
খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার কৃষকরা উদ্ভাবনী ট্রেলিস পদ্ধতিতে মৌসুমের বাইরে তরমুজ চাষে সাফল্য পাচ্ছেন। ইতিমধ্যে সেখানকার উৎপাদিত মিষ্টি ও রসালো তরমুজের চালান সিলেটের শ্রীমঙ্গল বাজারে যাচ্ছে।
এই আধুনিক কৃষি পদ্ধতি দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কারণ স্থানীয় কৃষকেরা ভালো দাম পাচ্ছেন এবং এতে তাদের আয় বাড়ছে। শুধু জীবিকা নয়, এ সফলতা দক্ষিণাঞ্চলে নতুন কৃষি ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনারও দ্বার খুলছে।
স্থানীয়দের মতে, নলঘোনা বিলসহ ডুমুরিয়ার বিভিন্ন স্থানে কৃষকেরা পানিবদ্ধ জমি ব্যবহার করে মাছের ঘেরে ট্রেলিস পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ করছেন। এ পদ্ধতিতে একই সঙ্গে ঘেরের চারপাশের আইলে শাকসবজি এবং পানিতে মাছ চাষের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ও উন্নত ব্যবস্থাপনার কারণে প্রতিকূল পরিবেশেও ডুমুরিয়ার কৃষকেরা মানসম্মত তরমুজ উৎপাদন করছেন।
এই তরমুজের বৈশিষ্ট্য হলো – মিষ্টি স্বাদ, উজ্জ্বল লাল গুঁড়ি ও গড়ে ৪-৫ কেজি ওজন। স্বাদ, পুষ্টিগুণ ও আকর্ষণীয় রঙের কারণে এগুলো স্থানীয় বাজার ছাড়িয়ে বাইরের বাজারেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
চলতি মৌসুমে ডুমুরিয়া, রাজীবপুর দক্ষিণমহল, রাজাপুর, মইখালি, ঘোনাবাঁদা, উলা, টালটোলা, লোহিডাঙা ও কাটাখালি গ্রামের প্রায় ৪০০-৫০০ কৃষক তরমুজ চাষে যুক্ত হয়েছেন।
যদিও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে কিছু ফসল ক্ষতি হয়েছে, তবুও কৃষকেরা আশাবাদী। প্রতি বিঘায় গড়ে ২০-২৫ হাজার টাকা লাভের আশা করছেন। দক্ষিণ ডুমুরিয়ার বিশাল বিলজুড়ে এখন ট্রেলিসভিত্তিক তরমুজ খামার দেখা যাচ্ছে।
আজ রবিবার রাজীবপুর দক্ষিণমহলের টালটোলা এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, নলঘোনা বিল থেকে ট্রাকে তরমুজ তোলা হচ্ছে। কৃষকেরা ব্যস্ত ছিলেন চালান প্রেরণের কাজে।
প্রথমবারের মতো তরমুজ চাষ করা কৃষক মো. মোহাম্মদ আলী জানান, তিনি ২.৫ বিঘা জমিতে ২৮০ গর্তে ৫৬০টি চারা রোপণ করেছিলেন।
তিনি বলেন, “শুরুর দিকে বাজারদর ছিল কেজি প্রতি ৫০-৫৫ টাকা। এখন তা কিছুটা কমে ৩৬-৩৭ টাকায় নেমে এসেছে। তারপরও ভালো লাভের আশা করছি।”
অন্য কৃষক আবুল কালাম শেখ, যিনি দুই একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন, বলেন, “প্রতি তরমুজের ওজন ৪-৫ কেজির মতো। বাজারে চাহিদা ভালো, লাভও হবে আশা করছি।”
তরমুজ ব্যবসায়ী হালিম গাজী ও হাফিজুর রহমান জানান, পরিবহন খরচ বেশি হলেও তারা শ্রীমঙ্গলেই বিক্রি করতে পছন্দ করেন। কারণ, স্থানীয় বাজারের তুলনায় ওখানে চাহিদা অনেক বেশি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইনসাদ ইবনে আমিন জানান, এ বছর ডুমুরিয়ায় ২৩০ হেক্টর জমিতে মৌসুমের বাইরে তরমুজ চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে গড় উৎপাদন ৪০-৪৫ মেট্রিক টন।
প্রধান চাষ এলাকা হলো নলঘোনা, কুলবারিয়া, খুটোখালি, শোভনা, আটলিয়া, পাটিবুনিয়া ও দক্ষিণ ডুমুরিয়ার অন্যান্য অংশ।
তিনি আরও বলেন, “মৌসুমের বাইরে তরমুজ চাষের সাফল্য জলবায়ু-স্মার্ট সমন্বিত কৃষি চর্চায় কৃষকদের আরও উৎসাহিত করছে।”