
কিংবদন্তি জিনেদিন জিদানের ডাকে সাড়া দিয়ে ১২ বছর আগে রিয়াল মাদ্রিদের আঙিনায় ট্রেনিং করতে এসেছিলেন। সেই সময় ফরাসি তারকা জিদান ছাড়া কিলিয়ান এমবাপ্পেকে আর কেউই চিনতেন না। ট্রেনিং করতে গিয়ে রিয়ালের তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর সঙ্গে ছবি তুলেছিলেন, যাঁকে নিজের ‘আইডল’ মানেন তিনি। মাদ্রিদের শহরে জিদানের গাড়িতে করে ঘুরেছিলেন।
এক যুগ পর আবারও যখন সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে পা রেখেছিলেন, তখন ‘এমবাপ্পে’ ‘এমবাপ্পে’ স্লোগানে মুখরিত স্টেডিয়াম। ৭৫ হাজার দর্শকের সামনে ফরাসি তারকাকে পরিচয় করিয়ে দেন রিয়াল মাদ্রিদের কর্তারা। মঙ্গলবার সকালে মেডিকেলের পর এ ফরোয়ার্ডের হাতে নাম্বার নাইন জার্সি তুলে দেন ক্লাবটির সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ। যার পেছনে ছিল রিয়ালের জয়ী ১৫টি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি।
সেই আনুষ্ঠানিকতার পর বার্নাব্যুর টানেল সবুজ গালিচায় প্রবেশ করতেই পুরো স্টেডিয়াম মুখরিত হয়ে ওঠে স্লোগানে স্লোগানে। যিনি এই আঙিনায় এনেছিলেন, সেই জিদানও উপস্থিত ছিলেন এমবাপ্পে বরণ অনুষ্ঠানে। দর্শকদের স্লোগানের মধ্যেই ফুটবল নিয়ে কিছুটা সময় কারিকুরি করেন প্যারিস সেইন্ট জার্মেইয়ের সাবেক এ ফরোয়ার্ড।
নানা আনুষ্ঠানিকতার পরই রিয়াল মাদ্রিদে আসার স্বপ্নপূরণের উচ্ছ্বাস এভাবেই প্রকাশ করেন এমবাপ্পে, ‘আমি একটু স্প্যানিশ বলার চেষ্টা করছি। অনেক বছর ধরেই আমার স্বপ্ন ছিল রিয়াল মাদ্রিদে খেলার, আজ (বুধবার) সেই স্বপ্ন সত্যি হয়েছে। আমি একজন সুখী মানুষ। এই ক্লাবের জন্য জানবাজি রেখে খেলব।’
১৫ আগস্ট উয়েফা সুপারকাপের ফাইনালে আটালান্টার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে রিয়ালের হয়ে অভিষেক হতে পারে এমবাপ্পের। স্প্যানিশরা ভাসছে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জয়ের আনন্দে। মঙ্গলবারই মাদ্রিদের সিবেলসে চ্যাম্পিয়ন হওয়া স্পেন দলকে বীরোচিত সংবর্ধনা দিয়েছেন দেশটির ফুটবলপ্রেমীরা। একই শহরে কয়েক ঘণ্টা পরই রিয়ালের এমবাপ্পে বরণে বাড়তি উন্মাদনা যোগ হয়েছে স্প্যানিশদের মধ্যে। অথচ এই এমবাপ্পেকে পেতে অনেক টানাপোড়েনে পড়তে হয়েছিল লস ব্লাঙ্কোসদের। নানা নাটকীয়তার পর গত জুনে এই ফরোয়ার্ডের সঙ্গে পাঁচ বছরের চুক্তি করে মাদ্রিদ।
২০২৯ সাল পর্যন্ত রিয়ালের সঙ্গে চুক্তি করা এমবাপ্পের প্রতিবছর কর ছাড়া পারিশ্রমিক ১৫ মিলিয়ন ইউরো। রিয়াল মাদ্রিদের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক খেলোয়াড় এখন তিনি। তবে এই ক্লাবে খেলার জন্য পিএসজিতে পাওয়া পারিশ্রমিকের (৭০ মিলিয়ন) চার গুণেরও কমে রাজি হয়েছিলেন। তাই তো এই ক্লাবে আসতে কতটা কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে, সেটাও উঠে এসেছে এমবাপ্পের কণ্ঠে, ‘রিয়াল প্রেসিডেন্ট ও যারা আমাকে আনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন, সবাইকে ধন্যবাদ। আমার আসার প্রক্রিয়া কঠিন ছিল; কিন্তু এখন রিয়াল মাদ্রিদের খেলোয়াড়। আমার মতো আমার পরিবারও খুব খুশি।’
কথা শেষ না করতেই গ্যালারি থেকে সমর্থকদের গর্জন ওঠে, ‘ব্যাজে চুম্বন করো’। সঙ্গে সঙ্গে জার্সিতে থাকা ক্লাবের ব্যাজে চুম্বন করেন তিনি, ‘এখন আমার স্বপ্ন রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে জেতা। আশা করি এই ক্লাবের হয়ে ইতিহাস লিখব। আমি শিশুদের বলতে চাই, তোমাদের মতোই ছিলাম আমি। তোমাদের মতোই একটা স্বপ্ন ছিল এবং স্বপ্নকে সত্যি করতে পেরেছি। আজ আমি এখানে, সামনে তোমাদের মধ্যে কেউ এখানে আসবে।’
ফ্রান্সের হয়ে বিশ্বকাপ জিতেছেন, পিএসজির জার্সিতে লিগ ওয়ান জিতেছেন। এমবাপ্পের জন্য এখনও অধরা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। সেই লক্ষ্য নিয়ে বেশি কিছু বলেননি এমবাপ্পে, ‘আমি খুবই শিহরিত। আসলেই রোমাঞ্চিত, খুব বেশি আবেগাপ্লুত। স্বপ্নের ক্লাব ও ফুটবল ইতিহাসের সেরা ক্লাবে আসতে পেরে আমি সত্যিই ভীষণ খুশি। এই মুহূর্তে এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে চাই না। আরও বলতে গেলে আমি কেঁদে দেব। কিন্তু আমি আরেকটা জিনিস করতে চাই..।’ সেটা যে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়, তা বুঝতে বাকি ছিল না দর্শকদের।
এমবাপ্পে যোগ দেওয়ায় রিয়াল মাদ্রিদের আক্রমণ ভাগের শক্তি আরও বেড়েছে। কোচ কার্লো আনচেলত্তিকে একাদশ সাজাতে গিয়ে অনেক চিন্তা করতে হবে। আগে থেকেই থাকা ইংল্যান্ডের মিডফিল্ডার জুড বেলিংহাম এবং ব্রাজিলের অ্যাটাকার ভিনিসিয়ুস জুনিয়ার আছেন দারুণ ছন্দে।