জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রের ২০ ধারার ১, ২ ও ৩ উপধারার ক্ষমতাবলে দলের চেয়ারম্যানের একক কর্তৃত্ব সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মন্তব্য করেছেন দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ। একইসঙ্গে তিনি এসব বিধান অপব্যবহারের অভিযোগ এনে সংগঠনের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে চিঠি দিয়েছেন।
বিদেশ থেকে পাঠানো রওশন এরশাদের স্বাক্ষর করা ওই চিঠিতে দলীয় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বেশকিছু অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে।
এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষকের এমন চিঠি দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। একইভাবে পার্টি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে তিনি অভিযোগও আনতে পারেন না। কারণ উনি দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক, কোনো পদে নেই।’
চিঠিতে রওশন এরশাদ গঠনতন্ত্রের এসব ধারায় ইতোপূর্বে দল থেকে বাদ দেয়া মশিউর রহমান রাঙ্গাসহ সিনিয়র নেতা এবং কমিটি থেকে বাদ দেয়া নেতাকর্মীদের অন্তর্ভুক্তির জন্য জিএম কাদেরকে নির্দেশনা দিয়েছেন।
চিঠিতে বলা হয়, ‘জাতীয় পার্টির সর্বময় ক্ষমতার সংরক্ষক হিসেবে পার্টির গঠনতন্ত্রের ধারা ২০-এর উপধারা-১: প্রধান পৃষ্ঠপোষকের ক্ষমতাবলে চেয়ারম্যানের বিশেষ ক্ষমতা এবং মৌলিক অধিকার পরিপন্থী ধারা ২০-এর উপধারা ১ (১)-এর ক, খ, গ, ঘ, ঙ, চ, ছ এবং উপধারা ২-এর ক, খ, গ এবং উপধারা ৩-এ বর্ণিত অগণতান্ত্রিক ও স্বেচ্ছাচারমূলক বিধান স্থগিত করে জাতীয় পার্টির অব্যাহতিপ্রাপ্ত ও কমিটি থেকে বাদ দেয়া সব নেতাকর্মীকে পার্টিতে অন্তর্ভুক্তির আদেশ দেয়া হচ্ছে।
‘লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে অনুমোদিত পার্টির গঠনতন্ত্রের ধারা ২০-এর উপধারা ১ (১)-এর ক, খ, গ, ঘ, ঙ, চ ও ছ; উপধারা ২-এর ক, খ ও গ এবং উপধারা ৩-এর সব বিধানের অপব্যবহার হচ্ছে। এটি মৌলিকভাবে গণতন্ত্র ও সংবিধান পরিপন্থী এবং স্বেচ্ছাচারমূলক।
‘একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল দেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশন প্রণীত বিধানাবলী অনুযায়ী তার কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। সেখানে দলের নেতা-কর্মীদের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের কোনো সুযোগ নেই। পাশাপাশি সারা দেশের নেতাকর্মীরাও গঠনতন্ত্রে বর্ণিত এ ধরনের অগণতান্ত্রিক ধারার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। এ ধরনের অগণতান্ত্রিক ধারা-উপধারা বাতিল এখন লাখ লাখ পল্লীবন্ধু কর্মী-সমর্থকের সময়ের দাবি।’
চিঠিতে রওশন বলেন, ‘আপনার (জাপা চেয়ারম্যান) মন্তব্য অনুযায়ী রাষ্ট্রের সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের কারণে সংসদ ও সরকার পরিচালনায় যেমন এক ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণে থাকে একইভাবে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক উল্লিখিত ধারার আবহে দলের গঠনতন্ত্রের মধ্যেও ধারা ২০-এর উপধারাসমূহ গৃহীত হয়েছে। যে ধারা অনুযায়ী আপনি যখন ইচ্ছা তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত যে কাউকে দায়িত্ব থেকে বিনা নোটিশে অব্যাহতি ও বহিষ্কার করে একজন রাজনৈতিক কর্মীর গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে চলেছেন।
‘প্রকৃতপক্ষে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ গৃহীত হওয়ার একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও যৌক্তিকতা রয়েছে। কিন্তু জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রের ২০ ধারার উপধারাসমূহ বর্ণিত বিধানাবলীর সঙ্গে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের ন্যূনতম কোনো সামঞ্জস্য নেই।
‘আমি পার্টির গঠনতন্ত্রের ধারা ২০-এর উপধারা ১ অনুযায়ী প্রধান পৃষ্ঠপোষকের ক্ষমতাবলে সারাদেশের লাখ লাখ নেতাকর্মীর দাবি মেনে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দশম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগ পর্যন্ত গঠনতন্ত্রের ধারা ২০-এর উপধারাগুলো স্থগিত ঘোষণা করছি।’
চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘সাম্প্রতিক দলীয় কার্যক্রম পর্যালোচনা করে আমার কাছে প্রতীয়মান হয় যে বিগত দিনে দলের বহু সিনিয়র, অভিজ্ঞ, দায়িত্বশীল পরীক্ষিত নেতাকর্মীকে নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়েছে। যোগ্য ও ত্যাগীদের পদোন্নতি বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে, যা পার্টিকে দিন দিন দুর্বল করার নামান্তর। পার্টির অগণতান্ত্রিক ভাব-আবহ সৃষ্টির কারণে নেতাকর্মীরা বিভ্রান্ত হচ্ছে এবং ভীতি ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে পার্টি খণ্ডিত হওয়ার সমূহ আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে।
‘এরকম পরিস্থিতি অবসানের লক্ষ্যে এবং পার্টি শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যে আমার নির্দেশনা অনুযাযী প্রেসিডিয়াম সদস্য মশিউর রহমান রাঙ্গা এমপি, সাবেক এমপি জিয়াউল হক মৃধা, সাবেক এমপি আব্দুল গাফফার বিশ্বাস, নবম কাউন্সিলের পর কমিটিতে না রাখা প্রেসিডিয়াম সদস্য এম এ সাত্তার, অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান, জাফর ইকবাল সিদ্দিকী, ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীর, কাজী মামুনুর রশীদ, অধ্যাপক ইকবাল হোসেন রাজু, সাবেক উপদেষ্টা মাহবুবুল আলম বাচ্চু, সাবেক এমপি ও ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক নুরুল ইসলাম মিলন, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম নুরুসহ দেশজুড়ে নিষ্ক্রিয় করে রাখা নেতাদের দলে অন্তর্ভুক্ত করা হোক।’
পিএসএন/এমঅাই


