বেকারত্ব ও সামাজিক কুসংস্কারের বেড়াজাল ভেঙে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার ২৭ বছর বয়সী শিক্ষিত যুবক হাসিবুর রহমান ইমন। অনলাইনভিত্তিক দেশি মাছের ব্যবসা গড়ে তুলে শুধু নিজের ভাগ্যই বদলাননি, বরং কর্মসংস্থান তৈরি করেছেন আরও অনেকের জন্য।
বর্তমানে খুলনা শহরের তুতপাড়া এলাকায় বসবাসকারী ইমন খেটে খাওয়া এক সাধারণ পরিবার থেকে উঠে এসেছেন। খুলনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে কম্পিউটার ডিপ্লোমা শেষ করার পর অনেক জায়গায় চাকরির খোঁজে ঘুরেছেন তিনি।
চাকরির পিছনে না ছুটে তিনি সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজেই বেছে নেন জীবিকার পথ—মাছ বিক্রিকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন, যেটি অধিকাংশ শিক্ষিত তরুণের কাছেই অগ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত।
কিন্তু ইমন পিছপা হননি। বরং নিজের মেধা ও দূরদর্শিতাকে কাজে লাগিয়ে মাছ বিক্রিকে রূপ দেন আধুনিক, প্রযুক্তিনির্ভর একটি উদ্যোগে।
২০২২ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন grammosundarban.com, একটি অনলাইনভিত্তিক 'রেডি-টু-কুক' দেশি মাছ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান।
খুলনার স্থানীয় খামার ও ঘের থেকে দেশি প্রজাতির মাছ সংগ্রহ করে, সেগুলো পরিষ্কার ও প্রক্রিয়াজাত করে রান্নার জন্য প্রস্তুত অবস্থায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠিয়ে থাকেন তিনি।
বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সঙ্গে আলাপকালে ইমন জানান, প্রতিদিন তিনি অনলাইন অর্ডার ও পাইকারি চ্যানেলের মাধ্যমে ৪০টিরও বেশি প্রজাতির মাছ বিক্রি করছেন।
এই উদ্যোগের মাধ্যমে নিজের স্বপ্ন পূরণ করার পাশাপাশি তিনি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন ২০ জনের জন্য, যার মধ্যে অনেক নারী কর্মীও রয়েছেন।
ইমন বলেন, “দেশি মাছ যেমন স্বাস্থ্যকর, তেমনি আন্তর্জাতিক বাজারেও এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আমি চাই grammosundarban.com একদিন জাতীয় ব্র্যান্ডে পরিণত হোক।”
ইমনের এই সফলতার পেছনে রয়েছে নবলোক পরিষদ কর্তৃক বাস্তবায়িত রুরাল মাইক্রোএন্টারপ্রাইজ ট্রান্সফরমেশন প্রজেক্ট (আরএমটিপি)-এর অবদান, যা পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ), আইএফএডি এবং ড্যানিডা-র সহায়তায় পরিচালিত হচ্ছে।
নবলোকের প্রকল্প কর্মকর্তা পলি রানি মন্ডল বলেন, “আমরা এমন উদ্যোক্তা তৈরি করতে চাই যারা বাজার বোঝে, প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং মানুষের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম। ইমনের গল্প এই লক্ষ্য ও দৃষ্টিভঙ্গির জীবন্ত উদাহরণ।”
স্থানীয় এক কৃষিপণ্য ও মাছ ব্যবসায়ী মাসুম হাসান বলেন, “ইমনের মতো উদ্যোক্তারা গ্রামীণ অর্থনীতিতে পরিবর্তন আনছে। একটি উদ্যোগ যখন কর্মসংস্থান তৈরি করে, তখন তা একটি সামাজিক আন্দোলনে রূপ নেয়। ইমন প্রমাণ করেছেন, কোনো পেশাই ছোট নয়—চিন্তাভাবনার পরিবর্তনই আসল।”
মৎস্য অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগের উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম জানান, এই অঞ্চলের তিন লাখের বেশি যুবক মাছ চাষ ও বিপণনের মাধ্যমে স্বনির্ভরতা অর্জন করেছে।
তিনি আরও বলেন, “বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলে মাছ চাষ প্রাধান্য পায়, আর সেই সূত্র ধরে শিক্ষিত যুবকদের মধ্যে অনলাইন মাছ বিপণন দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। প্রতিদিন খুলনা বিভাগ থেকে ১,০০০ থেকে ১,৫০০ ট্রাক জীবন্ত মাছ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়।”
প্রকাশক ও সম্পাদক- আলি আবরার । নিরালা, খুলনা থেকে প্রকাশিত