প্রবাসে কর্মরত বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকদের মৃত্যুর সংখ্যা নতুন রেকর্ড ছুঁয়েছে। চলতি বছরে ৪ হাজার ৮১৩টি মৃতদেহ দেশে ফেরত এসেছে, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ৫.৭ শতাংশ বেশি। বিভিন্ন দেশে কাজ করতে যাওয়া কর্মীদের মধ্যে প্রবাসে যারা মারা যান, তাদের মধ্যে ৩১ শতাংশের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ১৬ শতাংশের মৃত্যু হয় দুর্ঘটনায়। আর ১৫ শতাংশ আত্মহত্যা করেন। ২৮ শতাংশের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়। বাকিরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশ ও অভিবাসন খাতের বেসরকারি গবেষণা সংস্থা রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিট (রামরু)-এর এক সাম্প্রতিক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে।
বৃহস্পতিবার (২৯ মে) ঢাকায় আয়োজিত এক সংলাপে এ তথ্য জানায় সংস্থাটি। ২০১৭ থেকে ২০২১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ৫৫৪ জন মৃত প্রবাসীর তথ্য বিশ্লেষণ করে বলা হয়, প্রবাসে মারা যাওয়া বাংলাদেশি কর্মীদের গড় বয়স ৩৭ বছর।
সংলাপে উপস্থাপন করা নিবন্ধে আরও বলা হয়, গত ১২ বছরে প্রবাসে ৪০ হাজার ৭১৩ কর্মীর মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ২০২৪ সালে দেশে এসেছে ৪ হাজার ৮১৩ কর্মীর মৃতদেহ। এত অল্প বয়সে মৃত্যুর বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার। বিদেশে যাওয়ার আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেই তাঁদের পাঠানো হয়। তাঁরা সেখানে গিয়ে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। প্রবাসের মৃতদেহের সঙ্গে পাঠানো মৃত্যুসনদ যাচাইয়ে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ময়নাতদন্ত করা হয় না। অথচ স্বাভাবিক মৃত্যু বলে পাঠানো অনেক মৃতদেহে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। মৃত প্রবাসী কর্মীদের পরিবারের মধ্যে ৪৮ শতাংশ মৃত্যুসনদে থাকা কারণ বিশ্বাস করে না। তাই মৃতদেহ দেশে আসার পর ময়নাতদন্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে নিবন্ধে।
এছাড়া মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়াতেও রয়েছে নানা জটিলতা ও অসংবেদনশীলতা। প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকার বিমানবন্দরে মরদেহ ব্যবস্থাপনায় অমানবিকতা ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ রয়েছে। মরদেহ গ্রহণে ৮০ শতাংশ পরিবারকে ভোগান্তির শিকার হতে হয় প্রশাসনিক জটিলতায়।
রামরুর ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, ‘প্রতিনিয়ত এত মানুষ মারা যাচ্ছেন, অথচ সরকার এই মৃত্যুদের পেছনের প্রকৃত কারণ যাচাই করছে না। ময়নাতদন্তের কোনো উদ্যোগ নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেক সময় মৃতদেহে স্পষ্ট আঘাতের চিহ্ন থাকার পরও মৃত্যুর সনদে তাকে ‘স্বাভাবিক মৃত্যু’ বলে উল্লেখ করা হয়, যা প্রশ্নবিদ্ধ।’
গবেষণা অনুযায়ী, বেশিরভাগ মৃত্যু কর্মজীবনের প্রাথমিক পর্যায়েই ঘটছে। এই প্রবণতা উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।