সারাদেশে বিভাগীয় পর্যায়ের সমাবেশ শেষে আগামী ১০ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। পূর্বনির্ধারিত এই কর্মসূচি দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় নয়াপল্টনে করার বিষয়ে দলটি অনড় থাকলেও গত কয়েকদিনে অনেক জল ঘোলা হয়েছে। সরকারের একাধিক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা ঢাকার পাশে পূর্বাচল, কখনো মিরপুরের কালশীতে সমাবেশ করতে দেওয়ার কথা বলেছেন। তবে অনুমতি না পেলেও বিএনপি নেতারা নয়াপল্টনে সমাবেশ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
সবমিলিয়ে বিএনপির কর্মসূচি নিয়ে যখন স্পষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি তখন বিষয়টি পরিষ্কার করলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। জানালেন, বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার জন্য সরকার অনুমতি দেবে। দ্রুতই বিএনপিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন তারা (বিএনপি) যেখানে চেয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সেখানে যেন অনুমতি দিয়ে দেই। তাদের এটা জানিয়ে দেওয়া হবে যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে পারবে। তবে তারা কোনো ধরণের ভায়োলেন্স করবেন না, প্রতিবন্ধকতা ও জনদুর্ভোগ করবেন না এটা রিকোয়েস্ট থাকবে।
আসাদুজ্জামান খান কামাল, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
বিএনপি নেতারা শুরু থেকেই বলে আসছেন, ঢাকার সমাবেশে লাখ লাখ লোকের সমাগম ঘটাবেন। কেউ বলেছেন ঢাকা অচল করে দেবেন।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে জানালেন, কেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তাদের সমাবেশ করতে দেওয়া হবে।
বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সদরঘাটে বিলাসবহুল লঞ্চ উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের (বিএনপি) কখনো মানা করি নাই। তারা সারাদেশে সভা-সমাবেশ করছে। ঢাকার জন্যও তাদের আমরা মানা করি নাই। আমরা শুধু আশঙ্কার কথা বলছি। আপনারা যে ২৫ লাখ লোক নিয়ে আসবেন, ৩০ লাখ লোক নিয়ে আসবেন কোথায় বসাবেন তাদের। কোথায় জায়গা দেবেন। সারা ঢাকা তো অচল করে দেবেন তাদের কথাবার্তায় তাই মনে হচ্ছে। তাদের লেটেস্ট একটা দাবি ছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। আমাদের তরফ থেকে জানিয়ে দেওয়ার জন্য কমিশনারকে বলে দিয়েছি, প্রধানমন্ত্রীরও নির্দেশনা তাই।
নেতাকর্মীদের হত্যার বিচার, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও দলের প্রধান খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ নানা দাবিতে দুই মাস ধরেই দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে সমাবেশ করে আসছে বিএনপি। ইতোমধ্যে সাতটি বিভাগে সমাবেশ শেষ করেছে দলটি।
এরই অংশ হিসেবে আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে দলটি। এজন্য গত মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের কার্যালয়ে গিয়ে মহাসমাবেশের অনুমতির বিষয়ে কথা বলেন বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল।
ডিএমপি কমিশনার বরাবর লিখিত ওই দরখাস্তে বিএনপির পক্ষ থেকে নয়াপল্টনে সমাবেশ করার অনুমতি চাওয়া হয়। যদিও মন্ত্রী জানিয়েছেন, বিএনপি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও অনুমতি চেয়েছে।
১০ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশের অনুমতির বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, এ ব্যাপারে আমরা আগের অবস্থানেই আছি। আমরা মনে করি বিএনপি একটি রাজনৈতিক দল। তাদের রাজনীতি করার অধিকার আছে। নিয়মতান্ত্রিকভাবে, গঠনমূলক রাজনীতি করবে। তাদের আমাদের কোনো বাধা নেই। তারা যদি রাজনৈতিক শিষ্টাচার ভঙ্গ করে, অন্য কিছু করতে চেষ্টা করে তখন আমাদের অবস্থান দেখা যাবে।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন তারা (বিএনপি) যেখানে চেয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সেখানে যেন অনুমতি দিয়ে দেই। তাদের এটা জানিয়ে দেওয়া হবে যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে পারবে। তবে তারা কোনো ধরণের ভায়োলেন্স করবেন না, প্রতিবন্ধকতা ও জনদুর্ভোগ করবেন না এটা রিকোয়েস্ট থাকবে।
