
খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট ৮০ কোটি ৬৪ লাখ টাকা রাজস্ব আয় করেছে, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ২.৯৭ শতাংশ বেশি।
যদিও নয়টি প্রধান বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ৪৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকার বকেয়া রয়েছে, তবুও কেসিসি কর্মকর্তারা এ বছরের রাজস্ব আদায়কে ‘রেকর্ড’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
কেসিসির রাজস্ব শাখার তথ্য অনুযায়ী, রাজস্বের বড় অংশ—৫০ কোটি ৪১ লাখ টাকা—এসেছে হোল্ডিং ট্যাক্স, কনজারভেন্সি এবং বিদ্যুৎ খাত থেকে, যা গত বছরের তুলনায় ৪.৫১ শতাংশ বেশি।
অন্যদিকে, এস্টেট শাখা থেকে আয় কমেছে ২.৭৯ শতাংশ, যা দাঁড়িয়েছে ১৭ কোটি ২৬ লাখ টাকায়। তবে ট্রেড লাইসেন্স থেকে রাজস্ব বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে—৯৫.৯২ শতাংশ, মোট ৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। পরিবহন লাইসেন্স থেকে আয় বেড়েছে ২১.৭৭ শতাংশ (৩ কোটি ৮ লাখ টাকা) এবং রান্নাঘর (বাজার) থেকে আয় বেড়েছে ৬.৯৩ শতাংশ (৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা)।
গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কেসিসি মোট ৭৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা রাজস্ব সংগ্রহ করেছিল, যার মধ্যে ৪৫ কোটি ৮৯ লাখ টাকা এসেছিল হোল্ডিং, কনজারভেন্সি ও বিদ্যুৎ থেকে, ২০ কোটি ৫ লাখ টাকা এসেছিল এস্টেট শাখা থেকে, ৫ কোটি ৬২ লাখ টাকা ট্রেড লাইসেন্স থেকে, ২ কোটি ৮৬ লাখ টাকা পরিবহন লাইসেন্স থেকে এবং ৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা রান্নাঘর বাজার থেকে।
২০২৪ সালের জুনে ঘোষিত বাজেটে রাজস্ব লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ৮২ কোটি ৪১ লাখ টাকা, যার মধ্যে হোল্ডিং, কনজারভেন্সি ও বিদ্যুৎ থেকে ৪৫ কোটি, এস্টেট শাখা থেকে ২৩ কোটি ৪১ লাখ, ট্রেড লাইসেন্স থেকে ৬ কোটি ৫০ লাখ, পরিবহন লাইসেন্স থেকে ৩ কোটি ৫০ লাখ এবং রান্নাঘর বাজার থেকে ৪ কোটি টাকা সংগ্রহের পরিকল্পনা ছিল।
কেসিসির রাজস্ব কর্মকর্তা আবদুল মাজেদ জানান, এ বছর লক্ষ্যমাত্রার ৯৭.৮৫ শতাংশ রাজস্ব সংগ্রহ সম্ভব হয়েছে। “আমাদের রাজস্ব আয় গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩ শতাংশ বেড়েছে। আমরা নিজেদের সম্পদ ব্যবহার করে নাগরিক সেবা উন্নত করতে কাজ করছি,” তিনি বলেন।
তিনি আরও জানান, এখনও নয়টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ৪৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে, যার মধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠানই এখন বন্ধ। এর মধ্যে রয়েছে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (২১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা), বাংলাদেশ রেলওয়ে (২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা), বাংলাদেশ নৌবাহিনী (২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা), এবং বন্ধ থাকা ঢাকা ম্যাচ কোম্পানি, সোনালী জুট মিলস, খুলনা হার্ডবোর্ড মিলস, খুলনা নিউজপ্রিন্ট লিমিটেড, অ্যাজাক্স জুট মিলসসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান। খুলনা বিভাগীয় স্টেডিয়ামেরও ৮৩ লাখ টাকার বেশি বকেয়া রয়েছে।
সম্প্রতি বাজেট প্রস্তুতি বৈঠকে কেসিসির প্রশাসক ও খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. ফিরোজ সরকার কর বৃদ্ধি ছাড়াই রাজস্ব বৃদ্ধিকে নতুন মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি অনলাইন হোল্ডিং ট্যাক্স ও ট্রেড লাইসেন্স প্রদানের ব্যবস্থা রাজস্ব বৃদ্ধির পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে বলে জানান।
তিনি বলেন, “আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী নগর সেবার সক্ষমতা বাড়াতে কাজ করছি। নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে হলে রাজস্ব আয় বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।”