সারাদেশেই জেঁকে বসতে শুরু করেছে শীত। এই ঋতু কিছু মানুষের কাছে স্বস্তির হলেও একশ্রেণির মানুষের জন্য বয়ে আনে দুর্ভোগ। অ্যালার্জি, শ্বাসকষ্ট প্রভৃতি রোগের প্রকোপ বাড়ার পাশাপাশি এই সময়ে বেশ ভোগায় বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ। শীতের আর্দ্রতায় শরীর থাকে শুষ্ক, এই সময়ে ত্বকের জন্য প্রয়োজন বিশেষ যত্ন। একটু অসচেতন হলেই ভুগতে হতে পারে চুলকানি, ফোসকা, হাত-পায়ের আঙুল নীল হয়ে যাওয়া রোগে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, শীতকালে চর্মরোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়। সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) যৌন ও চর্মরোগ বিভাগের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেন ৫৩৪ জন। এর মধ্যে নারীর সংখ্যা বেশি। চিকিৎসা নিতে আসা নারীর সংখ্যা ২৫৪ জন। এছাড়া পুরুষ ১৫৩ ও শিশু ৯১ জন। পুরাতন রোগী ৩৬ জন।
শীতকালীন চর্মরোগ থেকে রেহাই পেতে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন ঢামেকের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের অধ্যাপক এবং বিভাগীয় প্রধান ডা. রাশেদ মো. খান।
তিনি জাগো নিউজকে বলেন, শীত ও গরম দুই সময়েই চর্মরোগ থাকে। যারা থাইরয়েড, কিডনি, লিভার কিংবা হাঁপানি রোগে ভোগেন তাদের শরীর শুষ্ক থাকে। আর শীতকালে এসব রোগীর শরীর আরও শুষ্ক হয়ে যায়। এতে শরীর চুলকানো বাড়ে। চুলকানোর ফলে শরীরে তৈরি হয় এক্সিমা। এ থেকে একসময় ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ করার সুযোগ পায়, যা পরবর্তীসময়ে বিপদ সৃষ্টি করতে পারে।
‘বর্তমানে স্ক্যাবিসের সমস্যা নিয়ে অনেক রোগী আসছেন। বিশেষ করে মাদরাসা ও নিম্নবিত্ত মানুষরাই এতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। স্ক্যাবিস হচ্ছে পরজীবীজনিত রোগ। যে কীটটি দিয়ে যে রোগটি হয় তার নাম হচ্ছে স্কেবিয়াইসারকপটিস স্কেরিবাই, যা একসঙ্গে পরিবার ও একই স্থানে বসবাস করা সবাইকেই আক্রান্ত করতে পারে।’
এই চিকিৎসক বলেন, স্ক্যাবিস হয়েছে কি না তখন বোঝা যাবে যখন দেখা যাবে পরিবারের সবারই শরীরে চুলকানি দেখা দেবে এবং রাতে বেশি চুলকাবে। একপর্যায়ে হাতের আঙুলের ফাঁকে, বগলের নিচে, যৌনাঙ্গসহ শরীরের নানা জায়গায় ছোট ছোট দানার মতো দেখা দেবে। এটি একজনের হলে দেখা যায় সবার হয়ে যায়।
এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, শীতকালে দেখা যায় একই কম্বল বা কাঁথার নিচে অনেকজন একসঙ্গে শোয় কিংবা ঘুমায়। এই রোগ প্রচণ্ড ছোঁয়াচে হওয়ায় সবার মধ্যে তা সহজে ছড়িয়ে পড়ে। এ রোগে আক্রান্ত হলে অনেক সময় রোগী ভুল বুঝে রাস্তায় বিক্রি করা মলম ব্যবহার করেন। এতে এই রোগ আরও খারাপ দিকে চলে যেতে পারে। আক্রান্ত হলে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে যদি ব্যবস্থা না নেওয়া হয় তাহলে কিডনিতে সমস্যা হতে পারে।
স্ক্যাবিসের চিকিৎসা বর্ণনা করে তিনি বলেন, এই রোগ হলে শুধু রোগী নয়, পরিবার কিংবা যারা একসঙ্গে থাকেন সবাইকেই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পারমেথ্রিন ৫ শতাংশ ক্রিম ব্যবহার করতে হবে। গলা থেকে পা পর্যন্ত সারা শরীরে এই মলম মাখতে হবে। কমপক্ষে ১২ ঘণ্টা শরীরে এটি থাকবে। এরপর সাবান দিয়ে গোসল করে নিতে হবে। একই সঙ্গে জামা-কাপড়, বিছানার চাদর, কাঁথা সব গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। কিন্তু একজনও যদি এর থেকে বাদ যায় দেখা যাবে তার থেকে আবারও অন্যদের শরীরে এই রোগ ছড়িয়েছে।
শীতকালে ত্বকের সুস্থতায় যেসব দিক খেয়াল রাখতে হবে বলে জানান এই চিকিৎসক
১. শীতকালে সাবানের ব্যবহার কমাতে হবে।
২. শরীর তেলতেলে রাখতে হবে।
৩. ময়েশ্চারাইজারযুক্ত ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করতে হবে।
৪. গোসলের সময় গা বেশি ঘষামাজা করা যাবে না।
৫. বেশি গরম পানি ব্যবহার না করে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করতে হবে।
৬. শীতকালে রোদ পোহালেও মুখ ঢেকে রাখতে হবে, যাতে আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মি সরাসরি দেহে না লাগে।
সূত্র- জাগোনিউজ২৪
প্রকাশক ও সম্পাদক- আলি আবরার । নিরালা, খুলনা থেকে প্রকাশিত