বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ঢাকা-কাঠমান্ডু ফ্লাইটে বোমা রয়েছে—অচেনা নম্বর থেকে এমন ফোনকলে তোলপাড় শুরু হয় পুরো শাহজালাল বিমানবন্দর জুড়ে। বোমা থাকার আশঙ্কায় বিজি-৩৭৩ ফ্লাইটটিতে ৩ ঘণ্টার নিবিড় তল্লাশি চালানো হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিমানে কোনো বোমা পাওয়া যায়নি।
সেই অচেনা ফোনকলের সূত্র ধরে প্রাথমিক তদন্তে নেমে মোট ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গ্রেপ্তাররা হলেন, মা রাশেদা বেগম, তার ছেলে ইমনের স্ত্রী তাহমিনা ও বন্ধু ইমরান।
র্যাব জানায়, এই ঘটনাটা সঙ্গে পারিবারিক বিষয় জড়িত। ছেলে যেন পরকীয়া প্রেমিকাকে নিয়ে কাঠমান্ডুতে না যেতে পারে সেজন্য মা ফোন দিয়ে জানান, ‘বিমানে বোমা রয়েছে’।
তবে র্যাব সূত্রে জানা যায়, ছেলেকে পরকীয়া প্রেমিকাকে নিয়ে নেপালে যাওয়া আটকাতে ভয়ংকর এই অপরাধমূলক কাজ করলেও শেষ পর্যন্ত সফল হননি মা। কারণ বিমানে তল্লাশি করে বোমা না পাওয়ায় বিমানটি আবার নেপালের কাঠমান্ডুর উদ্দেশে রওয়ানা হয়। সেই বিমানে তখন ওই প্রেমিক এবং তার প্রেমিকা ছিল। তারা নিরাপদে ওই ফ্লাইটে করে নেপাল পৌঁছে যান।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে র্যাবের এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা প্রথমে এ তথ্য জানতাম না। পরে অনুসন্ধান করে যখন এই তিনজনকে গ্রেপ্তার করি তখন বিষয়টি আমরা জানতে পারি। এরই মধ্যে বিমান নিরাপত্তা ক্লিয়ারেন্স পায় এবং সেই ফ্লাইটে করে ওই প্রেমিক-প্রেমিকা নেপালে নিরাপদে পৌঁছে যান।
এ বিষয়ে শনিবার (১২ জুলাই) সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) একেএম শহিদুর রহমান বলেন, গতকালকে ঘটনা ঘটে। সেটি হলো ঢাকা থেকে কাঠমান্ডুগামী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে বোমা রয়েছে এমন একটি ফোন কল করে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলকে জানানো হয়। যার ফলে ওই বিমানে যাত্রা স্থগিত করা হয় এবং তিন থেকে চার ঘণ্টা তল্লাশি করে কিছু পাওয়া যায়নি। এই ঘটনায় এয়ারলাইন্সের ভাবমূর্তি দেশে ও আন্তর্জাতিকভাবে মারাত্মক ক্ষুণ্ন হয়। ইতোপূর্বেও এ ধরনের বেশ কয়েকটি ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল। টেলিফোনের মাধ্যমে বোমার খবর দেওয়া হয়, পরবর্তীতে তল্লাশি করে কিছু পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, এ ঘটনার পরপরই আমরা অনুসন্ধানে নামি। সারা রাত অভিযান পরিচালনা করে আমরা তিনজনকে গ্রেপ্তার করি। এক্ষেত্রে সেনাবাহিনী ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা আমাদের সহযোগিতা করেছে। এই বিষয়টি একটি দুঃখজনক ঘটনা। ঘটনার তদন্তে জানা যায়, ইমন নামে এক ব্যক্তি পরকীয়া প্রেমিকার সঙ্গে এই ফ্লাইটে করে নেপাল যাচ্ছিলেন। বিষয়টি ইমনের মা ও তার স্ত্রী জানতে পারেন এবং তার যাত্রা বন্ধ করার জন্য প্রচেষ্টা চালান। কিন্তু তারা কোনোভাবে সক্ষম হয়নি। তখন ইমনেরই আরেক বন্ধু ইমরান তাদের পরামর্শ দেন যদি এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলে ফোন করে জানানো হয় বিমানে বোমা আছে তাহলে যাত্রাটা স্থগিত হয়ে যেতে পারে। সে অনুযায়ী ইমনের মা এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলে ফোন করে বিমানে বোমা থাকার তথ্য জানান।
ডিজি আরও বলেন, এই বিষয়ে আমরা দেশবাসীকে জানাতে চাই, এটি একটি গর্হিত কাজ। এসব কাজে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয় এবং আমাদের জাতীয় এয়ারলাইন্সের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়। কোনোভাবেই যেন এ ধরনের প্রচেষ্টা ভবিষ্যতে গ্রহণ করা না হয়। তারপরও গ্রহণ করলে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
এদিকে এ বিষয়ে বাংলাদেশ বিমানে বোমা আছে এ ঘটনায় স্বরাষ্ট্র স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এ ঘটনায় যে ফোন করে বোমা আছে বলেছিলেন সেই নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে ফোন করার জন্য যে পরামর্শ দিয়েছিলেন সেই দুজনকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রকাশক ও সম্পাদক- আলি আবরার । নিরালা, খুলনা থেকে প্রকাশিত