
প্রাকৃতিক লাইম মস বা শৈবাল, যা স্থানীয়ভাবে চুনা শেওলা নামে পরিচিত, যশোর ও খুলনার পাঁচটি উপজেলা—অভয়নগর, মনিরামপুর, যশোর সদর, ডুমুরিয়া ও ফুলতলায় পাঁচ লক্ষাধিক মানুষের জীবিকার অন্যতম প্রধান উৎস হয়ে উঠেছে।
মাছচাষিরা জলাশয় ও বিভিন্ন পানিসম্পদ থেকে সংগ্রহ করা চুনা শেওলাসহ নানা ধরনের শৈবাল এখন প্রাকৃতিক খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করছেন। তাদের মতে, শৈবাল ব্যবহারে মাছ দ্রুত বাড়ে, উৎপাদন খরচ কমে, মাছ সতেজ থাকে, রোগের ঝুঁকি হ্রাস পায় এবং বাণিজ্যিক খাদ্যের ওপর নির্ভরতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে।
অভয়নগরের মাছচাষি গোবিন্দ সাহা বলেন, “শেওলাভিত্তিক খাদ্যে মাছ প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠে, এতে পরিবেশের ক্ষতি হয় না। পাশাপাশি স্থানীয় প্রজাতির জন্যও অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়, যা কৃষকদের বেশি মুনাফা এনে দেয়।”
সম্প্রতি বিভিন্ন জলাভূমি এলাকায় দেখা গেছে, নারী-পুরুষ মিলে শেওলা সংগ্রহ করছেন। বিশেষ করে চুনা শেওলা সংগ্রহে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। আগে যারা বেকার ছিলেন, তারা এখন প্রতিদিন শেওলা সংগ্রহ করে ৫০০-৭০০ টাকা পর্যন্ত আয় করছেন।
অভয়নগরের গৃহবধূ শামসুন্নাহার বলেন, “আমাদের এলাকায় অনেক নারীর জন্য এটি আয়ের উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংগৃহীত চুনা শেওলা চিংড়ি ঘের ও পুকুরের মালিকদের কাছে বিক্রি করে উপকৃত হচ্ছেন অনেকে।”
মাছ ব্যবসায়ী প্রশান্ত রায় জানান, শেওলা সংগ্রহ ও বেচাকেনা একটি নিয়মিত কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র তৈরি করেছে।
এ শেওলা শ্রী, হরি, টেকা ও ভৈরব নদীসহ স্থানীয় জলাশয় থেকে সংগ্রহ করা হয়। পরে ভ্যান বা ছোট ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। একটি ট্রাক শেওলার দাম গুণগত মান ও চাহিদার ওপর নির্ভর করে ৫০০ থেকে ১,০০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়।
খুলনার সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রজেক্টের প্রকল্প পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, অনেক মাছচাষি প্রাকৃতিক শৈবাল, বিশেষ করে চুনা শেওলার ওপর নির্ভরশীল। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, অতিরিক্ত শেওলা ব্যবহার করলে পানির মান নষ্ট হতে পারে এবং মাছের মৃত্যুও ঘটতে পারে।
“এটি সতর্কভাবে ব্যবহার করা উচিত, যদিও শেওলা পরিবেশবান্ধব খাদ্য হিসেবে কার্যকর। বিশেষ করে ভোবদোহোর মতো বন্যাকবলিত অঞ্চলে জীবিকা নির্বাহে এর ভূমিকা অস্বীকার করার উপায় নেই,” যোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, শেওলা পৃথিবীর সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় ও পরিবেশগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ জীবের মধ্যে অন্যতম। নদী, মিঠাপানির জলাশয়, মাটি এমনকি বরফেও পাওয়া যায় শেওলা। এটি পরিবেশ টিকিয়ে রাখতে, খাদ্যশৃঙ্খল বজায় রাখতে, অক্সিজেন উৎপাদনে এবং জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।