প্রিয়নবীজির পাশে থাকা অনেক বড় সৌভাগ্যের বিষয়। নবীপ্রেমিকরা স্বভাবতই তাঁর সঙ্গ পাওয়ার অধীর বাসনা ও কামনা হৃদয়ে লালন করেন। যদিও সাহাবায়ে কেরামের পর নবীজিকে এক পলক দেখার সৌভাগ্য কারো হবে না। কিন্তু পরকালে নবীজির সান্নিধ্য ও তাঁর পাশে থাকার সৌভাগ্য লাভ হবে—এমন কতক ভাগ্যবান মানুষের কথা হাদিসে পাওয়া যায়। বিশেষ করে যারা নবীজির খুব কাছে থাকবেন, তাদের সাত শ্রেণি হাদিসের আলোকে এখানে তুলে ধরা হলো—
১. কন্যাসন্তানের ভরণপোষণকারী
হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) বর্ণনা করেন, একদিন রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, যে ব্যক্তি দুটি কন্যাসন্তানের ভরণপোষণ করবে আমি এবং সে এভাবে জান্নাতে থাকব। (মধ্যমা ও শাহাদাত আঙুল যেমন পাশাপাশি থাকে)। (সুনানে তিরমিজি: ১৯১৪)
২. এতিম প্রতিপালনকারী
হজরত সাহাল বিন সাদ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, আমি ও এতিম প্রতিপালনকারী জান্নাতে এভাবে থাকব (তিনি তর্জনী ও মধ্যমা অঙ্গুলি দিয়ে ইঙ্গিত করেন এবং এই দুটির মধ্যে তিনি সামান্য ফাঁক রাখেন)। (সহিহ বুখারি: ৫৩০৪)
৩. বেশি বেশি দরুদ পাঠকারী
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন ওই ব্যক্তি আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী হবে, যে আমার ওপর সবচেয়ে বেশি দরুদ পড়েছে। (তিরমিজি: ১/১১০)
৪. বোনদের প্রতিপালনকারী
হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) বর্ণনা করেন, একবার রাসুলুল্লাহ (স.) মধ্যমা ও শাহাদাত অঙ্গুলির দিকে ইশারা করে বলেন, যে ব্যক্তি দুই কন্যা বা দুই বোনের ভরণপোষণ করবে কিংবা তিন কন্যা বা তিন বোনের ভরণপোষণ করবে, যতক্ষণ না তাদের বিয়ে হবে কিংবা সে মৃত্যুবরণ করবে, আমি এবং সে জান্নাতে এভাবে (পাশাপাশি) থাকব। (ইবনে হিব্বান: ৪৪৭)
৫. উত্তম চরিত্রের অধিকারী
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন, আমি কি তোমাদের ওই ব্যক্তি সম্পর্কে অবগত করব না, যে কেয়ামতের দিন আমার সবচেয়ে প্রিয় এবং সর্বাধিক নিকটবর্তী হবে? সাহাবায়ে কেরাম চুপ রইলেন। রাসুল (স.) একই প্রশ্ন করলেন দুই বা তিনবার। তখন তাঁরা বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! অবশ্যই বলুন। তিনি বললেন, সে হলো ওই ব্যক্তি, যার চরিত্র সবচেয়ে সুন্দর। (মুসনাদে আহমদ: ৬৭৩৫)
৬. যার আচরণ বেশি সুন্দর
হজরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তির চরিত্র ও আচরণ সর্বোত্তম সেই আমার কাছে সর্বাধিক প্রিয় এবং কেয়ামত দিনেও আমার খুবই নিকটে থাকবে। তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি আমার কাছে সবচেয়ে বেশি ঘৃণ্য সে ব্যক্তি কেয়ামতের দিন আমার কাছ থেকে বহু দূরে থাকবে তারা হলো—বাচাল, ধৃষ্ট-নির্লজ্জ ও অহংকারে মত্ত ব্যক্তিরা।’ (সুনানে তিরমিজি: ২০১৮)
৭. তাকওয়াবান ব্যক্তি
হজরত মুয়াজ (রা.)-কে ইয়েমেনে পাঠানোর সময় রাসুলুল্লাহ (স.) তাকে বললেন, হে মুয়াজ! সম্ভবত এই বছরের পর আমার সঙ্গে তোমার আর দেখা হবে না। হয়ত তুমি আমার মসজিদের পাশ দিয়ে হাঁটবে, আমার কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করবে! (কিন্তু আমার দেখা পাবে না) এই কথা শুনে রাসুলুল্লাহ (স.) এর আসন্ন বিচ্ছেদ-বিরহে মুয়াজ (রা.) অঝোরে কাঁদতে শুরু করলেন। এরপর রাসুলুল্লাহ (স.) মদিনার দিকে ফিরে তাকালেন এবং বললেন, আমার পরিবারের এই লোকেরা মনে করে, তারা আমার সবচেয়ে কাছের মানুষ। অথচ বিষয়টা এমন না; আমার সর্বাধিক নৈকট্যপ্রাপ্ত হলো ওই ব্যক্তি, যে আল্লাহভীতির জীবন অবলম্বন করে। সে যে কেউই হোক এবং যেখানেই অবস্থান করুক। (মুসনাদে আহমদ: ২২০৫২)
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে প্রিয়নবীর কাছাকাছি থাকার জন্য উল্লেখিত সবগুলো গুণে গুণান্বিত হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।