ইরান-ইসরায়েলে সংঘাত অব্যাহত থাকায় তেহরান থেকে বাংলাদেশি নাগরিকদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করছে দূতাবাস। পরে পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশিদের স্থলপথে ইরান–পাকিস্তান সীমান্তে নেওয়া হতে পারে। এরপর পাকিস্তান থেকে তাদের করাচি–দুবাই হয়ে ঢাকায় ফেরত আনার পরিকল্পনা করছে সরকার।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইরানের রাজধানী তেহরানে অবস্থানরত প্রায় ৪০০ বাংলাদেশির মধ্যে ১০০ জনের মতো দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তাদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকের মতো তেহরান থেকে অনেক দূরে সরে গেছেন। ইরানের বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত, অন্যান্য কূটনীতিকসহ দূতাবাসের কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারের সদস্য মিলিয়ে ৪০ জন নিরাপদ স্থানে সরে গেছেন।
মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, ইরানের পরিস্থিতি বুঝে রাষ্ট্রদূত এবং দূতাবাসকে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে। ইন্টারনেট সংযোগ সীমিত হওয়ার কারণে তাদের পক্ষে সবসময় আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে তাদেরকে অবস্থা বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে। যদি কোনও বাংলাদেশি ইরান ছেড়ে সীমান্তবর্তী কোনো দেশে যেতে চান, তবে পরিস্থিতি অনুযায়ী সর্বোচ্চ সহায়তা দেবে বাংলাদেশ দূতাবাস।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সব মিলিয়ে ২ হাজারের বেশি বাংলাদেশি ইরানে রয়েছেন। তাদের মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে তেহরানে থাকা ৪০০ বাংলাদেশি। ধারণা করা হচ্ছে, তেহরানে থাকা ৪০০ বাংলাদেশির মধ্যে অন্তত অর্ধেক বাংলাদেশি ফিরতে পারেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইরানে বাংলাদেশ দূতাবাসে রাষ্ট্রদূত, দুজন কর্মকর্তা, পাঁচজন কর্মচারী এবং তাদের পরিবারসহ প্রায় ৪০ জন রয়েছেন। রেডিও তেহরানে আট জন বাংলাদেশি ও তাদের পরিবারসহ রয়েছেন ২৭ জন। তেহরানে শিক্ষার্থী রয়েছেন প্রায় ১০ থেকে ১২ জন। পেশাজীবী আছেন প্রায় ১০ জন। এ ছাড়া, ২৮ জন বাংলাদেশির গত ১৩ই জুন দেশে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা আটকা পড়েছেন। সব মিলিয়ে তেহরানে ৪০০ বাংলাদেশি রয়েছেন।
ইরানের অন্যান্য জায়গায় প্রায় ৬০০ বাংলাদেশি আছেন, তারা ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে সে দেশে বসবাস করছেন। সেখানে বিয়ে করে তারা স্থায়ী হয়েছেন। এর বাইরে আরও প্রায় ৮০০ বাংলাদেশি ১০ বছরের বেশি সময় ধরে অবৈধভাবে ইরানে অবস্থান করে বিভিন্ন সেক্টরে চাকরিতে নিয়োজিত আছেন। প্রায় ২০০-এর মতো শিক্ষার্থী বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছেন। এ ছাড়া মানব পাচারের ট্রানজিট দেশ হিসেবে ইরানে সবসময় ৩০০ থেকে ৫০০ বাংলাদেশি অবস্থান করেন অন্য দেশে পাচার হওয়ার অপেক্ষায়।