‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর/ অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর’— জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতার এই দুটো লাইনই বোঝায় নারী আর পুরুষ দুই মিলেই সৃষ্টি করেছেন পৃথিবীর কল্যাণকর সবকিছু। নারী যে বিশেষ তা বোঝাতে নারী দিবস পালন করা হয়। পুরুষের জন্যও কিন্তু এমন একটি বিশেষ দিন রয়েছে। আজ (শনিবার) ১৯ নভেম্বর বিশ্ব পুরুষ দিবস।
নারীর পাশাপাশি পুরুষকে রোজকার জীবনে অনেক চাপ সামলে চলতে হয়। অফিসের কাজ, পরিবারের দায়িত্ব, সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়া সব নিয়েই ভাবতে হয় তাদের। এসব সামলেও তারা হাসিমুখে থাকেন। আনন্দে রাখেন অন্যদের। আমাদের চারপাশে থাকা এমন পুরুষরাই সত্যিকারের পুরুষ।
আজকের দিনটি পুরুষের জন্য বিশেষ। বিশ্বজুড়ে পুরুষ দিবস পালনের বেশকিছু কারণও রয়েছে। দিবসটির মূল উদ্দেশ্য হলো আদর্শ পুরুষদের কথা আরও বেশি করে সবাইকে জানানো। পরিবারের খেয়াল রাখে, কাজে পরিশ্রমী এমন পুরুষরা আমাদের রোল মডেল। তাদের গল্প সবাইকে বলাই দিনটির মূল লক্ষ্য।
পুরুষদের রোজকার জীবনে অনেক দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যে রয়েছে বাড়ির সদস্যদের খেয়াল রাখা, শিশুর যত্ন নেওয়া, তাদের পড়াশোনার দায়িত্ব নেওয়া কিংবা বড় করে তোলা। সেসঙ্গে রয়েছে জীবনসঙ্গী এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ভালো থাকা নিশ্চিতের ভার। সমাজের প্রতিটি পুরুষের দায়িত্বের কথা মনে করিয়ে দেওয়ার দিন এটি। একজন পুরুষ হাসিমুখে সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন। বলা যায় দায়িত্বের ধারক তারা।
দিবসটির শুরু হয়েছিল কবে? পুরুষের জন্য একটি বিশেষ দিন উদযাপনের কথা অনেক আগে থেকে উঠেছিল। ১৯৬০ সালে এমন একটি দিন পালনের কথা অনেকেই জানাতে শুরু করেন। বিশ্ব নারী দিবস পালন করা শুরু হলে এই দাবি আরও জোরালো হয়।
এই দিবসটি প্রথম পালন করা শুরু করেন থমাস ওস্টার। ১৯৯২ সালে প্রথম এই দিনটি পালন করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৯ সাল থেকে দিনটি ১৯ নভেম্বর পালন করা শুরু হয়।
এর পিছনে প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন ত্রিনিদাদ এবং টোবাগোতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক ড. জেরোমে টিলুকসিং। তিনি তার পিতার জন্মবার্ষিকী স্মরণে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস উদযাপন করেন। পুরুষের উদ্বেগের বিষয়গুলোকে সবার সামনে আনতেই এই দিনটিকে ব্যবহারের জন্য সবাইকে উৎসাহিত করেন তিনি।
৬টি স্তম্ভের ওপর ভিত্তি করে আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস পালিত হয়। কর্মক্ষেত্রে অবদানের পাশাপাশি সমাজ, সম্প্রদায়, পরিবার, বিবাহ, শিশু যত্ন এবং পরিবেশে পুরুষদের অবদান উদযাপিত হয় দিবসটি। বিবেচনায় রাখা হয় পুরুষের সামাজিক, মানসিক, শারীরিক সুস্থতার যত্ন নেওয়ার বিষয়টিও।
কেবল নারী নয়, সমাজে অনেক পুরুষও বৈষম্যের শিকার হন। তাদের জীবনেও কষ্টের অনুভূতি থাকে। পৃথিবীর সব পুরুষের দায়িত্বের কথা শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করার দিন আজ। পুরুষ দিবস সমতার কথা বলে। ঐক্যের কথা বলে।
