ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাস যদি স্বেচ্ছায় অস্ত্রসমর্পণ না করে, সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র তাদের নিরস্ত্রিকরণে পদক্ষেপ নেবে বলে উল্লেখ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই পদক্ষেপ ভয়াবহ হতে পারে বলে হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন ও কার্যালয় হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে মত বিনিময়কালে এ প্রসঙ্গে বলেন, “আমি হামাসের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমি তাদের জিজ্ঞেস করেছিলাম— ‘আপনারা অস্ত্রসমর্পণ করছেন, ঠিক?’ জবাবে তারা আমাকে বলেছে, ‘জ্বি স্যার, আমরা অস্ত্রসমর্পণ করছি।”
পরে অবশ্য তিনি বলেছেন যে হামাসের সঙ্গে তার সরাসরি কথা হয়নি। ট্রাম্প প্রশাসনের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং নিজের জামাতা জ্যারেড কুশনারের মাধ্যমে হামাস নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।
ট্রাম্পের অনুমতিক্রমে গত সপ্তাহে মিসরের পর্যটন শহর শারম আল শেখে হামাসের বর্তমান শীর্ষ নেতা ও মুখপাত্র খলিল আল হায়ার সঙ্গে বৈঠক করেছেন স্টিভ উইটকফ এবং জ্যারেড কুশনার।
“আমরা তাদের বলেছি, আমরা চাই যে তারা অস্ত্রসমর্পণ করুক এবং তারা তা করবে। যদি তারা অস্ত্র সমর্পণ না করে, তাহলে আমরা তাদের নিরস্ত্র করব। সেক্ষেত্রে এটি ঘটবে দ্রুত এবং সম্ভবত ভয়াবহভাবে। অর্থাৎ, তাদের অস্ত্র সমর্পণ করতেই হবে।”
২০২৩ সালের ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ঢুকে অতর্কিত হামলা চালায় প্রায় ১ হাজার হামাস যোদ্ধা। এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যা এবং ২৫১ জনকে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় যোদ্ধারা। ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর ইসরায়েলের ইতিহাসে ৭ অক্টোবরের হামলা ছিল সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা।
হামাসের হামলার জবাব দিতে এবং জিম্মিদের উদ্ধারে পরদিন ৮ অক্টোবর থেকেই গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। ভয়াবহ সেই সামরিক অভিযানে ২ বছরে গাজায় নিহত হয়েছেন ৬৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার।
গত দুই বছরে বেশ কয়েকবার এই যুদ্ধ থামানোর চেষ্টা চলেছে। সেসব চেষ্টার অংশ হিসেবে কয়েক দফা অস্থায়ী যুদ্ধবিরতিও ঘোষণা করে ইসরায়েল।
কিন্তু সেসব যুদ্ধবিরতি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ফলে আইডিএফের সামরিক অভিযানও অব্যাহত ছিল গাজায়।
এই পরিস্থিতিতে গত ২৯ সেপ্টেম্বর গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য ২০টি পয়েন্ট সম্বলিত নতুন একটি পরিকল্পনা প্রস্তাব আকারে পেশ করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইসরায়েল ও হামাস উভয়ে সেই পরিকল্পনায় সম্মতি জানানোর পর গত ১০ অক্টোবর শুক্রবার থেকে যুদ্ধবিরতি শুরু হয় গাজায়।
ট্রাম্পের প্রস্তাবিত পরিকল্পনার ২০টি পয়েন্টের মধ্যে অন্যতম হলো হামাসের অস্ত্র সমর্পণ। এর আগেও হামাসকে একাধিকবার এই আহ্বান জানানো হয়েছে, কিন্তু প্রতিবারই তা প্রত্যাখ্যান করেছে গোষ্ঠীটি।
এবার যদিও সরাসরি এই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেনি; তবে এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে পরিষ্কারভাবে কিছু বলেনি গোষ্ঠীটি।
মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে মত বিনিময়ের সময় এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, হামাস যদি স্বেচ্ছায় অস্ত্র সমর্পণ না করে, তাহলে কী পদক্ষেপ নেবে ট্রাম্প প্রশাসন। জবাবে ট্রাম্প বলেন, “আমি তা আপনাকে ব্যাখ্যা করতে বাধ্য নই…তবে এটুকু বলতে পারি, তারা জানে যে আমি কোনো খেলা খেলছি না।”
প্রকাশক ও সম্পাদক- আলি আবরার । নিরালা, খুলনা থেকে প্রকাশিত