খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের মধ্যে সম্প্রতি চরম অবনতি দেখা দিয়েছে। ১৮ ফেব্রুয়ারির ঘটনার পর থেকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষকদের মধ্যে একাধিকবার উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ওইদিন সংঘর্ষের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রো-ভিসিসহ কয়েকজন শিক্ষক লাঞ্ছনার শিকার হন বলে জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ১৮ ফেব্রুয়ারির সংঘর্ষের সময় থেকে শুরু করে অদ্যাবধি কিছু শিক্ষার্থীর হাতে শিক্ষকরা শারীরিক ও মানসিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেন, এসব ঘটনার ফলে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের ভিত্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এরপর রবিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) কুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা ‘কুয়েট ১৯’ নামক ফেসবুক পেজে একটি খোলা চিঠি প্রকাশ করে শিক্ষকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ এবং ক্ষমা প্রার্থনা করেন। চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬টি বিভাগের ছাত্র প্রতিনিধিদের স্বাক্ষর সংযুক্ত ছিল।
চিঠিতে শিক্ষার্থীরা লেখেন,
“আমরা আপনাদের সন্তানতুল্য। আমাদের আচরণে যদি কোনো অসম্মান প্রকাশ পেয়ে থাকে, আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত ও অনুতপ্ত। আমরা আপনাদের পিতৃতুল্য মনে করি এবং আশা করি আপনারা আমাদের ভুলগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।”
তারা আরও আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, কুয়েট আবারও ঐক্য, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং সৌহার্দ্যের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বিশ্বমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে।
চিঠিতে শিক্ষার্থীরা ১৮ ফেব্রুয়ারির ঘটনার পটভূমি ব্যাখ্যা করে জানান,
“কুয়েট ছাত্রদল এবং বহিরাগত সন্ত্রাসী বিএনপি কর্মীদের দ্বারা ক্যাম্পাসে পিস্তল, চাপাতি ও রামদাসহ দেশীয় অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানো হয়। এতে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী ও একজন শিক্ষক আহত হন, যা কুয়েটের ইতিহাসে এক বেদনাদায়ক অধ্যায়।”
তারা অভিযোগ করেন, কিছু স্বার্থান্বেষী মহল এই ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চায়।
শিক্ষার্থীরা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন,
“এই আন্দোলন কখনোই শিক্ষাবিরোধী বা শিক্ষকবিরোধী ছিল না। এটি ছিল সন্ত্রাসবিরোধী, দুর্নীতিবিরোধী এবং একটি রাজনীতিমুক্ত, নিরাপদ শিক্ষাঙ্গন গড়ে তোলার শান্তিপূর্ণ প্রচেষ্টা।”
চিঠির শেষ অংশে, আন্দোলনের সময় যদি কোনো শিক্ষার্থী অসতর্কভাবে এমন কোনো আচরণ করে থাকে যা শিক্ষকদের মনে কষ্ট দিয়েছে, তার জন্য তারা আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেন এবং একটি সুস্থ, সুন্দর, রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস গড়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।