
ফুসফুস মানবদেহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। ধূমপান ও বায়ু দূষণসহ নানা কারণে ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ অবস্থায় জীবন রক্ষায় সুস্থ ফুসফুসের বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
শনিবার (১৫ অক্টোবর) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) এ-ব্লকের শহীদ ডা. মিল্টন হলে বিশ্ব ফুসফুস দিবস-২০২২ উপলক্ষে আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনায় তারা এসব কথা বলেন।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ধূমপানের কারণে ফুসফুসের ক্যান্সারসহ নানা ধরনের রোগের সৃষ্টি হয়। ধূমপান বন্ধে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে হবে। সব সময় মনে রাখতে হবে যে, ‘ধূমপান করব না, নিয়মিত শরীর চর্চা করব।
ভিসি বলেন, ‘সুস্থ ফুসফুসের জন্য বিশুদ্ধ অক্সিজেনের প্রয়োজন। পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ অক্সিজেন নিশ্চিত করতে বেশি করে গাছ লাগাতে হবে। এজন্য বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে আরও বেশি তৎপর হতে হবে। ফুসফুসের রোগ বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। বিশেষত জনগণের স্বাস্থ্যসেবায় কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের স্বার্থে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
এসময় ভবিষ্যতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাডাভেরিক লাং ট্রান্সপ্ল্যান্টের উদ্যোগে নেওয়া হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। একইসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বক্ষব্যাধি বিভাগে স্লিপ এ্যাপনিয়া রোগের পরীক্ষা করা হয়, যা সচেতনতার জন্য মানুষকে জানাতে হবে বলেও জানান অধ্যাপক শারফুদ্দিন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘জীবনের জন্য সুস্থ ফুসফুস কতটা জরুরি তা করোনা মহামারি বিশ্ববাসীকে বুঝিয়ে দিয়েছে। তাই ফুসফুসের যত্ন নিতে হবে। ধূমপান শুধু ফুসফুসের ক্যানসার সৃষ্টি করে না, শরীরের সর্বাংশেই রোগের সৃষ্টি করে। তাই অবশ্যই ধূমপান পরিহার করতে হবে।’
এসময় বর্তমানে দেশের স্বাস্থ্যখাত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে উল্লেখযোগ্য সফলতা লাভ করেছে জানিয়ে বঙ্গবন্ধুই স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নের ভিত্তি গড়ে গেছেন বলে জানান অধ্যাপক এবিএম আব্দুল্লাহ।
গোলটেবিল আলোচনায় সভাপতির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, ফুসফুসের রোগ প্রতিরোধে ধূমপান পরিহার, বায়ুদূষণ প্রতিরোধ এবং সুস্থ, সুন্দর, নির্মল পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। ফুসফুসের রোগ নির্মূলে বা নিয়ন্ত্রণে রাখতে চিকিৎসক নির্দেশিত ওষুধের কোর্স সম্পন্ন করতে হবে। ধূমপান বন্ধে ও ফুসফুসের রোগ প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ‘তামাকমুক্ত দেশ’ গড়ার যে ঘোষণা দিয়েছেন তা বাস্তবায়ন করতে হবে।
ফুসফুস রোগের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ফুসফুসের যত্নের শুরু মাতৃজঠরে থাকায় সময় থেকেই। গর্ভাবস্থায় মায়ের অপুষ্টি, বিভিন্ন সংক্রামক রোগের সংক্রমণ, সময়ের পূর্বে অপরিণত অবস্থায় স্বল্প ওজনের শিশুর জন্মগ্রহণ শিশুর ফুসফুসের বিভিন্ন রোগের কারণ হতে পারে। আবার জন্মের পর মাতৃদুগ্ধ পান নিউমোনিয়া, অ্যাজমাসহ বিভিন্ন রোগের প্রকোপ কমায়। তাই হবু মা এবং নতুন মায়ের যত্ন শিশুর সুস্থ ফুসফুসের পূর্বশর্ত। অন্যদিকে ধূমপায়ী বাবা শুধু তার পরিবারের সদস্যদের জন্যই নয় এমনকি যে শিশুটি এখনও ভূমিষ্ট হয়নি তার জন্যও হুমকি। ধূমপায়ী মায়েদের জন্য এ কথাটি আরও বেশি সত্য।’
ধূমপানের ভয়াবহ পরিণতি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ধূমপান এমন একটি সামাজিক ব্যাধি যা শুধু ফুসফুসের মারাত্মক রোগ যেমন সিওপিডি, ক্যান্সার ইত্যাদিরই প্রধান কারণ নয় বরং ধূমপানের জন্য হৃদরোগ, মস্তিষ্কে স্ট্রোক, উচ্চরক্তচাপসহ আরও বহুরোগের সৃষ্টি হয়। তাই সামাজিকভাবে ধূমপানবিরোধী আন্দোলনকে আরও বেগবান করা এবং ধূমপান বিরোধী আইনের কার্যকরী প্রয়োগ এখন অপরিহার্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
এই চিকিৎসক বলেন, ‘জীবিকার প্রয়োজনে বিভিন্ন ধরনের পেশা আমরা বেছে নিই। তার মধ্যে এমন কিছু পেশা আছে যা ফুসফুসের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। যেমন- পাথর ভাঙা, জাহাজ ভাঙা, ওয়েলডিং, আঁশ ও তুষ জাতীয় উপাদানের সংস্পর্শে থাকা ইত্যাদি। এই পেশার কারণে তৈরি ছোট ছোট ধূলিকণা বা সূক্ষ্ম তন্তু আমাদের ফুসফুসে আটকে বিভিন্ন ধরনের রোগ সৃষ্টি করতে পারে। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, কাজের সময় ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার করলে এই বিপর্যয় হতে রক্ষা পাওয়া সম্ভব-যে ব্যাপারে আমরা মোটেও সচেতন নই। তাই অকুপেশানাল হেলথ্ বা জীবিকাসংক্রান্ত স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আমাদের আরও মনোযোগী হতে হবে।’
এর আগে দিবসটি উপলক্ষে বার্ণঢ্য শোভাযাত্রা, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগ। বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি-ব্লক থেকে শুরু হয়ে সি-ব্লক প্রদক্ষিণ করে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় সি-ব্লকের সামনে পরিবেশ রক্ষাকারী বৃক্ষরোপণ করা হয়।