খুলনায় ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা এক লাখ ৬ হাজার ১০১ জন। তাদের চিকিৎসায় রয়েছে একটি হাসপাতাল এবং একটি সমিতি। এই দুই স্থানে চিকিৎসক আছেন ১৬ জন। এ দুটি স্থানে দিনে গড়ে ৪শ রোগীর আসেন চিকিৎসা নিতে। ডায়াবেটিক হাসপাতালে প্যাথলজি, চোখ ও দাঁতের বিভাগ থাকলেও কিডনির বিভাগ নেই। অপারেশন থিয়েটার আছে শুধু চোখের চিকিৎসার। বহুবার একটি অ্যাম্বুলেন্স বরাদ্দ চেয়েও পাওয়া যায়নি। মাঝে মাঝে রোগীদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে। এমন পরিস্থিতিতে আজ ১৪ নভেম্বর পালিত হচ্ছে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস।
খুলনা মহানগরীর স্যার ইকবাল রোডে (খুলনা প্রেস ক্লাবের অদূরে) অবস্থিত খুলনা ডায়াবেটিক সমিতি। একসময় এটাই ছিল নগরীতে ডায়াবেটিস রোগীদের চিকিৎসার একমাত্র স্থান। পরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ২০০৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি নগরীর বয়রা এলাকায় এক একর জমির ওপর খুলনা ডায়াবেটিক হাসপাতালের নির্মাণকাজ শুরু করে। প্রায় ২১ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণকাজ শেষে ২০১৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ভবনটি খুলনা ডায়াবেটিক সমিতির কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর ২০১৫ সালের ১ এপ্রিল হাসপাতালটি চালু হয়। কিন্তু হাসপাতালটিতে ছয়তলা ভবন নির্মাণের কথা থাকলেও হয়েছে মাত্র তিনতলা পর্যন্ত। এ ছাড়া সেখানে একশ শয্যা থাকার কথা থাকলেও চালু হয়েছে ২৫ শয্যা। বর্তমানে হাসপাতালটি পরিচালনা করছে খুলনা ডায়াবেটিক সমিতি।
হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে রোগীদের। তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এখানে এমনিতেই চিকিৎসক কম। তারপরও যারা আছেন বেশির ভাগ সময়ই ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। ফলে রোগীর চাপ তারা সামলাতে পারেন না। প্রায়ই রোগীদের পরীক্ষার রিপোর্ট ওলট-পালট হয়ে যায়। তারপরও এই দুই স্থান ছাড়া চিকিৎসার জন্য যাওয়ার আর কোনও জায়গা নেই। তাই বাধ্য হয়েই এখানে আসতে হয়।
খুলনা ডায়াবেটিক হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আবদুস সবুর বলেন, ‘আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে হাসপাতালটি এখনও পূর্ণতা পায়নি। বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জাম বরাদ্দ চেয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরে আবেদন করা হয়েছে।’
এদিকে ডায়াবেটিক সমিতির প্রশাসনিক কর্মকর্তা গোপাল চন্দ্র সাহা বলেন, ‘রোগী হিসেবে ১৬ ডাক্তার পর্যাপ্ত। করোনাকালে আমরা অর্থসংকটে ছিলাম। সরকারের কাছে অনুদানের জন্য আবেদন করেছি। এখানে দিনে গড়ে ৪০০ রোগীর ডায়াগনস্টিক করা হয়। এ পর্যন্ত এ হাসপাতাল এবং সমিতির তালিকায় এক লাখ ৬ হাজার ১০১ জন ডায়াবেটিস রোগী পাওয়া গেছে। পুরুষ ও নারী প্রায় সমান। কিছু শিশুরও ডায়াবেটিস শনাক্ত হয়েছে।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সচেতনতার পাশাপাশি সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং শরীরচর্চায় ডায়াবেটিস ২ টাইপ প্রতিরোধ করা কিংবা সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব। খুলনা ডায়াবেটিক সমিতির চিকিৎসক পুষ্টিবিদ ডা. ফারহানা আক্তার বলেন, ‘ডায়াবেটিস দুই ধরনের। সেগুলো হচ্ছে ডায়াবেটিস টাইপ ১ ও ডায়াবেটিস টাইপ ২। ডায়াবেটিস সম্পর্কে জেনে নিজেকে সুরক্ষা করার একটিই উপায়, তা হলো খাদ্যাভ্যাস ও ব্যয়াম। শরীর চর্চা ও খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে ডায়াবেটিস ২ প্রতিরোধ করা কিংবা সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব। এদিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। সঠিক শিক্ষাই পারে ডায়াবেটিস থেকে আগামীকে রক্ষা করতে।’
দুই ধরনের ডায়াবেটিস সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ডায়াবেটিস টাইপ ১ কখনও ওষুধ দিয়ে ভালো হয় না। রোগীকে ইনসুলিন দিতে হয়। কারণ রোগীর শরীরে ইনসুলিন হরমোন তৈরি হয়নি। এটি জন্মগতভাবে হতে পারে বা ছোট অবস্থায় বড় বড় রোগ থেকেও হতে পারে। রোগীকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ইনসুলিন দিতে হবে। ইনসুলিন দেওয়ার ফলে ডায়াবেটিস টাইপ ১ এর রোগীদের ডায়াবেটিস টাইপ ২ রোগীর চেয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকে।
ডায়াবেটিস টাইপ ২ সাধারণ হয় প্রাপ্তবয়স্কদের। সঠিক খাদ্যাভ্যাস না হলে, ওজন বেশি থাকলে, থাইরয়েড শনাক্ত হওয়া, স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ খাওয়া থেকে ডায়াবেটিস টাইপ ২ হতে পারে। এ টাইপ রোগীর ক্ষেত্রে ওষুধ ও ইনসুলিন দুটিই কাজ করে।
পিএসএন/এমঅাই
প্রকাশক ও সম্পাদক- আলি আবরার । নিরালা, খুলনা থেকে প্রকাশিত