ডলার সংকট ছাড়াও নানা ছলচাতুরির মাধ্যমে কাগজের দাম বাড়ানো হচ্ছে এমন অভিযোগ করলেন প্রকাশনা শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা। তারা কাগজের কৃত্রিম সংকট তৈরি, গোপনে মজুদ করে রাখাসহ বাজার অস্থিতিশীল করার জন্য দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরকে পাশে চেয়েছেন।
বেশ কিছুদিন ধরে কাগজসহ প্রকাশনা শিল্পের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম ক্রমেই বেড়ে চলছে। এমন অবস্থায় নিজেদের সমস্যার কথা তুলে ধরতে সোমবার (২১ নভেম্বর) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘কাগজের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি ও সংকট নিয়ে’ এক সংবাদ সম্মেলন করে সৃজনশীল প্রকাশ ঐক্য।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন অনুপম প্রকাশনীর প্রকাশক মিলন কান্তি নাথ। তিনি বলেন, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর নিত্য ভোগ্যপণ্য নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকে। আমরা চাই কাগজের কৃত্রিম সংকট যারা তৈরি করে, গোপন মজুদ করে, যারা নানা ফন্দি এঁটে কাগজের বাজারকে অস্থিতিশীল করে, তাদের শাস্তির আওতায় আনা হোক।
প্রকাশনা খাত বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে এমনটা জানিয়ে প্রকাশকরা এসময় কাগজের দাম কমানোর দাবি জানান।
সৃজনশীল প্রকাশ ঐক্যের নেতারা বলেন, কাগজের মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে যোগ হয়েছে আমদানিনির্ভর ‘প্লেট’ পাওয়ার সংকট। জরুরি পরিস্থিতিতে বাড়তি দাম দিয়েও মিলছে না এ উপকরণ। এ অবস্থায় প্রকাশনা খাত এখন অচলাবস্থায় পড়েছে। প্রকাশনা শিল্পের অস্তিত্ব বিলীন হলে ক্ষতি শুধু প্রকাশকদেরই হবে না, এর প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী।
মিলন কান্তি নাথ বলেন, সাধারণত কাগজের মূল্য ধরেই বইয়ের মূল্য নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। একটি বই পাঠকের হাতে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত প্রায় ১৬টি পেশাদার হাত ঘুরে আসে। তাদের পেশাজীবন বইকে কেন্দ্র করেই। প্রতিটি হাতেই মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা ডলার সংকট ছাড়াও প্রতিনিয়ত নানা ছলচাতুরির মাধ্যমে কাগজের দাম বাড়ানো হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, ২০২২ সালের বইমেলায় যে কাগজ ১৬০০ টাকা রিম ছিল, এখন সেটা ৩৫০০ টাকা। যেসব প্রতিষ্ঠান কাগজের বাজার দখল ও নিয়ন্ত্রণ করে, তাদের ব্যবসায়িক বিনিয়োগ ও লভ্যাংশের স্বচ্ছতা পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে মেলানোর দাবি এবং কাগজের দামের সঙ্গে মানের তারতম্য হচ্ছে কি না, তাও যাচাই করতে হবে।
কাগজের দাম বাড়ায় অমর একুশে বইমেলায় এবার নতুন বই প্রকাশে প্রকাশকেরা অপরাগ হয়ে পড়েছেন বলেও উল্লেখ করে মিলন কান্তি নাথ।
ক্রেতারা বেশি দামে বই কিনবে না এমনটা দাবি করে তিনি বলেন, দুশো টাকার মূল্যের একটি বই, কাগজের দাম বাড়ায় চারশ টাকা করা যাচ্ছে না। এত উচ্চমূল্যের বই বিক্রি করব কাদের কাছে? কারণ বইয়ের সর্বাধিক ক্রেতা নিম্ন ও মধ্যবিত্ত নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে অনেক আগেই ক্রয়ক্ষমতা হারিয়েছে। আর যদি এক বছর নতুন বই প্রকাশ না পায়, তাহলে এর নেতিবাচক প্রভাব আগামী পাঁচ বছরেও সামাল দেওয়া যাবে না।
