
বৈশ্বিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে চলমান সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফসহ চার দাতা সংস্থার কাছে ৬৫০ কোটি ডলার ঋণ চেয়েছে সরকার। স্থানীয় মুদ্রায় যা দাঁড়ায় ৬১ হাজার ৫ শ’ ৫৫ কোটি টাকা।
আইএমএফের কাছ থেকে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ প্রত্যাশা করছে সরকার। এছাড়া বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের কাছে ১০০ কোটি ডলার করে ঋণ চাওয়া হয়েছে। জাইকার কাছেও ঋণ চাওয়া হয়েছে। তবে ঋণের অঙ্ক উল্লেখ করা হয়নি।
বাংলাদেশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে আইএমএফ ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে। তবে কত টাকা ঋণ দেয়া হবে তা সংস্থাটির পক্ষ থেকে জানানো হয়নি।
আইএমএফ বলেছে, এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে দ্রুতই আলোচনা শুরু হবে। সেই ঋণের পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে।
বুধবার এক বিবৃতিতে আইএমএফ বলেছে, সম্ভাব্য অর্থনৈতিক সংকট সামাল দিতে ঋণ চেয়ে বাংলাদেশ যে প্রস্তাব পাঠিয়েছে তা ইতিবাচক হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। আশা করা যায়, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ঋণের জন্য খাত ও অর্থের পরিমাণ চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে।
রেসিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ট্রাস্ট (আরএসটি) ফান্ড থেকে ঋণ চেয়ে বাংলাদেশ চিঠি দেয়ার এক সপ্তাহের মাথায় আইএমএফ তাদের অবস্থান জানাল।
কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকও বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বলেন, সক্ষমতা বিবেচনায় আইএমএফ বাংলাদেশকে ঋণ দিতে রাজি হয়েছে।
চলমান সংকট মোকাবিলায় আইএমএফ থেকে ঋণ নেয়ার কথা জানান প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস। বৃহস্পতিবার সরকারি বার্তা সংস্থা বাসসকে দেয়া এক সাক্ষাতে এ কথা বলেন তিনি।
গত সপ্তাহে ওয়াশিংটনে আইএমএফ কর্তৃপক্ষকে চিঠির পাঠিয়ে ঋণ সহায়তা চান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
অর্থমন্ত্রী অবশ্য প্রথমে সাংবাদিকদের বলেছিলেন যে এখন ঋণ নেবেন না। পরবর্তী সময়ে তিনি মত পাল্টান। তবে ঋণের অঙ্ক কত তা তিনি বলেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আইএমএফের কাচে পাঠানো চিঠির জবাব আমরা এখনও পাইনি। সংস্থাটি সরকারের দেয়া প্রস্তাব পর্যালোচনা করবে। তাদের আরেকটি টিম বাংলাদেশে আসবে। তাদের সঙ্গে নেগোসিয়েশন হবে। তারপর ঋণ পাওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। এসব প্রক্রিয়া শেষ করে ঋণ পেতে সময় লাগবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আইএমএফের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি আমরা এখনও পাইনি।’
আইএমএফের দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ইউক্রেনে যুদ্ধের জের ধরে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, তা সামাল দিতে ইতোমধ্যে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ।
‘সরকার মুদ্রাপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিয়েছে, মুদ্রা বিনিময় হার শিথিল করেছে, কম জরুরি পণ্য এবং জ্বালানি আমদানিতে সাময়িক কড়াকড়ি আরোপ করেছে। বিদ্যুৎ খরচ কমাতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। পাশাপাশি কম জরুরি প্রকল্পে বরাদ্দ স্থগিত করে বেশি জরুরি খাতে ব্যবহারের নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। তারপরও আরও অনেক দেশের মতো বাংলাদেশ সাম্প্রতিক বৈশ্বিক সংকটের কারণে বিভিন্ন অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে।’
আইএমএফ বলছে, ‘তাৎক্ষণিক চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতে পারলেও বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের মতো দীর্ঘমেয়াদি সমস্যাগুলো সঠিকভাবে সামাল দেয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে। কারণ এসব সমস্যা দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি তৈরি করতে পারে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘এ ধরনের ক্ষেত্রে অর্থায়নে সহযোগিতা দিতেই তারা আরএসটি ফান্ড গঠন করেছে এবং বাংলাদেশও এই তহবিল থেকে অর্থ পেতে পারে। আর এই তহবিল থেকে ঋণ পেতে হলে আইএমএফ-সমর্থিত প্রকল্প নিতে হবে।
‘বাংলাদেশের অনুরোধে সাড়া দিতে আইএমএফ প্রস্তুত। আশা করা হচ্ছে, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে বাংলাদেশের জন্যও আরএসটি ফান্ড সচল হয়ে যাবে। আর এই সময়ে আইএমএফ কর্মীরা প্রকল্প চূড়ান্ত করতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা এগিয়ে নেবে।’
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকার বাজেট সহায়তা হিসেবে আইএমএফ ছাড়াও তিনটি সংস্থার কাছে ঋণ চেয়েছে। বিশ্বব্যাংকের কাছে ১০০ কোটি ডলার ঋণ চাওয়া হয়েছে। জাইকার কাছেও ঋণ সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এছাড়া এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের কাছে ১০০ কোটি ডলার ঋণ চাওয়া হয়েছে।
সবমিলে ৬৫০ কোটি ঋণ ডলার সহায়তা চেয়েছে সরকার। স্থানীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ ৬১ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা। অবশ্য এই হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত ডলারের দর হিসাবে। তবে আন্তব্যাংক লেনদেন ও কার্ব মার্কেটে ডলারের দর ধরলে চাহিদা জানানো ঋণের পরিমাণ টাকার অংকে আরও বেশি হবে।
পিএসএন/এমআই