আসন্ন ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে গরু মোটাতাজাকরণ ও বিশুদ্ধ মাংস উৎপাদনে ব্যস্ত সময় পার করছেন ডুমুরিয়া উপজেলার খামারিরা। সম্পূর্ণ দেশীয় খাবারের ওপর ভিত্তি করে এসব খামারে কোরবানির পশু লালনপালন করা হচ্ছে। বাজারমূল্য ঠিক থাকলে এবারও লাভবান হওয়ার আশা খামারিদের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ডুমুরিয়া উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামে পারিবারিক ও বাণিজ্যিকভাবে মোটাতাজাকরণের লক্ষ্যে গড়ে উঠেছে গরুর খামার। ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে খামারগুলোতে এখন চলছে অতিরিক্ত পরিচর্যা। দেশি গরুর সঙ্গে এবার ডুমুরিয়ার এসব খামারগুলোতে খামারে প্রস্তুত করা হচ্ছে সিন্ধি, অস্ট্রেলিয়ান, পাকিস্তানি জাতের গরু। প্রাকৃতিক খাবারের পাশাপাশি স্বাস্থসম্মত বিভিন্ন খাবার দিয়ে গরুগুলোকে হৃষ্টপুষ্ট করতে ব্যস্ত খামারিরা। এদিকে সামান্য অযত্নে যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে বিষয়ে এখন সতর্ক খামারিরা।
রঘুনাথপুর ইউনিয়নের খামারি মিনু সাহা জানান, তার খামারের ৪ বছর বয়সী ৪০ মনের একটি গরুর নাম ‘রাজা মানিক’। তিনি গরুটির দাম নির্ধারণ করেছেন ১৬ লাখ টাকা। তিনি বলেন, “আমি গরুটিকে পরিবারের সদস্যের মতো লালন-পালন করেছি। ভালো মানের দেশীয় খাবার সরবহার করেছি। প্রাকৃতিকভাবে গরু বড় করে আমরা বিক্রি করে আসছি আমি”। বর্তমানে তার খামারে দেশীয় ও অস্ট্রেলিয়ান জাতের ৮টি গরু রয়েছে, যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ৮০ লাখ টাকা।
খামারিদের ভাষ্যমতে, প্রতিটি গরুর পেছনে দৈনিক ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হচ্ছে। তবে বাজার ভালো থাকলে লাভের আশা করছেন তারা।
একই গ্রামের খামারি আমির হামজা জানান, “সপ্তাহখানেক আগে আমার খামারের ৮টি গরু বিক্রি করেছি। এখনো ৫টি আছে। এবারের কোরবানিতে তিনটি মধ্যম সাইজের গরু ৫০ হাজার টাকা দরে বিক্রি করব বলে আশা করছি।”
ডুমুরিয়ার বিভিন্ন হাট ঘুরে দেখা গেছে, গরুর দাম গত বছরের তুলনায় এ বছর কিছুটা স্থিতিশীল এবং গরুগুলোর স্বাস্থ্য বেশ ভালো। প্রাকৃতিকভাবে মোটাতাজা করা এসব গরু পেয়ে খুশি ক্রেতারা।
খর্নিয়া পশুর হাটে পশু কেনার জন্য এসেছেন ক্রেতা মোহাম্মদ জুয়েল। তিনি বলেন, “গরুগুলোর চেহারা সুন্দর ও স্বাস্থ্য ভালো, তাই দা্মের দিকটা আপাতত ভাবছি না। এখানকার হাটে যেসব গরু ওঠে তা স্থানীয়ভাবে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়েই মোটাতাজাকরণ করা হয়ে থাকে।”
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এবার প্রায় ৪১ হাজার ৮৩৬টি গবাদিপশু প্রস্তুত হবে, যা স্থানীয় চাহিদা পূরণে যথেষ্ট। ডুমুরিয়া উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে খামারির সংখ্যা প্রায় ৯ হাজার ৬০০।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. আশরাফুল কবির বলেন, “খামারিদের উৎসাহিত করতে সরকারি প্রণোদনার পাশাপাশি কারিগরি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। বেসরকারি সংস্থা এফডিএ-এর আরএমটিপি প্রকল্পের আওতায় ৪৯ জন খামারিকে এরইমধ্যে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।”
“এক সময় স্টেরয়েড ও হরমোন ব্যবহার করে পশু মোটাতাজা করার প্রবণতা ছিল। এখন সেই প্রবণতা প্রায় নেই। তিনটি মেডিকেল টিম নিয়মিত খামার পরিদর্শন করছে, যাতে কেউ অবৈধভাবে পশু মোটাতাজা করতে না পারে,’’ আরও বলেন তিনি।
এবার ডুমুরিয়া উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে স্থায়ী ও অস্থায়ীভাবে বসছে তিনটি পশুর হাট। প্রশাসন, প্রাণিসম্পদ বিভাগ এবং ভেটেরিনারি টিমের সমন্বয়ে এবারের ইদ-উল-আজহার পশুর হাটগুলোতে সুশৃঙ্খল পরিবেশ নিশ্চিত করার কাজ চলছে বর্তমানে।