বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য, বিশেষ করে পর্তুগালে বসবাসকারী প্রবাসীদের আত্মীয়-স্বজনের কথা বিবেচনায় ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করবে দক্ষিণ ইউরোপিয়ার দেশ পর্তুগাল। সেই সঙ্গে দেশটির ভিসা প্রাপ্তিতে বিলম্ব দূর করাসহ খরচ কমাতেও পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম।
শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) ঢাকায় সফররত পর্তুগিজ সেক্রেটারি অফ স্টেট ড. ফ্রান্সিসকো আন্দ্রের সঙ্গে একটি সেমিনারে যোগ দেওয়ার পর গণমাধ্যমকে এ কথা বলেন তিনি।
বাংলাদেশে পর্তুগিজ কূটনৈতিক বা কনস্যুলার মিশন না থাকায় বাংলাদেশি নাগরিকদের ভিসার ক্ষেত্রে বিশেষ করে তাদের পরিবারের সদস্যরা কিছু প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছেন। তবে ড. আন্দ্রে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, তার প্রশাসন অদূর ভবিষ্যতে এই সমস্যার একটি বাস্তবসম্মত সমাধান খুঁজতে কাজ করবে। এটি দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি বড় গুণগত পার্থক্য আনবে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম
প্রতিমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ ব্লু ইকোনমিতে, বিশেষ করে সমুদ্র উপকূলে বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা অন্বেষণের ক্ষেত্রে পর্তুগিজ বিনিয়োগ ও দক্ষতাকে স্বাগত জানাবে। বিগত বছরগুলোয় নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে পর্তুগালের বড় মাপের বিনিয়োগ বিশ্বজুড়ে বর্তমান জ্বালানি সংকট থেকে তাদের অনেকাংশে রক্ষা করেছে।
দেশটির সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে পর্তুগালের সঙ্গে সরাসরি শিপিং সংযোগ স্থাপনে বাংলাদেশ আগ্রহী উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতার অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি যে, উভয় দেশে দ্বিমুখী বিনিয়োগ আরও সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে।’ এ সময় ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ততাকে আরও কৌশলগত দিকে নেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রচেষ্টা সফল করতে পর্তুগাল সম্পূরক ভূমিকা পালন করবে বলেও আশাপ্রকাশ করেন প্রতিমন্ত্রী।
শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘আমাদের জন্য আশাব্যঞ্জক হচ্ছে যে, পর্তুগাল ২০২৯ সালের পরেও ইইউ বাজারে বাংলাদেশের জিএসপি প্লাস সুবিধা দেবে।’ এ সময় রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা, ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতা ছাড়াও নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে সমর্থন বজায় রাখার জন্য পর্তুগালের প্রতি আহ্বান জানান প্রতিমন্ত্রী।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে আমাদের মহাসাগরগুলোকে সংরক্ষণ ও সুরক্ষার বিষয়ে পর্তুগালের সঙ্গে কাজ করার জন্য উন্মুখ। ২০২৭-২৮ সালে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের নির্বাচিত সদস্য হিসেবে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য পর্তুগালের আকাঙ্ক্ষাকে আমরা যথাযথভাবে বিবেচনা করেছি।’
এ সময় দুই দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে পর্তুগালের বিনিয়োগ অব্যাহত রাখার ওপর জোর দেন প্রতিমন্ত্রী।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) বিশিষ্ট ব্যক্তি বক্তৃতা সিরিজের (ইপিএলএস) অংশ হিসেবে ‘বাংলাদেশ-পর্তুগাল সম্পর্ক: গভীর দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার সন্ধান’ শীর্ষক ওই সেমিনারে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছাড়াও রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার, সাবেক কূটনীতিক, ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তাসহ গণমাধ্যম প্রতিনিধি, গবেষক, ব্যবসায়ী, শিক্ষক ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, বিভিন্ন থিংক ট্যাংক এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য, স্টেট সেক্রেটারি ড. ফ্রান্সিসকো আন্দ্রে তিন দিনের সফরে বাংলাদেশে এসেছেন। সফরকালে ইতোমধ্যেই তিনি ২০২৪ সালে বাংলাদেশ ও পর্তুগালের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী পালনের লক্ষ্যে আগাম পরিকল্পনা গ্রহণেও আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
প্রকাশক ও সম্পাদক- আলি আবরার । নিরালা, খুলনা থেকে প্রকাশিত