গোপালগঞ্জে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ বা বিঘ্নিত হয়েছে— এমন গুজব ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। বুধবার (১৬ জুলাই) রাতে এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় জানায়, গোপালগঞ্জসহ দেশের কোনো এলাকায় মোবাইল কিংবা ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করার নির্দেশনা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) দেয়নি।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সরকারের অবস্থান স্পষ্ট— যে কোনো পরিস্থিতিতেই ইন্টারনেট শাটডাউন নয়। দেশব্যাপী মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা নিরবচ্ছিন্ন রাখতে সরকার বদ্ধপরিকর।
মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, স্বৈরাচার এবং তাদের দোসররা দুরভিসন্ধিমূলক উদ্দেশ্যে এমন অপতথ্য ছড়াচ্ছে। এ ধরনের গুজব ছড়িয়ে জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। একইসাথে অনুরোধ জানানো হয়েছে যে, এ অবস্থায় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর কেউ মিস-ইনফরমেশন ও ডিস-ইনফরমেশন ছড়ানোর আগে সতর্ক থাকে। জনজীবনের স্বাভাবিকতা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণের পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, জুলাইয়ের ১ তারিখ থেকে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচি পালন করছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। মাসব্যাপী এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার (১৬ জুলাই) গোপালগঞ্জে পদযাত্রা ছিল দলটির। গতকাল মঙ্গলবার দলের ভেরিফায়েড ফেসবুকে এই কর্মসূচিকে ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ নাম দেওয়া হয়।
এই কর্মসূচি ঘিরে গোপালগঞ্জ সদরে সকালে পুলিশের একটি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। কাছাকাছি সময়ে হামলা করা হয় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ি বহরেও। এ দুই ঘটনায় স্থানীয় ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের
দুপুর ১টা ৩৫ মনিটের দিকে গোপালগঞ্জ শহরের পৌরপার্ক এলাকায় এনসিপির সমাবেশ মঞ্চে হামলা চালায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তারা মঞ্চে থাকা সাউন্ড বক্স, মাইক ও চেয়ার ভাঙচুর করেন এবং উপস্থিত এনসিপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালান। এনসিপির নেতাকর্মীরা পুলিশের সহায়তায় সেখান থেকে সরে যান।
এ ঘটনার আধা ঘণ্টা পরে ওই সমাবেশ স্থলেই পুলিশি নিরাপত্তায় সমাবেশ করে এনসিপি। সেখানে নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম ও আখতার হোসেনসহ কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেন।
সমাবেশ শেষ হওয়ার পর এনসিপির নেতারা যখন গাড়ি বহর নিয়ে মাদারীপুর রওনা হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তখন আবার ছাত্রলীগের কয়েকশ নেতাকর্মী তাদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় পুলিশও পিছু হটে। এনসিপির নেতাকর্মীরা পালিয়ে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আশ্রয় নেন। হামলাকারীরা এনসিপির সমাবেশ মঞ্চ এবং আশপাশের বিভিন্ন স্থানে চেয়ার-টেবিল ও আসবাবপত্রে আগুন ধরিয়ে দেন। এতে শহরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
এরপর থেকে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে হামলাকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়। গোপালগঞ্জ শহরের বিভিন্ন স্থানে এ সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশের সঙ্গে যোগ দেয় বিজিবি। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকেও বাড়তি জনবল নিয়োজিত করা হয়। বিকেলের দিকে গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে হামলা ও ভাঙচুরের খবর পাওয়া যায়। এরপর সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ একযোগে হামলাকারীদের সরাতে অভিযান শুরু করে। গোপালগঞ্জ শহরে জারি করা হয় ১৪৪ ধারা। সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন। সন্ধ্যায় গোপালগঞ্জে কারফিউ জারি করা।
প্রকাশক ও সম্পাদক- আলি আবরার । নিরালা, খুলনা থেকে প্রকাশিত