিক ভাই বা মা-বোনদের কারোকারো আঙ্গুলের ছাপ পরিষ্কার থাকে। অনেক সময় এ কারণে ফলস ম্যাচ আসে। এগুলো যেন দ্রুত করতে পারি সে সিদ্ধান্ত হয়েছে। অনেকেই দুই আইডি নেওয়ায় ম্যাচ হয়েছে। এটা নাইন আউট অব টেন।’

জানা যায়, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংশোধনের চার লাখের বেশি আবেদন ঝুলে আছে ইসি কর্মকর্তাদের টেবিলে। যা আগামী জুনের মধ্যে নিষ্পত্তির জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছে সংস্থাটি।

সবশেষ হালনাগাদ অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে মোট ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি  ৩৭ লাখ ৩২ হাজার ২৭৪ জন। চলমান বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রমে তালিকা থেকে ২৩ লাখের বেশি মৃত ভোটার কর্তন এবং নতুন ভোটার করতে নেওয়া হয়েছে ৬৩ লাখের বেশি নাগরিকের তথ্য। যা আগামী জুনে ভোটার তালিকায় যুক্ত করে হালনাগাদ ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।