ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের এক জরুরি বৈঠক চলছে। এতে নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশ।
বৈঠকে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ জাতিসংঘ মহাসচিবের নেতৃত্বে সংলাপের মাধ্যমে সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের ওপর জোর দেয়। এর পাশাপাশি জাতিসংঘ সনদে বর্ণিত সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় অখণ্ডতার নীতির প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ।
এর আগে ইউক্রেন প্রশ্নে নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকে নিন্দাসূচক প্রস্তাবে রাশিয়ার ভেটোর কারণে তা বাতিল হয়ে যায়। পরে বিষয়টি আলোচনার জন্য সাধারণ পরিষদে স্থানান্তরিত হয়। গত সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিতর্কের সূত্রপাত করে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন, যথেষ্ট হয়েছে, ইউক্রেনে হামলা এখনই বন্ধ করতে হবে।
এই বিতর্কে যেসব দেশ অংশগ্রহণ করে, তাদের অনেকেই ইউক্রেনে হামলার জন্য রাশিয়ার সমালোচনা করে। শুধু পশ্চিমা দেশগুলোই নয়, তৃতীয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এই হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনভিত্তিক বিশ্বব্যবস্থার ওপর সরাসরি আঘাত হিসেবে বর্ণনা করে।
তবে রাশিয়ার সঙ্গে দীর্ঘদিন মৈত্রীর সূত্রে আবদ্ধ—এমন অনেক দেশ এ আগ্রাসনের জন্য কোনো পক্ষকে দায়ী করার বদলে কূটনৈতিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানের ওপর জোর দেয়। এর আগে নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপিত খসড়া প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত থেকে ভারত তার এই নিরপেক্ষ অবস্থান স্পষ্ট করে।
আর এই বিতর্কের দ্বিতীয় দিন বাংলাদেশের পক্ষে যে বক্তব্য দেওয়া হয়, তা ভারতের অনুরূপ। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের উপপ্রধান মোহাম্মদ মনোয়ার হোসেন এই বিতর্কে যোগ দেন। তিনি এই সংকট সমাধানে কূটনৈতিক উদ্যোগ নেওয়ার জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবকে আহ্বান জানান।
এ ছাড়া, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এ সময় নিউইয়র্কে অবস্থান করলেও জাতিসংঘের এই বিতর্কে অংশ নেননি। একটি স্থানীয় বাংলা টিভির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বলেন, ‘আমরা সব রকম যুদ্ধের বিরুদ্ধে। জাতিসংঘ মহাসচিবের উদ্যোগে এ সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান হোক, আমরা সেটাই চাই।’ তিনি আরও জানান, ক্ষুদ্র দেশ হিসেবে সব রকম যুদ্ধ ও আন্তর্জাতিক সংকট বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থি।
প্রসঙ্গত, ইউক্রেন সংকট নিয়ে ১৯৩ সদস্যের জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বৈঠক চলছে। সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) শুরু হওয়া অধিবেশনে সপ্তাহের শেষ নাগাদ ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হতে পারে। ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের নিন্দা জানিয়ে রাশিয়াকে আরও বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে এবং ইউক্রেন থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে এই ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হতে পারে।
এদিকে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা জানিয়েছে, রাশিয়ার সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অংশ নিতে এখন পর্যন্ত বিদেশ থেকে ৮০ হাজার ইউক্রেনীয় নাগরিক দেশে ফিরেছেন।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, ইউক্রেনে শুরু হওয়া রুশ হামলায় ১৩ শিশুসহ অন্তত ১৩৬ জন নিহত হয়েছে। তবে ইউক্রেন বলছে, নিহত ব্যক্তির সংখ্যা সাড়ে ৩০০ ছাড়িয়ে গেছে। যুদ্ধ থেকে প্রাণে বাঁচতে ৬ লাখ ৭৫ হাজারের বেশি মানুষ ইউক্রেন ছেড়ে প্রতিবেশী দেশগুলোয় যেতে বাধ্য হয়েছে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ বিষয়ে আগামী সোমবার (৭ মার্চ) গণশুনানি শুরু করবেন হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে)।
পিএসএন/এমঅাই