
টি-টোয়েন্টি সিরিজে অমন ভালো খেলে আফগানিস্তানকে তুলোধোনা করার পর ওয়ানডেতে এসে ছন্নছাড়া বাংলাদেশ। পরপর ২ খেলায় যাচ্ছেতাই ব্যাটিংয়ের ‘নগ্ন প্রদর্শনী’। প্রথম খেলায় যেখানে আড়াইশ পেরিয়ে ২৬০-২৭০ রান করার কথা, সেখানে ২২১-এ থেমে ৫ উইকেটে হার। আর কাল ১৯১ রানের সাধারণ টার্গেট তাড়া করে হতশ্রী ব্যাটিংয়ের চরম খেসারত দিয়ে ১০৮ রানে অলআউট। আর তাতেই সিরিজ হাতছাড়া।
ভাবার কোনো কারণ নেই যে, শুধু এই সিরিজেই খারাপ খেলেছে বাংলাদেশ। পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, এটা নিয়ে ওয়ানডেতে পরপর ৪টি সিরিজ হারলো টিম বাংলাদেশ।
একসময় যে ওয়ানডে ছিল ভালো খেলার মঞ্চ, সবাই বলতো তিন ফরম্যাটের মধ্যে ওয়ানডেতেই ভালো খেলে বাংলাদেশ। সেই ওয়ানডেতেই এখন পারছেন না বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা।
দেখে মনে হচ্ছে, একদিনের ক্রিকেটের মানে ৫০ ওভারের ফরম্যাটের ছন্দ, গতি, লয়, ধরনের সাথেই তাল মেলাতে পারছে না বাংলাদেশ।
কেন এই না পারা? সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন নাজমুল আবেদিন ফাহিম। বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান মনে করেন, ওয়ানডে তুলনামূলক কম খেলা, টি-টোয়েন্টিতে ডুবে থাকা একটা কারণ। তাতে করে ক্রিকেটারদের মাইন্ডসেটটা টি-টোয়েন্টিময় হয়ে উঠেছে।
চিন্তাচেতনা, ভাবনা, গেম প্ল্যান, মাইন্ডসেট আর অ্যাপ্রোচটা হয়ে উঠেছে টি-টোয়েন্টির। ৫০ ওভারের ফরম্যাটের সাথে যার মিল নেই একদমই। ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টির অ্যাপ্রোচ, অ্যাপ্লিকেশন পুরোপুরি ভিন্ন। বোঝাই যাচ্ছে, সেই পার্থক্য বুঝে ৫০ ওভারের ক্রিকেট উপযোগী অ্যাপ্রোচ ও অ্যাপ্লিকেশনটা খুব জরুরি। যেটা হচ্ছে না একদমই। বোঝা যায়, ক্রিকেটাররা সেই ২০ ওভার আর ৫০ ওভারের খেলার ধরন ও গতির যে পার্থক্য, সেটা ঠিক বুঝে পারফর্ম করতে পারছে না। সে কারণেই আসলে পারফরম্যান্সের গ্রাফটা খুব নিচে নেমে গেছে।
দেশের ক্রিকেটের অন্যতম নামকরা বিশ্লেষক ফাহিমের ব্যাখ্যা, ‘ওয়ানডেতে যে ধরনের মেন্টাল স্ট্রেংথ লাগে, সেই জায়গায় কিছু ঘাটতি আছে। দেখে মনে হয় ক্রিকেটারদের ভেতরে আন্ডারস্ট্যান্ডিংটা কম। ম্যাক্সিমাম ইয়াং প্লেয়ার, ওয়ানডে খেলার এক্সপেরিয়েন্সড প্লেয়ার কমই আছে।’
বিসিবি পরিচালক ফাহিম মনে করেন, ঘরোয়া ওয়ানডে আসরের মান কমে যাওয়াটাও বাংলাদেশের পারফরম্যান্স খারাপ হওয়ার একটা কারণ।
তার কথা, ‘এক সময় আমাদের ঘরোয়া ওয়ানডে ক্রিকেটটা খুব জমজমাট ছিল। উত্তেজনা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাও ছিল অনেক বেশি। আমাদের ক্রিকেটাররা ওই ডমেস্টিক ওয়ানডে খেলে খেলেই হাত পাকিয়েছে। কিন্তু এখন ডমেস্টিক ওয়ানডে স্ট্রাকচারটা আগের মতো নেই। খেলা দেখলেই বুঝতে পারি। আমাদের ক্রিকেটারদের ওয়ানডের গ্রুমিং ততটা ভালো না।’
‘তারা ম্যাচের ক্রিটিক্যাল মোমেন্টগুলো ঠিকমতো পার করতে পারে না। অন্য দলগুলো যেভাবে ভালোভাবে মোমেন্টামগুলো ধরতে পারে, আমরা ব্যাটিংয়ে তা পারছি না। ওই সময় পার করার ক্ষেত্রে আমরা মানসিকভাবে পিছিয়ে।’
ফাহিমের ধারণা, আরও একটি কারণে বাংলাদেশের ব্যাটিংটা ভালো হচ্ছে না। সেটা হলো মিডল অর্ডারে অভিজ্ঞ, পরিণত ও কার্যকর ক্রিকেটারের অভাব। বোঝাই যায়, সাকিবের গুরু মেন্টর ফাহিম তার ছাত্র সাকিব, মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের কথাই বুঝিয়েছেন।
তার ভাষায়, ‘আগে যারা মিডল অর্ডারে খেলতো, তারা মানে সিনিয়ররা খুব ভালোভাবে কঠিন পরিস্থিতিগুলো নিয়ন্ত্রণ করতো। চাপে ও সংকটে হাল ধরতো। ধৈর্য ধরে ঠান্ডা মাথায় বিপর্যয় এড়িয়ে দলকে সাফল্যের বন্দরে পৌঁছে দিত। কিন্তু এখনকার তরুণরা ওই সংকটে, বিপদে সেভাবে পরিস্থিতি সামলাতে পারছে না।’
তবে এসবকিছুকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করানোর সুযোগ নেই, মনে করছেন ফাহিম। ক্রিকেট অপস প্রধানের কথা, ‘কোনো অজুহাতই অজুহাত নয়। এমন খেলার কোনোই অজুহাত হতে পারে না। এতটা খারাপ ব্যাটিংয়ের কোনো কারণ খুঁজে পাই না। এর দায় ক্রিকেটারদের নিতেই হবে। টিমকে নিতেই হবে। অ্যাপ্লিকেশনের ক্ষেত্রে আরও ভালো হওয়া খুবই দরকারি।’