
টেস্ট অধিনায়ক, টি-টোয়েন্টিতে সহ-অধিনায়ক, আর এখন ওয়ানডেতেও নেতৃত্ব দিচ্ছেন- শুভমান গিল যেন এখন ভারতের সর্বাঙ্গীন ক্রিকেটের মুখপাত্র। তিন ফরম্যাটেই নেতৃত্বের দায়িত্ব কাঁধে নেওয়া যে সহজ নয়, সেটা গিল জানেন। মানসিক চাপ, প্রত্যাশার বোঝা- সবই আছে; তবু তিনি প্রস্তুত, কারণ লক্ষ্য তার বড়। আর তা হল সব ফরম্যাটে সাফল্য আর আইসিসি শিরোপা জয়।
ভারতের হয়ে তিন ফরম্যাটে খেললে চাপ নিতেই হবে গিলকে। আর মানসিক এবং শারীরিক দুই ধরনের চাপ নিতেই প্রস্তুত বলে জানিয়ে গিল বলেন, “শারীরিকভাবে বেশিরভাগ সময় ভালোই লাগে, তবে কখনো কখনো মানসিক ক্লান্তি আসে। কারণ নিয়মিত খেললে নিজের কাছ থেকেই একটা প্রত্যাশা তৈরি হয়, আর সেই মান ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু এটিই চ্যালেঞ্জ- ভারতের হয়ে তিন ফরম্যাটে খেলতে হলে এটিই সামলাতে হবে। আমি চাই সব ফরম্যাটে সফল হতে এবং দেশের জন্য আইসিসি শিরোপা জিততে। তাই যদি সেটা চাই, তবে এই পথটাই আমাকে পাড়ি দিতে হবে।”
গিল ওয়ানডে দলে অধিনায়ক হিসেবে রোহিত শর্মার জায়গা নিয়েছেন। আসন্ন অস্ট্রেলিয়া সফরে তিনটি ওয়ানডেতে তিনি নেতৃত্ব দেবেন রোহিত ও বিরাট কোহলির মতো দুই সাবেক অধিনায়ককেও। দুজনই এখন ত্রিশের শেষ প্রান্তে, টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিয়েছেন। ফলে দুই বছর পরের ওয়ানডে বিশ্বকাপ ঘিরে তাদের ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
তবে গিল তাদের ভূমিকা নিয়ে আশাবাদী। তিনি বলেন, “অবশ্যই তারা গুরুত্বপূর্ণ। রোহিত ভাই আর বিরাট ভাইয়ের অভিজ্ঞতা অমূল্য। ভারতের হয়ে যত ম্যাচ তারা জিতেছেন, তার সঙ্গে তুলনীয় খেলোয়াড় খুব কমই আছে। তাদের অভিজ্ঞতা ও মান একসঙ্গে পাওয়া বিরল বিষয়, আমরা সেটাকেই মূল্য দিই।”
গত পাঁচ মাসে শুভমান গিলের ক্রিকেটীয় উত্থান প্রায় চলচ্চিত্রের মতো। মে মাসে টেস্ট অধিনায়ক হওয়ার পর ইংল্যান্ড সফরে তিনি ৭৫.৪০ গড়ে ৭৫৪ রান করেন। দ্বিপাক্ষিক সিরিজে কোনো ভারতীয় ব্যাটারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ওয়ানডে নেতৃত্ব পাওয়ার পর তিনি বলেন, “এই দায়িত্বটা আমার জন্য অনেক বড় সম্মান। গত কয়েক মাস ছিল দারুণ উত্তেজনাপূর্ণ, তবে এখন আমি ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে চাই। যতটা সম্ভব বর্তমানেই থাকতে চাই, আগের অর্জনগুলো পেছনে ফেলতে চাই। সামনে যা আছে, সব জিততেই নামব।”
রোহিত শর্মার কাছ থেকে পাওয়া গুণগুলোর মধ্যে গিল বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন দুইটি বিষয়। “রোহিত ভাইয়ের শান্ত স্বভাব এবং দলের ভেতরে তার যে বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করার ক্ষমতা, এই দুটি গুণ আমি নিজের মধ্যে রাখতে চাই।”
লাল বল ও সাদা বলের ক্রিকেটে নেতৃত্বের পার্থক্য নিয়ে গিল বলেন, টেস্ট ক্রিকেটই সবচেয়ে বড় পরীক্ষা। ইংল্যান্ডে প্রথম টেস্ট সিরিজে ভারত ২-২ ব্যবধানে ড্র করেছিল, যেখানে কয়েকটি সেশন হাতছাড়া না হলে ফল অন্যরকমও হতে পারত। গিলের ভাষায়, “টেস্ট ম্যাচে সাধারণত ভালো দলই জেতে, কারণ এখানে ফিরে আসার সুযোগ বেশি থাকে। কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে ৩-৪ ওভার খারাপ খেললেই ম্যাচ হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। টেস্টে জিততে হলে পাঁচ দিন ধরেই ভালো খেলতে হয়- এটাই সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ।”
তিনি আরও যোগ করেন, “টি-টোয়েন্টিতে যদি শুরুটা ভালো হয়, তাহলে পুরো ম্যাচে আধিপত্য রাখা সম্ভব। কিন্তু টেস্টে প্রথম দুই দিন দারুণ খেলেও যদি তৃতীয় দিনে ছন্দ হারিয়ে ফেলো, বিপক্ষ দল ফিরে আসতে পারে। তাই পাঁচ দিন জুড়ে মান ধরে রাখাটাই এখানে সবচেয়ে বড় ব্যাপার।”