যুদ্ধ মানবসভ্যতার জন্য এক অভিশাপ। শান্তির বিপরীত শব্দ হয়ে এই যুদ্ধ রক্তাক্ত করে পৃথিবীকে। শুধু আজকের দিনে নয়, বহু আগে থেকে ক্ষমতাসীনদের ইচ্ছায় পরিচালিত হয়ে আসছে এই খুনে প্রক্রিয়া। এতে ব্যবহৃত হন যোদ্ধারা। তাদের ইচ্ছা মতোন ব্যবহার করা হয় ঊর্ধ্বতনদের নির্দেশে। অঞ্জন দত্ত সেই কবেই তো গেয়েছিলেন, “যাচ্ছে সৈন্যদের যুদ্ধটা করানো”।
এই যোদ্ধাদের পোশাক সাধারণের মতো নয়। যুদ্ধকালীন সময়ে তাদের পরতে হয় বিশেষ ধরনের পোশাক। এটিই তাদের ইউনিফর্ম। এই ইউনিফর্ম বদলেছে যুগে যুগে। এই লেখায় বর্ণিত হবে দুনিয়ার সবচেয়ে আগ্রাসী সেনাবাহিনী হিসেবে পরিচিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর যুদ্ধ পোশাকের রূপান্তর। অস্ত্রে তারা এগিয়ে। দেশে দেশে আগ্রাসনে তাদের অবস্থান শীর্ষে। সময় আর যুদ্ধ কৌশলের প্রয়োজনে বারবার বদলেছে এ বাহিনীর পোশাক।
১৭৭৬ সালে ইংরেজদের কাছ থেকে স্বাধীন হওয়ার যুদ্ধে প্রথম ইউনিফর্ম ব্যবহার করে মার্কিন সেনাবাহিনী। সেই যুদ্ধ পোশাক এক রকম থাকেনি। আগের দিনের আলোকচিত্র ও হাতে আঁকা ছবি এর সাক্ষ্য বহন করে।
১৭৭৬ সালে মার্কিন সেনাবাহিনীর পোশাক সংগৃহীত
১৭৭৬ সালের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা যুদ্ধে মার্কিন সেনাবাহিনীর পোশাক ছিল ইংরেজ বাহিনীর আদলে তৈরি। শরীরের ওপরের অঙ্গে ছিল নীল রঙের পোশাক। সঙ্গে ছিল নিচে সাদা ট্রাউজার।
১৮১২ সালের যুদ্ধে মার্কিন সেনাবাহিনীকে দেখা যায় ভিন্ন সাজে। সে সময়ের ইউনিফর্ম ছিল কালো বিশেষ ধরনের হ্যাট। নীল রঙের ওয়েইস্ট কোট। যার সামনে বোতাম। সঙ্গে সাদা ট্রাউজার। সে কোটটি ছিল উলের তৈরি। কখনো নীল ছাড়া ধূসর রঙের কোটও পরিধান করতো সেনা সদস্যরা।
সংগৃহীত
মেক্সিকান আমেরিকান যুদ্ধে ১৮৪৫ সালে আবার বদলায় মার্কিন বাহিনীর পোশাক। সেসময় মাথায় রাউন্ড হ্যাট যুক্ত হয়। এটিও ছিল উলের তৈরি। ট্রাউজারে ছিল স্ট্রাইপ। হাতেও হলুদ রঙের ব্যবহার ছিল। এটি দিয়ে একজন যোদ্ধার আর্মিতে র্যাংক বা পদবী চিহ্নিত হতো।
১৮৬১ সালের গৃহযুদ্ধে আবার বদলায় এ বাহিনীর পোশাক। সে সময় যুদ্ধ হতো ঘোড়ার পিঠে চড়ে। পোশাক নির্বাচনে এ বিষয়টি মাথায় রাখা হয়।
সংগৃহীত
এরপর চলে স্প্যানিশ আমেরিকান যুদ্ধ। এ যুদ্ধ শুরু হয় ১৮৯৮ সালে। এখানেও মার্কিন সেনাবাহিনীর পোশাক বদলে যায়। খাকি রঙ প্রাধান্য পায় এতে। উলের বদলে পোশাকে ব্যবহৃত হয় সুতি উপাদান। হ্যাটেও আসে পরিবর্তন।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয় ১৯১৪ সালে। সেখানেও মার্কিন সেনাবাহিনীর পোশাকের রূপ পাল্টে যায়। খাকি রঙ অপরিবর্তিত থাকে। হ্যাটের বদলে প্রথমবারের মতোন মাথায় যুক্ত করা হয় হেলমেট। আর পায়ে লম্বা বুট।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মার্কিন সেনা সংগৃহীত
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও মার্কিন সেনাবাহিনীর পোশাকে কিছু পরিবর্তন আসে। খাকি রঙ থাকে। সেই সঙ্গে যুক্ত হয় জ্যাকেট। মাথায় বুলেট প্রুফ এম ওয়ান হেলমেট ব্যবহার শুরু হয় মার্কিন বাহিনীতে।
কোরিয়া যুদ্ধ ও ভিয়েতনাম যুদ্ধে মার্কিন সেনাবাহিনীর পোশাকে প্রথম জলপাই রঙ ব্যবহৃত হয়। কাছাকাছি সময়ে সংঘটিত এই দুই যুদ্ধে একই পোশাক পরিধান করে মার্কিন বাহিনী।
সংগৃহীত
১৯৯০ সালে কুয়েত দখলের “অপারেশন ডেজার্ট স্টর্ম” এর সময়ে মার্কিন সেনাবাহিনীর পোশাকে পরিবর্তন আনা হয়। মরুভূমির রঙের সঙ্গে মিলিয়ে ক্যামোফ্লেজ পোশাক ধারণ করে এই বাহিনী।
সময় ও অভিযানের ভিন্নতার জন্য মার্কিন সেনাবাহিনীর পোশাক আবার বদলে যায় ২০০৪ সালে। আর্মি কমব্যাট ইউনিফর্ম নামে এটি পরিচিতি পায়। এই বিশেষ পোশাক ছিল আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে হালকা ধরনের। এতে হ্যাট থাকে। ক্ষেত্র বিশেষে থাকে টি-শার্ট। মার্কিন সেনাবাহিনী অপারেশনাল ক্যামোফ্লেজ ইউনিফর্ম বাধ্যতামূলক করে ২০১৫ সালে। মরু বা জঙ্গল যেকোনো স্থানে নিজেদের আড়াল করে প্রতিপক্ষকে ধোঁকা দিতে এই পোশাক খুব কার্যকর। যুদ্ধক্ষেত্রে প্রতিটি সৈনিককে প্রযুক্তি সুবিধা দেওয়া শুরু হয় এ সময় থেকেই। এখনও এ পোশাক পরেই পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি স্থানে মোতায়েন রয়েছে মার্কিন বাহিনী।

এভাবেই সময়ের সাথে পাল্টেছে পৃথিবীর শীর্ষে থাকা সেনাবাহিনীর পোশাক। অশান্ত পৃথিবীতে যুদ্ধ এখনও থামেনি। একদিন হয়তো থামবে এ স্বপ্ন দেখতে দোষ কী? কবি শহীদ কাদরীর ভাষায়, “আর্মাড কারে অর্কেডিয়ান বোঝাই করে তখন সেনাবাহিনী ফিরে আসবে শান্তি প্রিয় শহরে।”
প্রকাশক ও সম্পাদক- আলি আবরার । নিরালা, খুলনা থেকে প্রকাশিত