
ডুমুরিয়া উপজেলার শরাফপুর ইউনিয়নের ভুলবারিয়া গ্রামের কৃষকরা এখন বাণিজ্যিকভাবে মরুভূমির ফল সাম্মাম চাষ শুরু করেছেন। মিষ্টি স্বাদের এ ফল স্থানীয় বাজারে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
মাছের ঘেরের উপর মাচায় চাষ হওয়া সাম্মাম—যা তরমুজের থেকেও মিষ্টি—কৃষকদের জন্য লাভজনক হয়ে উঠেছে। কৃষকরা জানিয়েছেন, উৎপাদন খরচ তুলনামূলক কম হলেও আয় হচ্ছে চারগুণেরও বেশি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) উৎসাহে তরুণ উদ্যোক্তা মো. শাহিন উদ্দিন গাজী ভুলবারিয়ায় প্রথম সাম্মাম চাষ শুরু করেন। মাছের ঘেরের পাড়ে পরীক্ষামূলকভাবে ফলটির চাষ করে তিনি সফল হন। এরপর ডুমুরিয়া, বটিয়াঘাটা, দাকোপ ও পাইকগাছার কৃষকরাও সাম্মাম চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠেন।
বাহ্যিকভাবে খসখসে খোলযুক্ত সবুজ ছোট কুমড়ার মতো দেখতে এ ফলকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রক মেলন, মাস্ক মেলন, সুইট মেলন বা হানিডিউ নামে ডাকা হয়। সৌদি আরবে এর নাম ‘সাম্মাম’।
শাহিনের মাঠে গেলে দেখা যায়, বাঁশের তৈরি মাচায় লতানো গাছে ঝুলছে অগণিত ফল। তিনি বলেন,
“প্রথমে সন্দেহ হয়েছিল মরুভূমির ফল এখানে হবে কিনা। কিন্তু দুই বিঘা জমিতে ৫০ হাজার টাকা খরচ করে চাষে ভালো ফলন আর দাম পেয়েছি। আগামী বছর আরও বেশি জমিতে চাষ করব।”
তিনি জানান, উপযুক্ত বীজ নির্বাচন ও নভেম্বর-ফেব্রুয়ারির মধ্যে বপন জরুরি। গর্তের দূরত্ব রাখতে হয় ৫-৬ ফুট এবং প্রতিটি গর্তে ২-৩টি চারা রাখা হয়। ৭০-৮০ দিনের মধ্যেই ফল সংগ্রহ করা যায়।
কৃষকদের হিসেবে, প্রতি বিঘায় খরচ হয় ২০-২৫ হাজার টাকা, আর আয় হয় এক লাখ টাকার বেশি। কৃষক মো. গোলাম রাসুল শেখ বলেন,
“শুরুর খরচ কিছুটা বেশি হলেও প্রতি বিঘায় লাভ অনেক বেশি। প্রতিদিনই চাহিদা বাড়ছে।”
ডিএই কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে ডুমুরিয়া, বটিয়াঘাটা, দাকোপ, রূপসা ও তেরোখাদা উপজেলায় সাম্মাম চাষ হচ্ছে। স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি ১৩০-১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এবং ঢাকাসহ বড় শহরে চাহিদা দ্রুত বাড়ছে।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইনসাদ ইবনে আমিন বলেন,
“আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। তারা চাইলে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করা হবে। আগামী মৌসুমে বিনামূল্যে বীজ বিতরণ ও প্রণোদনার কথাও ভাবা হচ্ছে।”
খুলনা অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম ও জেলা উপপরিচালক মো. নাজরুল ইসলাম সম্প্রতি ভুলবারিয়া পরিদর্শন করেন। তারা জানান, কৃষকরা সাম্মামের পাশাপাশি শিম, শসা, তরমুজ ও মিষ্টি কুমড়াও চাষ করছেন।
রফিকুল ইসলাম বলেন, “সাম্মাম পানিতে সমৃদ্ধ, হজমে সহায়ক, দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে, প্রদাহ কমায় এবং ক্যানসার ও হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে। পুষ্টিগুণ ও বাজার চাহিদা বিবেচনায় এটি সম্ভাবনাময় ফসল।”
নাজরুল ইসলাম জানান, এ বছর খুলনায় প্রায় ১৭ হেক্টর জমিতে সাম্মাম চাষ হয়েছে, এর মধ্যে ৫ হেক্টরে ইতিমধ্যেই ফসল তোলা হয়েছে।
“গড়ে প্রতি হেক্টরে ২৪ মেট্রিক টন ফলন পাওয়া যাচ্ছে। মোট উৎপাদন হবে প্রায় ৪০৮ মেট্রিক টন। বাজার ব্যবস্থাপনা উন্নত করা গেলে সাম্মাম খুব শিগগিরই লাভজনক কৃষিখাতে পরিণত হবে।”
কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, খুলনার মাটি ও জলবায়ু সাম্মাম চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। উন্নতমানের বীজ, সঠিক ফসল ব্যবস্থাপনা ও শক্তিশালী বাজার ব্যবস্থার মাধ্যমে এ ফল দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে।