
খুলনা বিভাগে ডেঙ্গু পরিস্থিতি দিন দিন উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত এক সপ্তাহে বিভাগের ১০টি জেলায় নতুন করে ১১৭ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, যাদের মধ্যে এখনো ৫৭ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বেশ কিছু রোগীর দেহে দেখা দিচ্ছে নতুন উপসর্গ, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।
২০২৩ সালে খুলনা বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১০ হাজারের বেশি এবং এতে প্রাণ হারান অন্তত ৩৫ জন। সাধারণত আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুর মৌসুম হিসেবে বিবেচিত হলেও, এ বছর জুন-জুলাই মাসেই আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তানজিলা আক্তার বলেন, “জ্বরের পর হঠাৎ শরীর কাঁপতে থাকে, এরপর বমি শুরু হয়। ডাক্তাররা জানিয়েছেন এটা ডেঙ্গু। আগে এমন কখনো হয়নি।”
বাগেরহাটের শরণখোলার কৃষিকাজে নিয়োজিত সোলাইমান মিয়া ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে তিন দিন আগে ভর্তি হয়েছেন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তার বোন জানান, “জ্বর না কমায় পরীক্ষা করালে ডেঙ্গু ধরা পড়ে। পরে খুলনায় নিয়ে আসি।”
একজন রোগীর স্বজন রফিকুল ইসলাম অভিযোগ করেন, “হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা নেই, এতে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে।”
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, এবার ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে জ্বরের পাশাপাশি শরীর ঝাঁকুনি, বমি ও মারাত্মক দুর্বলতার মতো নতুন উপসর্গ বেশি দেখা যাচ্ছে।
খুলনা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, “ডেঙ্গুর এমন বিস্তার সত্ত্বেও সিটি করপোরেশনের কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। মশকনিধন কার্যক্রমও আগের চেয়ে কমে গেছে, হাসপাতালগুলোতেও পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেই।”
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী দিদারুল ইসলাম বলেন, “এ বছর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব আগেভাগেই শুরু হয়েছে এবং রোগীদের মধ্যে নতুন উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, এটি ডেঙ্গু ওয়ান সেরোটাইপ, যেটি নিয়ন্ত্রণে আলাদা পদক্ষেপ দরকার। শুধু লার্ভিসাইড ছিটিয়ে এটি দমন করা সম্ভব নয়।”
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় পরিচালক ডা. মো. মজিবুর রহমান জানান, প্রতিটি জেলায় মশকনিধন কার্যক্রম জোরদার এবং হাসপাতাল প্রস্তুতির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।