বিএনপির সঙ্গে যোগ দিতে দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ ও তার ঘনিষ্ঠ মশিউর রহমান রাঙ্গাকে জাতীয় পার্টি থেকে মাইনাসের চেষ্টা করছেন দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের।
প্রকাশ্যে এমন অভিযোগ করলেন সদ্য জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য থেকে অব্যাহতি পাওয়া মশিউর রহমান রাঙ্গা। যিনি সংসদের বিরোধীদলীয় চিফ হুইপও বটে।
শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাতে একটি বেসরকারি টেলিভিশন টকশোতে অংশ নিয়ে জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আনলেন রাঙ্গা।
সম্প্রতি রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা চলছে সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপি-জাতীয় পার্টি একসঙ্গে মাঠে নামতে পারে। যদিও বিএনপি জাতীয় পার্টিসহ সব দলকে তাদের আন্দোলনে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। তবে দলটির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কোনো যোগাযোগ হয়নি বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
অন্যদিকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিবও ইদানিং সরকারের কড়া সমালোচনা করে বক্তব্য রাখছেন। একইসঙ্গে আগামী নির্বাচনে কোনো জোটে না যাওয়ার কথা জানিয়েছে।
রাঙ্গা বলেন, সরকারের সঙ্গে দলের হয়ে আলাপ আলোচনার ক্ষেত্রে আমি বেশি কাজ করি। এখনও করছি। কিন্তু ইদানিং জাতীয় পার্টি বিএনপির মতো সরকারবিরোধী বক্তব্য বেশি দিচ্ছে। অথচ আমাদের অবস্থান সরকারের সমালোচনাও করবো। পাশাপাশি ভালো কাজ করলে সেটারও প্রশংসা করবো। আমরা গত নির্বাচনে লাঙ্গলে নির্বাচন করলেও সরকারের সঙ্গে থেকে ভোট করেছি। এখন শোনা যাচ্ছে বিএনপি বা অন্য কারও সঙ্গে যোগ হতে পারে।
এ সময় উপস্থাপক জানতে চান তাহলে কি বিএনপির সঙ্গে যোগ দিতেই আপনাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
জবাবে রাঙ্গা বলেন, আমারও তাই মনে হয়। রওশন এরশাদ অনেক অসুস্থ, তাকেও তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
সম্প্রতি সংসদের বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে রওশন এরশাদকে সরিয়ে নিজে এই পদে বসার চেষ্টা করেন জিএম কাদের। এজন্য বেশিরভাগ সংসদ সদস্যের কাছ থেকে স্বাক্ষর নিয়ে স্পিকারকে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। যদিও এখনো স্পিকার এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেননি।
বিষয়টির সমালোচনা করে টেলিভিশনে বক্তব্য দেওয়ায় গত বুধবার রাঙ্গাকে দল থেকে অব্যাহতি দেন জিএম কাদের। পরে রাঙ্গা তাকে রংপুর যেতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন। এ নিয়ে চরম বিশৃঙ্খলা তৈরি হয় জাপায়। এরমধ্যে বৃহস্পতিবার রাঙ্গা সংবাদ সম্মেলন করে অব্যাহতিপত্র প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। এ সময় দলে ফিরতে চান বলেও জানান তিনি। রাঙ্গা বলেন, চেয়ারম্যানের সঙ্গে ঝগড়া করে দলে কাজ করা যায় না।
অবশ্য তাকে আর দলে ফেরানো হবে কিনা এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি জাপা।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও অন্য নেতাদের কড়া সমালোচনা করে রাঙ্গা বলেন, ভোটের বাকি এখনো কতদিন। এখনই কেন বলতে হবে আমি এই জোটে নেই, সেই জোটে নেই। ভোটের সাত দিন আগেও তো বলা যায়। কার কেমন সম্ভাবনা সেটা দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। কিন্তু এরা এখনই বলতেছে। জাতীয় পার্টি তো পরগাছা। কারও না কারও কাঁধে ভর করেই আমাদের জিততে হবে। এখন কেউ যদি বলে এই অবস্থায় জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় আসবে। এটা মিথ্যা কথা, সম্ভব নয়।
এরআগেও দু’বার অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল জানিয়ে রাঙ্গা বলেন, এরশাদ সাহেব দু’বার করেছিলেন, জিএম কাদের একবার করলেন। তিনি সম্পর্কে আমার মামা হন।
রাঙ্গার অভিযোগ, জিএম কাদেরের আশপাশের লোকজন তাকে ভুল পথে নিচ্ছে।
অনুষ্ঠানে রাঙ্গা জানান, পদ্মা সেতু উদ্বোধনে দলের সংসদ সদস্যদের অংশ না নেওয়ার জন্য চাপ দিয়েছিলেন জিএম কাদের। হুমকি দিয়েছেন, যদি কেউ যায় তাহলে মনোনয়ন দেওয়া হবে না।
রাঙ্গা বলেন, একজন নির্বাচিত নারী সংসদ সদস্য আমাকে বলেছেন রাঙ্গা ভাই চেয়ারম্যান তো পদ্মা সেতুর অনুষ্ঠানে যেতে নিষেধ করেছেন। পরে আমি বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলেছি। তিনি বলেছিলেন তোমরা যাও, পরে কি হয় আমি দেখবো।
প্রকাশক ও সম্পাদক- আলি আবরার । নিরালা, খুলনা থেকে প্রকাশিত