কোরবানির গোশত বণ্টনেরেে ক্ষেত্রে অনেকেই মনে করেন যে, এটা তিন ভাগ করা সুন্নত এবং নিজ পরিবারে গোশত রাখার প্রয়োজন সত্ত্বেও এ বিশ্বাসে অনেকেই তাই করে থাকেন। আসলে বিষয়টি কিন্তু এমন নয়। তিন ভাগে বণ্টন করা মুস্তাহাব বলা হয়েছে। এক ভাগ নিজের জন্য, এক ভাগ আত্মীয়স্বজনের জন্য এবং এক ভাগ গরিব দুস্থদের জন্য।
তবে কোনো পরিবারে যদি সদস্যসংখ্যা বেশি থাকে তাহলে কম বেশি করা যেতে পারে। এমনকি পরবর্তী সময়ের জন্য সংরক্ষণ করা যেতে পারে।
এ প্রসঙ্গে জাবির ইবন আবদুল্লাহ বর্ণিত একটি হাদিসে দেখা যায়, নবীজি সা: তিন দিনের পর কোরবানির গোশত খেতে নিষেধ করেছেন। (অর্থাৎ তিন দিনের পর যেন গোশত অবশিষ্ট না থাকে।) অতঃপর তিনি বলেন, তোমরা খাও, সাদাকা (বিলি) করো ও সংরক্ষণ করো।’ (মালিক : মুয়াত্তা)। পরের বছর সাহাবিরা বললেন, গত বছরের মতো এ বছরও কি তিন দিনের বেশি গোশত রাখা যাবে না? তিনি বললেন, হ্যাঁ, রাখা যাবে। গত বছর দুর্ভিক্ষ ছিল, তাই নিষেধ করা হয়েছে।
অন্য এক হাদিসে দেখা যায় যে, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘আমি তোমাদেরকে তিনটি বিষয় নিষেধ করেছিলাম, এখন আমি সে তিনটি বিষয় সম্পর্কে তোমাদের অনুমতি দিচ্ছি : তোমাদেরকে কবর জিয়ারত থেকে নিষেধ করেছিলাম, এখন তোমরা কবর জিয়ারত করতে পারো। কারণ কবর জিয়ারতে রয়েছে (আখেরাতের) স্মরণ ও উপদেশ। তোমাদেরকে চামড়াজাত পাত্রে পান করা থেকে নিষেধ করেছিলাম, এখন তোমরা যেকোনো পাত্রে পান করতে পারো। তবে নেশাজাতীয় পানীয় পান করবে না। তোমাদেরকে তিন দিনের পর কোরবানির গোশত খেতে নিষেধ করেছিলাম, এখন তোমরা (তিন দিনের পরও) খেতে পারো এবং সফরেও তা থেকে উপকৃত হতে পারো’ (বায়হাকি : আস্সুনানুল কুবরা)।
আবু সাঈদ খুদরি থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘হে মদিনাবাসী! তিন দিনের বেশি কোরবানির গোশত খেও না’ (সংরণ করো না)। তারা রাসূলুল্লাহ সা:-এর কাছে অভিযোগ করলেন যে, আমাদের সন্তান, সেবক-সেবিকা ও সাহায্যকারী রয়েছে। তখন তিনি বললেন, ‘তোমরা খাও, খাওয়াও ও সংরক্ষণ করো’ (প্রাগুক্ত)।
অন্য একটি হাদিস হজরত নাবিশা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, তোমাদেরকে তোমাদের সচ্ছলতা না আসা পর্যন্ত তিন দিনের বেশি কোরবানির গোশত খেতে (সংরক্ষণ) নিষেধ করেছিলাম। আল্লাহ এখন তোমাদের সচ্ছলতা দান করেছেন; অতএব তোমরা খাও, সংরক্ষণ করো এবং সাদাকা (বিলি) করো। মনে রেখ, এ দিনগুলো হলো পানাহার ও আল্লাহকে স্মরণ করার দিন।
হজরত আয়েশাকে এ প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘একবারই মাত্র এমন নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যখন দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল’ (প্রাগুক্ত)। এ দিকে আল্লাহপাক কুরআন কারিমে ইরশাদ করেন, ‘অতঃপর তোমরা তা থেকে আহার করো এবং দুস্থ, অভাবগ্রস্তকে আহার করাও’ ( সূরা হাজ : ২৮)। অন্য স্থানে ইরশাদ করেন, (অনুবাদার্থ), ‘তবে তোমরা তা থেকে আহার করো এবং ধৈর্যশীল অভাবগ্রস্তকে ও অভাবগ্রস্ত ফকিরকে আহার করাও’ ( সূরা হাজ : ৩৬)।
কোরবানির উদ্দেশ্য কিন্তু গোশত খাওয়া নয়। বরং তাকওয়া প্রদর্শনই হচ্ছে কোরবানির উদ্দেশ্য। এ প্রসঙ্গে আল্লাহপাক ইরশাদ করেন (অনুবাদার্থ), ‘আল্লাহর নিকট পৌঁছায় না ওদের (জবাইকৃত কোরবানির পশু) গোশত এবং রক্ত, বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া’ ( সূরা হাজ : ৩৭)।
তাই গরিব, মিসকিন, ফকির ও অভাবগ্রস্তদের বাদ দিয়ে কোরবানির আনন্দ পূর্ণতা পেতে পারে না। অনুরূপ কোরবানির আনন্দ পরিপূর্ণ হতে পারে না আত্মীয়স্বজনকে বাদ দিয়ে। তাই কোরবানির গোশত সংরক্ষণের অনুমতি মানে পুরোটুকু গিলে ফেলা নয়। আবার এর মানে এও নয় যে, পরিবারের সদস্যদের বঞ্চিত করা। এক কথায় বলা যায় কোরবানিদাতাই ঠিক করবেন কতটুকু নিজের জন্য রাখবেন, কতটুকু আত্মীয়স্বজন বা অভাবগ্রস্তদের মাঝে বণ্টন করবেন।
এসআই
প্রকাশক ও সম্পাদক- আলি আবরার । নিরালা, খুলনা থেকে প্রকাশিত