
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় দখলদার ইসরায়েলের অবৈধ নৌ অবরোধ ভাঙা ও সাধারণ মানুষের জন্য ত্রাণ নিয়ে সমুদ্রপথে গাজার দিকে রওনা দিয়েছিলেন বিশ্বের প্রায় ৫০০ অধিকারকর্মী। এরমধ্যে ছিলেন পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ।
গত ২ অক্টোবর জাহাজ জব্দ করে তাদের ধরে আসোদ বন্দরে নিয়ে যায় ইসরায়েলি নৌ কমান্ডোরা। এরপরই শুরু হয় নির্যাতন।
সুইডিশ সংবাদমাধ্যম আফটোনব্লাডেটকে গ্রেটা বলেছেন, আটকের পর তার স্যুটকেস জব্দ করে ইসরায়েলি সেনারা। স্যুটকেসটি ফেরত দেওয়া হলে তিনি দেখেন সেখানে ‘বেশ্যা থুনবার্গ’ লিখে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া তার লাগেজের ওপর কালো মার্কার কলম দিয়ে ইসরায়েলি পতাকা এবং পুরুষাঙ্গের ছবি আঁকা ছিল।
আসোদ বন্দরে যাওয়ার পর ‘দুঃস্বপ্নময়’ পরিস্থিতি দেখেন বলেও জানিয়েছেন গ্রেটা। তিনি বলেছেন, তাকে একটি লোহার খাঁচায় টেনেহিঁচড়ে নেওয়া হয়।
গ্রেটা বলেন, “খুব সম্ভবত আমি ৫০ জনকে এক লাইনে হাঁটু গেড়ে বসে থাকতে দেখেছি। তাদের হাতে হাতকড়া লাগানো। আর কপাল ছিল মাটির সঙ্গে লাগানো। তারা যেখানে বসেছিলেন তার উল্টো দিকে আমাকে নেওয়া হয়। তারা আমার শরীরে ইসরায়েলি পতাকা জড়িয়ে দেয়। যা জড়ানোই ছিল। তারা আমাকে লাথি মেরেছে, আঘাত করেছে।”
“এরপর তারা আমার টুপি খুলে ফেলে মাটিতে ফেলে দেয়। টুপিটি মাড়িয়ে এটিতে লাথি দেয়।”
গ্রেটা আরও বলেছেন, “ইসরায়েলি রক্ষীদের মধ্যে কোনো ধরনের মায়া বা মানবতাবোধ নেই। তারা আমার সাথে সেলফি তুলতে থাকে। আরও অনেক কিছু ঘটেছে। যা আমার মনে নেই। একসঙ্গে অনেক কিছু হচ্ছিল। আমি স্তব্ধ হয়ে গিয়েলাম, ব্যথা পাচ্ছিলাম। কিন্তু ওই সময় শান্ত থাকার চেষ্টা করছিলাম।”
এছাড়া তিনিসহ প্রায় ৬০ জনকে কারাগারের একটি ছোট রুমে ঠাসাঠাসি করে রাখা হয়েছিল বলেও জানিয়েছেন গ্রেটা। তিনি বলেন, “সেখানে অনেক গরম ছিল। প্রায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। আমরা পুরোটা সময় পানির জন্য কাকুতি মিনতি করেছি। বলেছি, ‘আমাদের পানি দিন, পানি দিন’। আমরা চিৎকার করেছি। কিন্তু কারাগারের রক্ষীরা আমাদের রুমের সামনে দিয়ে হেঁটে যেত তাদের পানির বোতল নিয়ে। বোতল হাতে নিয়ে তারা হাসাহাসি করত। আমাদের সামনে পানির বোতল ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দিয়েছে তারা।”
“যখন কেউ অজ্ঞান হতো, আমরা চিকিৎসকের জন্য চিৎকার করতাম। তারা এসে গ্যাস ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিত। তাদের হাতে গ্যাসের সিলিন্ডার থাকত এবং এগুলো আমাদের ওপর ছাড়ার কথা বলত।”
“রাতের বেলা রক্ষীরা আমাদের এখানে আসত। তারা কারাগারের লোহার দণ্ডগুলো নাড়াত, ফ্ল্যাশলাইট মারত। রাতের বেলা একাধিকবার এসে আমাদের জোর করে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলত।”
এতসব নির্যাতনের পর ৬ অক্টোবর গ্রেটা থুনবার্গকে ছেড়ে দেয় দখলদাররা। তিনি অভিযোগ করেছেন, তার নিজ দেশে সুইডেনের দূতাবাসের কর্মকর্তারা তাকে সাহায্য করেনি। বরং তার ওপর যে নির্যাতন চালানো হয়েছে সেটি ঢাকার চেষ্টা করা হয়েছে।