
খুলনার উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষকেরা এখন টেকসই কৃষির পথে নতুন আশার আলো দেখছেন। রাসায়নিক সারের বিকল্প হিসেবে তারা গ্রহণ করছেন “সবুজ সার” বা গ্রিন ম্যানিউর — যা পরিবেশবান্ধব ও কম খরচে কৃষিকাজে বিপ্লব ঘটাচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (DAE) পরামর্শে কৃষকেরা আবারও ফিরে যাচ্ছেন ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতির দিকে— ধৈঞ্চা চাষের মাধ্যমে জমিতে প্রাকৃতিক সার তৈরি করে ধান ফলাচ্ছেন রাসায়নিক সার ছাড়াই। এই পদ্ধতি শুধু মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা করছে না, বরং উৎপাদন ব্যয়ও কমাচ্ছে এবং রাসায়নিক সারের উপর নির্ভরশীলতা হ্রাস করছে।
বটিয়াঘাটা উপজেলার সুরিখালী গ্রামের কৃষক মো. শাহজাহান হোসেন এ বছর ৭০ শতক জমিতে রাসায়নিক সার ছাড়াই আমন ধান চাষ করেছেন। তিনি জানান,
“বোরো ফসল কাটার পর ধৈঞ্চার বীজ বপন করি। প্রায় ৪৫ দিন পর গাছ বড় হলে সেটি জমিতে চাষ করি। রাসায়নিক সার ছাড়াই আমার ধান ভালো হয়েছে— এতে প্রায় ৬-৭ হাজার টাকা সাশ্রয় হয়েছে।”
পাশের গঙ্গারামপুর ও চাকরাখালী গ্রামের কৃষক আব্দুল হামিদ ও হারুন-উর-রশিদ একইভাবে ধৈঞ্চা ব্যবহার করে সফলতা পেয়েছেন।
কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, গ্রিন ম্যানিউর মাটিতে জৈব পদার্থ বৃদ্ধি করে, অণুজীবের কার্যক্রম বাড়ায় এবং নাইট্রোজেন সরবরাহ করে। কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, এক হেক্টর ধৈঞ্চা জমি থেকে ৬০-৮০ কেজি নাইট্রোজেন পাওয়া যায়, যা প্রায় ৪-৫ বস্তা ইউরিয়া সারের সমান।
সফলতা দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে কৃষক আব্দুল হামিদ বলেন,
“প্রথমবার রাসায়নিক সার ছাড়াই ধান ফলিয়েছি, ফলনও ভালো। আগামী বছর সব ১২ বিঘাতে ধৈঞ্চা লাগানোর পরিকল্পনা করেছি।”
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জীবনানন্দ রায় জানান, দীর্ঘদিনের রাসায়নিক সার ব্যবহারে উপকূলীয় অঞ্চলের মাটির উর্বরতা কমে যাচ্ছে।
“আমরা কৃষকদের ধৈঞ্চা চাষে উৎসাহিত করছি। ইতিমধ্যে সুরিখালীতে প্রায় ১১০ বিঘা জমিতে গ্রিন ম্যানিউর চাষ হয়েছে।”
খুলনা অঞ্চলের DAE সূত্রে জানা যায়, ২০২৫ সালে খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও নড়াইল জেলায় প্রায় ৪৭৪ হেক্টর জমিতে ৩,০০০-এরও বেশি কৃষক ধৈঞ্চা চাষ করেছেন, যার মধ্যে প্রায় ৪০০ হেক্টর জমি সরাসরি আমন চাষের আগে গ্রিন ম্যানিউর হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
টেকসই কৃষির এই উদ্যোগ খুলনার কৃষিক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।