খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা, যা ‘খুলনার শস্যভান্ডার’ হিসেবে পরিচিত, এ বছর আবারও শীতকালীন সবজি উৎপাদনে রেকর্ড গড়েছে। স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের হিসাব অনুযায়ী, এ মৌসুমে উপজেলার সবজি উৎপাদনের আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ২৫০ কোটি টাকা।
কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তারা জানান, আধুনিক প্রযুক্তি ও উন্নত মানের বীজ ব্যবহারের কারণে এবারের সবজি চাষে এ সাফল্য এসেছে। ডুমুরিয়ার বিষমুক্ত ও নিরাপদ সবজি এখন ইতালি, ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে, যা স্থানীয় কৃষকদের মাঝে গর্ব ও আনন্দের সঞ্চার করেছে।
প্রতিদিন ভোর থেকে কৃষকেরা মাঠে কাজ করছেন—পানি দেওয়া, আগাছা পরিষ্কার করা, ও ফসল পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। উপজেলার বিস্তীর্ণ জমিতে এখন সারি সারি লাউ, শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মূলা, মরিচ, পালংশাক ও নানা প্রকার শাকসবজিতে ভরে উঠেছে চারপাশ।
জাতীয় কৃষি পদকপ্রাপ্ত কৃষক আবু হানিফ মোরল বলেন, “এবারের শীতকালীন সবজির ফলন অসাধারণ হয়েছে। বিশেষ করে ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, শিম ও বেগুনের ফলন ও বাজারদর দুটোই ভালো।”
মলমালিয়া গ্রামের কৃষক কমল বাওয়ালী বলেন, “ছয় বিঘা জমিতে শিম, টমেটো ও মূলা চাষ করেছি, ভালোই লাভ হয়েছে। এখন তো ডুমুরিয়ার সবজি বিদেশেও যাচ্ছে, এটা আমাদের গর্ব।”
খর্ণিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আবদুল হালিম বলেন, “কৃষি বিভাগ প্রশিক্ষণ, সার ও বীজ সহায়তা দিচ্ছে। ফলে ফলন বেড়েছে এবং বিষমুক্ত সবজি বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে—এটা আমাদের জন্য বড় অর্জন।”
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইনসান ইবনে আমিন বলেন, “এ বছর কৃষকের মুখে হাসি। প্রায় ৩,৬৫০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়েছে—এর মধ্যে শিম ৩৮০ হেক্টর, টমেটো ২২০ হেক্টর, বেগুন ৩৬০ হেক্টর ও ফুলকপি ২৬০ হেক্টর জমিতে।”
তিনি জানান, স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এসব সবজি ঢাকার কারওয়ান বাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের খুলনা অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, “খুলনার সবজি স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। দরিদ্র কৃষকদের মাঝে মাঝে সার ও বীজ সহায়তাও দেওয়া হয়।”
তিনি আরও জানান, “প্রতি বছর ভালো ফলন ও দাম পেয়ে কৃষকেরা সবজি চাষ বাড়াচ্ছেন। বন্যা বা ভারী বর্ষার সময় খুলনার সবজিই দেশের চাহিদা মেটাতে সাহায্য করে।”
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, খুলনা জেলায় এবার মোট ৪,৮৮,৪৬৮ টন শীতকালীন সবজি উৎপাদিত হয়েছে ৩৬,৭৩৫.৪৭ হেক্টর জমি থেকে, যেখানে গড় ফলন প্রতি হেক্টরে ২০ টন।
ডুমুরিয়ার কৃষকদের পরিশ্রম ও আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির প্রয়োগে খুলনা আবারও প্রমাণ করল—বাংলাদেশের কৃষির প্রাণশক্তি এখনো গ্রামীণ মাটিতেই স্পন্দিত।
প্রকাশক ও সম্পাদক- আলি আবরার । নিরালা, খুলনা থেকে প্রকাশিত