
দেশে টানা চতুর্থ দিনের মতো করোনায় নতুন শনাক্তের সংখ্যা হাজারের ওপরে। সেই সঙ্গে ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে করোনায় শনাক্তের হার প্রায় ৭ শতাংশে গিয়ে পৌঁছেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় (৮ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে ৯ জানুয়ারি সকাল ৮টা) নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৪৯১ জনের। আর এ সময়ে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার গিয়ে পৌঁছেছে ছয় দশমিক ৭৮ শতাংশে।
দেশে করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের দাপটে গতবছর জুলাই-আগস্টের দিকে দৈনিক শনাক্তের হার ৩০ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। পরে তা কমতে কমতে জুলাই মাসে ২ শতাংশের নিচে চলে আসে। যা ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণেই ছিল। কিন্তু এরইমধ্যে বিশ্বব্যাপী শুরু হয় করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের তাণ্ডব। বাংলাদেশে ওমিক্রনের প্রভাব তেমন না পড়লেও সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। গত ৩ জানুয়ারি দৈনিক শনাক্তের হার ৩ শতাংশ এবং ৫ জানুয়ারি তা ৪ শতাংশ ছাড়ায়। কিন্তু তার দুই দিনের মাথাতেই (৭ জানুয়ারি) শনাক্তের হার পাঁচ শতাংশ ছাড়িয়ে হয় পাঁচ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, সপ্তাহের ব্যবধানে দেশে শনাক্ত রোগীর হার বেড়েছে ১১৫ শতাংশের বেশি আর মৃত্যু বেড়েছে ১৫ শতাংশ।
দেশে এখন পর্যন্ত ওমিক্রনে শনাক্ত হয়েছেন ২১ জনের এবং তারা সবাই রাজধানী ঢাকায়। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকায় ওমিক্রনের ক্লাস্টার ট্রান্সমিশন হয়েছে। এখনও সারাদেশে ছড়ায়নি। সঙ্গে তারা এও বলছেন, এখনই যদি সঠিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা না নেওয়া যায় তাহলে পুরো দেশে ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়তে সময় নেবে না। আর ওমিক্রন ছড়িয়ে গেলে সেই বিপর্যস্ত অবস্থা থেকে ফিরে আসা বাংলাদেশের জন্য কঠিন হবে।
ওমিক্রন দেশজুড়ে ছড়িয়ে গেলে সেখান থেকে আবার ফেরত আসা কঠিন হবে জানিয়ে ডা. এ এস এম আলমগীর বলেন, গত দুই মাস ধরে সব শপিংমল খোলা, বিয়ের অনুষ্ঠান হচ্ছে, সামাজিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান হচ্ছে, ইনডোরে কনসার্ট হচ্ছে এবং এসবের কোথাও কোনও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না।
‘এই ভাইরাসটি প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে এবং বিশেষভাবে পরিবর্তিত ভাইরাস যে কোনও সময়ে আমাদের জন্য বিপদজনক হতে পারে’, বলেন তিনি।
ইনফেকশাস ডিজিজের সূত্রমতে, ওমিক্রন যেভাবে ছড়াচ্ছে এবং তার শনাক্তের হার যদি হিসাব করা হয় তাহলে এটা আগামী তিন থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে পুরোদেশ জুড়ে ছড়িয়ে যাওয়ার কথা এবং সেটারই ‘ফোরকাস্ট’ হচ্ছে গত এক সপ্তাহের কিছু বেশি সময় ধরে।
স্বাস্থ্যবিধি মানানোর জন্য কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দিয়ে ডা. আলমগীর বলেন, রাষ্ট্র হয়তো শাস্তির ব্যবস্থা করবে, সরকারের সব অঙ্গ মিলে তার বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। কিন্তু শাস্তি দিয়ে আর কতজনকে মানানো যাবে? ব্যক্তিগত সচেতনতাই এখানে সবচেয়ে জরুরি।
একই কথা বলেছেন কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. তারিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এখনই সময়, দেরি হয়ে গেলে যে সর্বনাশ হয়ে যাবে এবং সেখান থেকে ফেরত আসা কঠিন হবে।
ভারতের সংক্রমণ পরিস্থিতি ইতোমধ্যেই দেশে উদ্বেগ তৈরি করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের বিমানবন্দর, স্থলবন্দর খোলা রয়েছে। মানুষের যাতায়াত থেমে নেই। আর এ পরিস্থিতি সবাইকে ভাবিয়ে তুলছে। এখনই সময়, দেরি হয়ে গেলে যে সর্বনাশ হবে সেখান থেকে ফেরত আসা খুব মুশকিল হবে। ভারতে (৭ জানুয়ারি) প্রায় দেড় লাখ মানুষ একদিনে শনাক্ত হয়েছেন। পশ্চিমবাংলার সঙ্গে যেহেতু আমাদের সীমান্ত রয়েছে এবং সেখানে বৈধ পথে মানুষের যাতায়াত নিয়ে কথা হচ্ছে।
‘কিন্তু পাশাপাশি একটা কথা বলতে আমরা ভুলে যাচ্ছি— সেটা হচ্ছে পশ্চিমবাংলার সঙ্গে বাংলাদেশের অবৈধ পথেও আনাগোনা আছে। যারা এভাবে চলাচল করে তারা ওপাড় থেকে এপাড়ে ওমিক্রন নিয়ে আসবে, এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। যেটা হয়েছিল ডেল্টার সময়ে। এখানেও তাই হবে।’
ওমিক্রন ঠেকাতে জাতীয় কারিগরি কমিটি তাদের বৈঠকে চারটি বিষয়ের উপর ভীষণ গুরুত্বারোপ করেছে এবং সেগুলো বাস্তবায়ন না করার কোনও বিকল্প নেই বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয়সহ সব ধরনের জনসমাবেশ অতিসত্বর বন্ধ করার কথা বলেছি, কোনও সংকোচন নয়। স্বাস্থ্যবিধি মানানোর জন্য কড়াকড়ি আরোপ করার কথা বলা হয়েছে। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে এখানে কাজে লাগতে হবে। যদি মানুষকে সরকার মাস্ক পরতে বাধ্য না করতে পারে তাহলে কিছু হবে না।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে করোনার চিত্র ভীষণভাবে ঊর্ধ্বমুখী জানিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এখনও সময় রয়েছে, ওমিক্রন ছড়িয়ে গেলে ফেরা যাবে না- এটা প্রতিটি মানুষকে মাথায় নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, এর কোনও বিকল্প নেই।
পিএস/এনআই