হঠাৎ করে অস্বাভাবিক হারে সব ধরণের জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আযের মানুষের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। বড় দুশ্চিন্তা গণপরিবহনের ভাড়া ও পণ্য পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় সব ধরণের খাদ্য পণ্যের দামে প্রভাব পড়বে। ফলে হিমশিম খেতে হবে সংসার চালাতে।
অন্যদিকে জ্বালানি বিশেষজ্ঞদেরও যেন হিসেব মিলছে না। তারা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়বে এমনটা ধারণায় থাকলেও এত বাড়বে এটা তারা চিন্তাও করেননি।
একাধিক জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বলছেন, দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকার আরও সহনীয় হতে পারত। কারণ এত বেশি তেলের দাম একসঙ্গে আগে কখনো বাড়ানো হয়েছে তাদেরও জানা নেই।
যদিও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য, পেট্টোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) বিগত ছয় মাসে (ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত) জ্বালানি তেল বিক্রিতে ৮ হাজার ১৪ কোটি টাকার বেশি লোকসান দিয়েছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক তেলের বাজার পরিস্থিতির কারণে বিপিসির আমদানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে যৌক্তিক মূল্য সমন্বয় অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।
pamp
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. বদরূল ইমাম গণমাধ্যমকে বলেছেন, জনগণের সঙ্গে কোনো আলাপ-আলোচনা, প্রস্তুতি ছাড়াই রাতের অন্ধকারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হলো। গ্যাসের দাম বাড়ানোর সময় গণশুনানি হয়। কিন্তু তেলের দামের ক্ষেত্রে এই লুকোচুরিটা কেন? হঠাৎ করে গভীর রাতে ভোক্তা পর্যায়ে কারো সঙ্গে কোনো পরামর্শ না করে হুট করে ইচ্ছে মতো একটা দাম নির্ধারণ করে দিলাম। এটাকে আমি মোটেও সুষ্ঠু একটা ব্যবস্থাপনার মনে করি না।
এই বিশেষজ্ঞের অভিযোগ, বিশ্ববাজারে তেলের দাম এখন নিম্নমুখী। আর এই যে সমন্বয়ের কথা ওনারা বারবার বলেন, কিন্তু তেলের দাম যখন দীর্ঘদিন ধরে অনেক কম ছিল আমরা তো কম দামে তেল কিনিনি। ওই টাকা যদি হিসাব করা হয়, তাহলে লাভের কত টাকা জমা আছে বিপিসির কাছে। এই দুর্যোগপূর্ণ সময়ে সেই টাকাটা কি সমন্বয় করা যায়। দাম বাড়বে তাই বলে এত অস্বাভাবিক?'
আর জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম. তামিম বলেছেন, দাম কিছুটা বাড়ানো হবে, এই আশঙ্কা ছিল। তবে সেটা সহনীয় পর্যায়ে রাখা যেত। যতটা বাড়ানো হয়েছে, তা চিন্তার বাইরে। এতে করে মানুষের জীবন চালানো কঠিন হয়ে পড়বে।
এদিকে কিছুদিন আগে পানির বিল বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা ওয়াসা। ইউরিয়ার সারের দামও বেড়েছে। এরইমধ্যে বাড়ল তেলের দাম। নতুন করে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর ইঙ্গিত ইতোমধ্যে দিয়েছে সরকার।
যদিও গত ২৭ জুলাই প্রধানমন্ত্রী এক অনুষ্ঠান বলেছেন, ‘অকটেন এবং পেট্রোল কিন্তু আমাদের কিনতে হয় না। এটা আমরা যে গ্যাস উত্তোলন করি, সেখান থেকে বাই প্রোডাক্ট হিসেবে পেট্রোল ও অকটেন পাই। বরং অকটেন আমাদের যতটুকু চাহিদা তার চেয়ে অনেক বেশি পেট্রল ও অকটেন আমাদের আছে। আমরা অনেক সময় বাইরে বিক্রিও করি।
তার এই বক্তব্যের সপ্তাহ পেরুতেই হঠাৎ বাংলাদেশে প্রতি লিটার অকটেনে ৪৬ টাকা বাড়িয়ে ৮৯ টাকা থেকে ১৩৫ ও পেট্রোলে ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ৮৬ টাকা থেকে ১৩০ টাকা করা হয়েছে। ডিজেল ৮০ থেকে ১১৪ টাকা। বাড়ল ৩৪ টাকা। কেরোসিন ৮০ থেকে ১১৪ টাকা। বাড়ল ৩৪ টাকা।পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়বে পরিবহন ভাড়ায়, দাম বাড়বে খাদ্যপণ্যে। এতে মানুষের জীবন আরও কঠিন হয়ে পড়বে। এরইমধ্যে ভাড়া সমন্বয়ের দাবিতে চট্টগ্রামে নগর পরিবহন বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মালিকরা। গত নভেম্বরে সবশেষ জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছিল। তখন গণপরিবহনে প্রায় ২৭ ভাগ ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছিল। এবার কত শতাংশ বাড়বে সে সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রমেশ ঘোষ বলেছেন, জ্বালানি তেলের দাম যে পরিমাণে বাড়ানো হয়েছে, তাতে যাত্রীদের ওপর চাপ বিপুলভাবে বাড়বে। এই পরিবহন ব্যবসায়ী মনে করেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর কারণে নতুন করে বাস, লঞ্চ ও ট্রাকভাড়া বাড়বে। প্রাইভেট কারের মালিক ও মোটরসাইকেলের চালকদের খরচও বাড়বে। ব্যয় বাড়বে কৃষি খাতে, যা বাড়িয়ে দেবে পণ্যের দাম।
সোর্স: ঢাকা মেইল
এন আই
প্রকাশক ও সম্পাদক- আলি আবরার । নিরালা, খুলনা থেকে প্রকাশিত