রাজধানীর চকবাজারে হার্ডওয়্যার মার্কেটে লাগা আগুন দুই ঘণ্টার বেশি সময়ের চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট আগুন নেভাতে কাজ করে। অগ্নিকাণ্ডে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা এখনও নিরূপণ করতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। তবে স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, আগুনে শতাধিক দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। অর্ধশত কোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগুনে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ১টা পাঁচ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে বলে জানিয়েছেন সিভিল ডিফেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের সদর দফতরের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লে. কর্নেল জিল্লুর রহমান। এর আগে রাত ১০টা ৪৪ মিনিটে আগুনের সূত্রপাত্র হয়।
কর্নেল জিল্লুর রহমান গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, রাত ১০টা ৪৪ মিনিটে আগুনের সূত্রপাত হয় এবং ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে প্রথম ১০টা ৫২ মিনিটে তাদের প্রথম ইউনিটের গাড়িতে ছুটে যায়। এরপর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দুই ঘণ্টারও বেশি সময়ের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
জিল্লুর রহমান জানান, মার্কেটে কোনো ধরনের অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ছিল না। ফলে আগুনে নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খেতে হয়েছে তাদের। এছাড়াও ছিল গাড়ি প্রবেশের বাধা। মার্কেটের চারপাশে সরু রাস্তা হওয়ায় ফায়ার সার্ভিসের কোনো গাড়ি সেখানে পৌঁছেনি। পানির ব্যবস্থাও ছিল না। ফলে আশপাশের নর্দমা, ড্রেন এবং পাশে থাকা নদীতে পাম্প লাগিয়ে পাইপ দিয়ে সেই পানি এনে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
এই কর্মকর্তা জানান, আগুন লাগার পর স্থানীয় লোকজন ছাড়াও ব্যবসায়ীরা তাদের নানাভাবে সহযোগিতা করার ফলে দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণ আনা সম্ভব হয়েছে। তবে মার্কেটিতে কতটি দোকান পুড়ে গেছে তা এখনও নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। আগুন পুরোপুরি নেভানোর কাজ শেষ হলে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা সম্ভব হবে। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি করা হবে।
এদিকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জানিয়েছেন, মার্কেটটির নিচ তলায় হার্ডওয়্যারের দোকান ছিল। যেগুলোর বেশিরভাগ টিন কাঠের তৈরি। ফলে অধিকাংশ দোকান পুড়ে গেছে। প্রথমে একটি কাঠের মার্কেটে আগুন লাগে, পরে তা ছড়িয়ে পড়ে আরেকটি কাঠের মার্কেটে। এরপর আরও দুটি চারতলা ভবনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। সব মিলিয়ে চার স্থানে আগুন ছড়িয়ে পড়ায় আগুন নেভাতে বেশ বেগ পেতে হয়।
কী কারণে আগুনের ঘটনা ঘটেছে তা এখনও জানতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। ধারণা করা হচ্ছে, বিদ্যুতের শর্ট-সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত।
এলাকাবাসী ও দোকানদারেরা বলছেন, মার্কেটে হাজারখানেক দোকান রয়েছে। এর মধ্যে শতাধিক দোকান পুড়ে গেছে। প্রতিটি দোকানে কোটি কোটি টাকার মালামাল ছিল। তাদের ধারণা, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অর্ধশত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
প্রতিটি টিন ও কাঠের দোকান পুড়ে গেছে। ফলে কোনো মালামাল রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। অনেক দোকানে আলকাতরা এবং বিস্ফোরক জাতীয় দ্রব্য থাকায় আগুনের তীব্রতা বেশি ছিল বলে মনে করছেন তারা।
দোকানদারদের অভিযোগ, তারা বিভিন্ন সময় মার্কেট মালিক সমিতির নেতাদের অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা রাখার জন্য তাগিদ দিয়েছেন। কিন্তু তারা বিষয়টিতে অবহেলা করায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের শিকার হতে হলো তাদের।
প্রকাশক ও সম্পাদক- আলি আবরার । নিরালা, খুলনা থেকে প্রকাশিত