
খরচ কম এবং লাভ বেশি হওয়ায় খুলনার রূপসা উপজেলায় দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সূর্যমুখী চাষ। টিএসবি ইউনিয়নের তিলক গ্রামসহ উপজেলাজুড়ে এবার প্রায় ৭০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে তিলক গ্রামেই আবাদ হয়েছে ১৩ হেক্টর জমিতে।
চাষ, পরিচর্যা, ফসল সংগ্রহ থেকে শুরু করে তেল উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়ায় কৃষকেরা দলবদ্ধ হয়ে কাজ করছেন। এতে করে উৎপাদন যেমন বেড়েছে, তেমনি আয়ও হয়েছে বেশি। ফলে স্থানীয় কৃষকদের নিয়ে গঠিত হয়েছে ‘তিলক সূর্যমুখী ভিলেজ’ নামে একটি কমিটি।
কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় কৃষকদের সংগঠিত করে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশপাশি উন্নতমানের বীজ ও জৈবসার (ভার্মি কম্পোস্ট) সরবরাহ করা হয়েছে সেইসাথে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে আনার পাশপাশি ফসলে পোকামাকড়ের আক্রমণে জৈব বালাইনাশক ব্যবহারে উৎসাহিত করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং সঠিক পরিচর্যার কারণে বিগত বছরগুলোর চেয়ে এবার ফলনও হয়েছে ভালো। প্রকল্পের পক্ষ থেকে আধুনিক তেল সংগ্রহের মেশিন বসানো হওয়ায় কৃষকরা খুশি।
তিলক গ্রামের কৃষক দাউদ আলী বলেন, “‘সূর্যমুখী চাষে ঝুঁকি অনেকটা কম। বিশেষ করে এটি লবণাক্ত এবং তাপসহিষ্ণু হওয়ায় অনেক অনাবাদি জমিতেও এখন সূর্যমুখী চাষ করা সম্ভব। বর্তমানে প্রতি লিটার সূর্যমুখী তেল ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া আমরা এখন সূর্যমুখী তেল খাচ্ছি এবং বিক্রয়ও করছি। তাতে শরীরের কোন সমস্যা দেখা যাচ্ছে না।”
তেল কিনতে আসা ক্রেতা জহির কাজী বলেন, “আমি নিয়মিত এখন এ তেল খাচ্ছি। সয়াবিন তেল খেয়ে গ্যাসসহ নানা রোগে ভুগছিলাম। তাছাড়া চোখের সামনে তেল তৈরী হচ্ছে। ভেজালমুক্ত তেল খেয়ে এখন ভাল আছি।”
স্থানীয় কৃষক ও কমিটির সভাপতি মো. জাহাঙ্গির হোসাইন বলেন, সূর্যমুখী ক্ষেতে অন্যান্য সবজি চাষ করায় কোন সমস্যা নাই। এতে কোনো রোগবালাই কিংবা সমস্যা হলে পরামর্শ করে দ্রুত সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নিতে পারছি। তবে সমন্বিত চাষাবাদে সব কিছু একসঙ্গে করায় একটি বাড়তি শক্তি কাজ করে।
কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় আমরা বীজ থেকে তেল ভাঙ্গানো মেশিন পেয়েছি। ৩৩ শতক জমিতে ৩০০ কেজি বীজ পাওয়া যায়। তাতে ৮০ কেজি তেল এবং ৩০০ কেজি খৈল পাওয়া যায়। লাভ বেশি হওয়ায় এখানকার কৃষকরা দিন দিন সূর্যমুখী চাষে ঝুকছে, বলেন তিনি।
কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবু মুছা বলেন, ‘আগে সূর্যমুখী উৎপাদন করলেও তেল সংগ্রহ এবং বাজারজাত করতে নানামুখী সমস্যায় পড়তে হতো। কৃষক যাতে তাদের চাহিদা অনুযায়ী যে কোনো সময় সূর্যমুখী ভাঙিয়ে তেল সংগ্রহ করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে পারেন, সে জন্য প্রকল্পের পক্ষ থেকেই আধুনিক তেল সংগ্রহের মেশিন বসানো হয়েছে। এতে আমরা সরাসরি সূর্যমুখী বিক্রি না করে নিজেরাই তেল উৎপাদন করে বিক্রি করছি। এক বিঘা জমিতে খরচ হয় ১০/১২ হাজার টাকা আর বিক্রয় হয় ৩০/৩৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া সূর্যমুখী ভাঙানোর পর যে খৈল পাচ্ছি, তা গরুর খাবার হিসেবেও বিক্রয় করছি।
এ ব্যাপারে রূপসা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ তরুন কুমার বালা বলেন, আগে সূর্যমুখী উৎপাদন করলেও তেল সংগ্রহ এবং বাজারজাত করতে নানামুখী সমস্যায় পড়তে হতো কৃষকদের। কৃষক যাতে তাদের চাহিদা অনুযায়ী যে কোনো সময় সূর্যমুখী ভাঙিয়ে তেল সংগ্রহ করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে পারেন, সে জন্য প্রকল্পের পক্ষ থেকেই আধুনিক তেল সংগ্রহের মেশিন বসানো হয়েছে। এতে কৃষক সরাসরি সূর্যমুখী বিক্রি না করে নিজেরাই তেল উৎপাদন করে বিক্রি করছে। সূর্যমুখীর চাষে লাভ হওয়াতে এখানে দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে এর চাষ।”
প্রকাশক ও সম্পাদক- আলি আবরার । নিরালা, খুলনা থেকে প্রকাশিত