জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আইসিটি বিভাগ 'শতবর্ষের শত আশা' শীর্ষক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ উদ্যোগের মাধ্যমে 'স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড' প্রকল্পের অর্থায়নে সফল ব্যবসায়িক উদ্যোগ তৈরি এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ৫০টি স্টার্টআপে ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে। এরই অংশ হিসেবে সম্প্রতি দ্বিতীয় ধাপে আটটি স্টার্টআপকে ১৭ কোটি টাকা মূলধন সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে। বিনিয়োগপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- হ্যালো টাস্ক, ১০ মিনিটস স্কুল, আই ফারমার, ফ্রন্টিয়ার নিউট্রেশন, লুপ, যান্ত্রিক, সাটেল এবং ট্রাক লাগবে। এর আগে প্রথম ধাপে সাতটি স্টার্টআপকে ১৭ কোটি টাকা দেওয়া হয়। নির্বাচিত এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অংশীদারিত্ব চুক্তির মাধ্যমে বিনিয়োগ করছে স্টার্টআপ বাংলাদেশ। ব্যবসায়িক কৌশলের কারণেই কোন স্টার্টআপ কত বিনিয়োগ পেয়েছে, তা কোনো পক্ষই প্রকাশ করছে না। স্টার্টআপ বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামী আহমেদ বলেন, বাণিজ্যিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে বিনিয়োগকৃত অর্থ ব্যয় করবে নির্বাচিত স্টার্টআপগুলো। নির্দিষ্ট সময় পর লাভ-ক্ষতি হিসাব করে বিনিয়োগের অর্থ ফেরত নেওয়া হবে।
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, আমরা দেশে স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম তৈরি করতে চাই। ২০৪১ সালের মধ্যে বিশ্ববাজারে আমাদের দেশের বিলিয়ন ডলারের বড় কোম্পানি থাকবে, শীর্ষ কোম্পানি হিসেবে তারা জায়গা করে নেবে, এ লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি। আশা করছি, আমাদের এ উদ্যোগের মাধ্যমে নতুন কোনো সফল স্টার্টআপ তৈরি হবে, যারা বিশ্বের কাছে দেশের নাম উঁচু আসনে তুলে ধরবে।
অনলাইন পড়াশোনায় ১০ মিনিটস স্কুল
দেশের সবচেয়ে বড় শিক্ষাভিত্তিক অনলাইন প্ল্যাটফর্ম। ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত প্ল্যাটফর্মটি প্রাথমিকভাবে আইসিটি বিভাগ ও রবির সহযোগিতায় এগিয়ে যেতে থাকে। চলতি বছরই ভারতভিত্তিক সেকোয়া ক্যাপিটাল থেকে ১৭ কোটি টাকা বিনিয়োগ পেয়েছে। প্ল্যাটফর্মটির কর্ণধার আইমান সাদিক বলেন, নতুন বিনিয়োগের মাধ্যমে প্ল্যাটফর্মটিকে ঢেলে সাজানো হবে। নতুন জনবল নিয়োগের পাশাপাশি নতুন নতুন কোর্স কারিকুলাম যুক্ত হবে প্ল্যাটফর্মটিতে। যুক্ত হবে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষণ ও ক্লাসের ইন্টার্যাকটিভ ভিডিও।
অপুষ্টির বিরুদ্ধে ফ্রন্টিয়ার নিউট্রিশন
অপুষ্টির বিরুদ্ধে বলা যায় যুদ্ধই ঘোষণা করেছে 'ফ্রন্টিয়ার নিউট্রিশন'। স্বল্পমূল্যে সব শ্রেণির মানুষের জন্য সুস্বাদু নাশতার আইটেম তৈরি করছে প্রতিষ্ঠানটি। মূলত স্বল্প আয়ের লাখ লাখ পরিবারের জন্য সাশ্রয়ী দামে পুষ্টি নিশ্চিত করতে চায় ফ্রন্টিয়ার নিউট্রিশনের উদ্যোক্তারা। তাদের উদ্ভাবনে রয়েছে নানা স্বাদের নানা আইটেমের নাশতার খাবার। প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা, উদ্ভাবন, তৈরি থেকে বাজারজাতকরণ পুরো প্রক্রিয়াটিই প্রযুক্তিনির্ভর।
গৃহকর্মী খুঁজে দেয় হ্যালো টাস্ক
অনলাইনে আজকাল নানা কিছু খুঁজে পাওয়া যায়। তবে ঘরের কাজের সহায়তার জন্য গৃহকর্মীও পাওয়া যাবে অনলাইনে, কেউ ভেবেছিল?
কিন্তু 'হ্যালো টাস্কের' উদ্যোক্তা মাহমুদুল হাসান লিখন ঠিকই গৃহকর্মীর অভাব পূরণে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম করা যায় কিনা- ভাবলেন। অনেকে শুধু ভাবেন; কিন্তু লিখন বাস্তবায়নও করলেন। ২০১৮ সালে যাত্রা শুরু করল 'হ্যালো টাস্ক' প্ল্যাটফর্ম। এখন ঘরের কাজের জন্য কর্মী খোঁজার এটি অন্যতম প্ল্যাটফর্ম। বর্তমানে ২০ জনের একটি দল নিয়ে চলছে প্রতিষ্ঠানটি। মাহমুদুল হাসাল লিখন জানান, গৃহকর্মীদের প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত দিক ডেভেলপ করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। এর পাশাপাশি গ্রাহকসেবা উন্নত করে বিশাল নেটওয়ার্ক তৈরিতে কাজ করছি।
কৃষির জন্য আই-ফারমার
কৃষি অর্থায়ন এবং পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিতে কাজ করছে। আই-ফারমারের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী ফাহাদ ইফাজ বলেন, আমরা নতুন বিনিয়োগের মাধ্যমে আমাদের কার্যক্রম আরও বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছি।
লজিস্টিক সমাধানে লুপ ফ্রেইট
লুপ ফ্রেইট মূলত উদ্ভাবনী ডিজিটাল সুল্যশন-ভিত্তিক লজিস্টিক কোম্পানি। এটি মূলত পণ্য ডেলিভারি ব্যবস্থাপনায় কাজ করে থাকে। পেমেন্ট থেকে ডেলিভারি- সব কার্যক্রমই ডিজিটাল সিস্টেমে বাস্তবায়ন করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। কোম্পানিটি এর আগেও একাধিক ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানি থেকে বিনিয়োগ সংগ্রহ করেছে।
রাইডিং সেবা নিয়ে শাটল
২০১৮ সালে যাত্রা শুরু করে রাইড সেবা শাটল। কর্মক্ষেত্রে নারীদের যাতায়াত সহজ করতে পরিবহন সেবা চালু করে শাটল। একসঙ্গে একই রুটে আট থেকে ১০ জন হলেই একটি মাইক্রো দিয়ে থাকে শাটল। অপেক্ষাকৃত কম খরচে নির্বিঘ্ন যাতায়াত নিশ্চিত করতে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। এখন নারী-পুরুষ সবাইকেই সেবার আওতায় এনেছে প্রতিষ্ঠানটি। অন-ডিমান্ড রাইড শেয়ারিংয়ের সঙ্গে শাটলের পার্থক্য হচ্ছে এখানে রুটের যাত্রী আগে থেকেই নির্ধারিত থাকে।
ট্রাক লাগবেতে ভাড়ায় ট্রাক
জরুরি প্রয়োজনে যে কোনো ধরনের ট্রাক ভাড়া পাওয়া যায় ট্রাক লাগবে প্ল্যাটফর্মে। ব্যবসায়িক মালপত্র পরিবহনে ওয়ান স্টপ সল্যুশন দিয়ে থাকে প্ল্যাটফর্মটি। ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত প্ল্যাটফর্মটিতে বর্তমানে ২২০ জন কর্মী কাজ করছেন। প্রশিক্ষিত চালকের পাশাপাশি সুরক্ষিত ডেলিভারির নিশ্চয়তা দেয় প্রতিষ্ঠানটি। প্ল্যাটফর্মটির প্রতিষ্ঠাতা প্রধান নির্বাহী এনায়েত রশীদ বলেন, তালিকাভুক্ত ও নতুন ড্রাইভারদের প্রশিক্ষণ ও অধিকসংখ্যক গ্রাহকের কাছে পৌঁছাতে কাজ করছি। সেবা সহজ ও পরিধি বাড়াতে অ্যাপ ডেভেলপমেন্টের কাজ নিয়মিতভাবে চলছে।
ডিজিটাল সারাইখানা যান্ত্রিক
যান্ত্রিক হচ্ছে গাড়ি মেরামতের ডিজিটাল সারাইখানা। ২০১৮ সালের জুন মাসে প্রতিষ্ঠিত প্ল্যাটফর্মটিতে বর্তমানে ৩৪ জন কর্মী রয়েছেন। প্ল্যাটফর্মটিতে কারখানার পাশাপাশি গাড়ির মালিকদেরও যুক্ত করা হয়। এতে করে সহজেই গাড়ির মালিকরা তাদের গাড়ির যাবতীয় সমস্যার সমাধান করতে পারেন। যান্ত্রিকের প্রধান নির্বাহী শুভ আল ফারুক বলেন, আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে, নতুন ১০০ গ্যারেজকে ডিজিটালাইজ করা। পাশাপাশি আমরা গ্রাহকসেবা বাড়াতে কাজ করছি। নতুন ৬০ হাজার গ্রাহক অচিরেই আমাদের সঙ্গে যুক্ত হবে।
প্রকাশক ও সম্পাদক- আলি আবরার । নিরালা, খুলনা থেকে প্রকাশিত