খুলনার সোনাডাঙ্গা এলাকায় চাঞ্চল্যকর লিটন খান হত্যা মামলার মূল রহস্য উদঘাটন করেছে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি)। গত ২ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে সংঘটিত এই নৃশংস হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে নিহতের পুত্র আবু বক্কর সিদ্দিক লিমন (১৯) ও পুত্রবধূ মোছাঃ চাঁদনী আক্তারকে (২০) ঢাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পারিবারিক আর্থিক দ্বন্দ্বের জেরে এই পরিকল্পিত হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২ অক্টোবর রাত আনুমানিক ১১:৩০ ঘটিকায় মামলার বাদী (নিহত লিটন খানের স্ত্রী) কর্মস্থল থেকে বাসায় ফিরে রুম তালাবদ্ধ দেখতে পান। তালা খুলে তিনি তার স্বামী লিটন খানকে রক্তাক্ত অবস্থায় রুমের ফ্লোরে শুয়ে থাকতে দেখেন। তার গলায় ওড়না পেঁচানো ছিল। দ্রুত খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
জানা যায়, ভিকটিম লিটন খান রিকশা কেনার জন্য ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। বাদীর ছেলে লিমন ও তার স্ত্রী এই টাকা তাদের না জানিয়ে প্রায় ১৫-২০ দিন আগে বাসা থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে চলে যান। পরবর্তীতে তারা বাসায় ফিরে আসার পর জানতে পারে যে ভিকটিম লিটনের কাছে ১৫,০০০ টাকা আছে। তারা সেই টাকা নেওয়ার জন্য লিটনের ওপর বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করতে থাকে, কিন্তু লিটন টাকা দিতে অস্বীকার করেন।
পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে যে, ঘটনার দিন ভিকটিমের স্ত্রী বাড়িতে না থাকায় লিটন খান একাই ছিলেন। এই সুযোগে ছেলে লিমন ও পুত্রবধূ চাঁদনী আক্তার পূর্বপরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকান্ড ঘটান। প্রথমে তারা শ্বাসরোধ করে লিটনকে অচেতন করেন এবং এরপর মৃত্যু নিশ্চিত করতে ঘরে থাকা ধারালো বঁটি দিয়ে গলা কেটে নৃশংসভাবে হত্যা করেন। হত্যার পর পরই তারা পালিয়ে যান। এই ঘটনায় সোনাডাঙ্গা থানায় ৩ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে একটি মামলা (নং-৩, ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড) রুজু করা হয়।
হত্যার মূল রহস্য উন্মোচনে কেএমপি’র সোনাডাঙ্গা মডেল থানা পুলিশ তদন্ত শুরু করে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পারে যে হত্যাকান্ডে জড়িত আসামীরা ঢাকাতে আত্মগোপন করেছে। এরপর ৪ অক্টোবর ২০২৫ তারিখ বিকেল ৩:০০ ঘটিকায় সোনাডাঙ্গা মডেল থানা পুলিশ ঢাকা মহানগরীর পল্লবী থানাধীন সেকশন-৭ এলাকায় পল্লবী থানা পুলিশের সহায়তায় অভিযান চালায়। অভিযানে হত্যাকান্ডে জড়িত প্রধান দুই আসামী— পুত্র আবু বক্কর সিদ্দিক লিমন ও পুত্রবধূ মোছাঃ চাঁদনী আক্তারকে গ্রেফতার করা হয়।
এই চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ড নিয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে কেএমপি’র ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) জনাব সুদর্শন কুমার রায় বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। এসময় কেএমপি’র অতিরিক্ত ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) জনাব মোঃ হুমায়ুন কবির, সহকারী পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) জনাব খোন্দকার হোসেন আহম্মদ, সোনাডাঙ্গা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ জনাব মোঃ কবির হোসেন-সহ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশ জানিয়েছে, এই নির্মম হত্যাকান্ডের ঘটনায় অন্য কেউ জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।


