
ভারতের পূর্বাঞ্চলের রাজ্য মনিপুর অশান্ত হয়ে ওঠার দুই বছরের বেশি সময় পরে রাজ্যটি সফরে গেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখানে একটি জনসভায় দেওয়া বক্তব্যে রাজ্যে পুরোপুরি শান্তি ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
শনিবার রাজ্যের কুকি অধ্যুষিত চুরাচাঁদপুরে জনসভায় মোদি বলেন ‘আমরা মণিপুরকে শান্তি ও সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। আমি আজ আপনাদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। আমি আপনাদের সঙ্গে রয়েছি। মণিপুরে স্থিতাবস্থা ফেরাতে, শান্তি আনার জন্য সরকার কাজ করছে।’
বিজেপি সরকার মণিপুরকে বিশেষ প্রাধান্য দিচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘একটা সময় ছিল যখন দিল্লিতে উন্নয়নমূলক প্রকল্পের ঘোষণা হতো কিন্তু মণিপুরে পৌঁছাতে পৌঁছাতে কয়েক দশক লেগে যেত। কিন্তু এখন আর তা হয় না।’
২০২৩ সালের মে মাসে ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে মণিপুরে। ওই সময় হিন্দু মেইতেই সংখ্যাগরিষ্ঠ ও খ্রিস্টান কুকি সম্প্রদায়ের মাঝে ভয়াবহ সংঘাত হয়। রাজ্যের এই সহিংসতায় ২৫০ জনের বেশি মানুষের প্রাণহানি এবং আরও কয়েক হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। বাস্তুচ্যুত বাসিন্দারা বর্তমানে সরকারের অস্থায়ী শিবিরে বসবাস করছেন।
মণিপুরের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে মোদি বলেছেন, ‘মণিপুরের ভূমি আশা ও উচ্চাকাঙ্খার ভূমি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এই সুন্দর অঞ্চলে হিংসার ছায়া পড়েছিল। কিছুক্ষণ আগে আমি ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে দেখা করেছি, যারা ত্রাণ শিবিরে রয়েছেন। তাদের সঙ্গে সাক্ষাতের পর আমি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারি যে মণিপুরে আশা ও বিশ্বাসের নতুন ভোরের উদয় হতে চলেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘উন্নয়নের জন্য শান্তি দরকার। গত কয়েক বছরে বছরে নর্থ ইস্টে অনেক বিবাদের সমাপ্তি হয়েছে এবং মানুষ বিকাশকে প্রাধান্য দিয়েছেন। (মণিপুরে) হিল (পাহাড়) এবং ভ্যালিতে (উপত্যকায়) বিভিন্ন জনজাতির মানুষের মধ্যে সমঝোতার জন্য আলোচনা শুরু হয়েছে। শান্তি ফেরানোর কাজ চলছে। আমি সমস্ত সংগঠনকে অনুরোধ করছি, নিজেদের স্বপ্ন পূরণের জন্য আপনারা শান্তির পথ বেছে নিন। শিশুদের ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করুন।’
চুরাচাঁদপুরের সভার পর মেইতেই অধ্যুষিত ইম্ফল উপত্যকায় যান মোদি। সেখানেও ভিটেহারাদের সঙ্গে দেখা করে তাদের পরিস্থিতির কথা জানতে চান। একাধিক উন্নয়নমূলক প্রকল্পের শিলান্যাস করেন।
পরে জনসভায় বলেন, ‘২০১৪ সালের আগে মণিপুরের উন্নয়নের হার এক শতাংশেরও কম ছিল। কিন্তু এখন তার গতি কয়েক গুণ বেড়েছে। এখানে গ্রাম এবং শহরাঞ্চলে উন্নয়ন হচ্ছে।’
ইম্ফলের জনসভায় কথা বলতে গিয়ে কিছুটা ‘ইঙ্গিতপূর্ণ ভাবেই’ নেপালের প্রসঙ্গ টেনে আনেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশটির অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়া সুশীলা কারকিকে অভিনন্দন জানিয়ে যুবসম্প্রদায়ের কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘গত দুই-তিনদিন ধরে নেপালের রাস্তা পরিচ্ছন্ন করে তুলতে দেখা গিয়েছে যুবসম্প্রদায়কে। এটা ইতিবাচক এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ইঙ্গিত।’
কেন উল্লেখযোগ্য এই সফর
অশান্ত হয়ে ওঠার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মণিপুরে গেলেও প্রধানমন্ত্রী মোদী যাননি। তার এই অনুপস্থিতিকে ঘিরে একদিকে যেমন বিরোধী দলগুলো বিজেপিকে নিশানা করেছে তেমনই স্থানীয় মানুষদের মধ্যেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
মণিপুরে শান্তি ফেরানোর দাবিতে সাম্প্রতিক সময়ে একাধিকবার রাস্তায় নেমেছেন কুকি ও মেইতেই দুই জনজাতির মানুষ। নারীরা মশাল মিছিল করেছেন, রাস্তায় নেমেছেন মানবাধিকার কর্মীরা এবং ছাত্র সংগঠনের সদস্যরাও।
গত দুই বছরের বেশি সময়ের মধ্যে বারেবারে অশান্ত হয়ে উঠেছে এই রাজ্য। রাজনৈতিক অস্থিরতা তুঙ্গে উঠেছে, মন্ত্রীদের বাড়িতে হামলা হয়েছে। রাজনৈতিক অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং পদত্যাগ করেছেন এবং মণিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হয়েছে।
প্রসঙ্গত, পাঁচ রাজ্য সফরে বেরিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। এই সফরের অংশ হিসেবে শনিবার মিজোরাম ও মণিপুর যান তিনি। এরপর সেখান থেকে আসাম, পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারে যাওয়ার কথা তার।
বিহারে আগামী অক্টোবর কিংবা নভেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তার আগে নরেন্দ্র মোদির এই সফর গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে। ভারতের উত্তরাঞ্চলের হিন্দিভাষী রাজ্যগুলোর মধ্যে একমাত্র রাজ্য বিহার। এই রাজ্যে নরেন্দ্র মোদির রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) কখনোই এককভাবে ক্ষমতায় আসতে পারেনি।