শুক্রবার মুসলিম উম্মাহর সাপ্তাহিক উৎসব ও ইবাদতের দিন। জুমআর এ দিনটিকে সাপ্তাহিক ঈদের দিনও বলা হয়।
শুক্রবারের আমল নিয়ে অনেক ফজিলতের কথা হাদিসে বলা হয়েছে।
রাসূল সাঃ এ দিনে বেশ কিছু ইবাদতের কথাও উল্লেখ করেছেন। এ ইবাদত বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুরু হয়।
শুক্রবার এর শাব্দিক ও পারিভাষিক অর্থ কি?
সাধারণ অর্থে শুক্রবারকে জুমার দিন বলা হয়। জুমা আরবি শব্দ। আবার শুক্রবারকে ‘ইয়াওমুল জুমা’ বলা হয়। জুমুআ বা জুমা।
বাংলায় এর শাব্দিক অর্থ একত্রিত হওয়া, সম্মিলিত হওয়া, কাতারবদ্ধ হওয়া ইত্যাদি।
পরিভাষায় জুমা বলে, প্রতি শুক্রবার দিনে প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানরা একটি নির্দিষ্ট সময়ে মসজিদে একত্র হয়ে জামাতের সঙ্গে যে নামাজ ফরজরূপে আদায় করে, সেই নামাজকে জুমার নামাজ বলে। আর সে দিন কে জুমার দিন বলে।
শুক্রবার অন্য দিন থেকে কেন আলাদা?
মালেক ইবনে শিহাব থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি ইবনে সাব্বাক থেকে বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) কোনো এক জুমার দিনে বললেন, ‘হে মুসলিম সম্প্রদায়! আল্লাহ তায়ালা এই দিনটিকে ঈদের দিন হিসেবে নির্ধারণ করেছেন।আল্লাহ তায়ালা নভোমণ্ডল, ভূমণ্ডল ও গোটা জগতকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। এই ছয় দিনের শেষ দিন ছিল জুম্মার দিন।জুমার দিনের মৃত্যুর ফজিলত ও রয়েছে।
এই দিনেই হজরত আদম (আ.) সৃজিত হন। এ দিনেই তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়। এবং এ দিনেই জান্নাত থেকেপৃথিবীতে নামানো হয়।হযরত আদম আঃ এর সৃস্টি: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, সূর্য উদিত হওয়ার দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম। এই দিনে আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই দিনে তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে এবং এই দিনে তাঁকে জান্নাত থেকে বের করা হয়েছে। (মুসলিম, হাদিস : ৮৫৪)
কেয়ামত শুক্রবারেই অনুষ্ঠিত হবে?
কেয়ামত এ দিনেই সংঘটিত হবে। আল্লাহ তায়ালা প্রতি সপ্তাহে মানবজাতির সমাবেশ ও ঈদের জন্য এ দিন নির্ধারণ করেছিলেন।
আল্লাহপাক কোরআন পাকে ইরশাদ করেন,
‘হে মুমিনগণ জুম্মার দিনে যখন নামাজের আজান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের উদ্দেশেও দ্রুত ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ কর’। সূরা জুমা, আয়াত নং-৯।
সংক্ষেপে শুক্রবারের আমল
যেহেতু মানুষের পড়ার ধৈর্য ও সময় খুব কম তাই খুব সংক্ষেপে কোরআন ও হাদিসের আলোকে শুক্রবারের মূল ইবাদতগুলো নিচে উল্লেখ করছি।
বৃহস্পতি বার রাত থেকেই বেশি বেশি দরুদ শরিফ পাঠ করা (যে কোন দরুদ পড়া যেতে পারে)।
শুক্রবার ফজরের নামাজে সুরা সাজদা ও সুরা ইনসান তেলাওয়াত করা
১. নাকে পানি দেওয়া
২. গড়গড়া করা
৩. সমস্ত শরীর ধৌত করা।)
৪. উত্তম পোশাক পরা।
৫. সুগন্ধি ব্যবহার করা।
৬. আগেভাগে মসজিদে যাওয়া।
৭. ইমামের কাছাকাছি গিয়ে বসা। এবং
মসজিদে গিয়ে জুমার নামাজের আগে ৪ রাকাত সুন্নত আদায় করা।
খুতবা চলাকালে কোনো কথা না বলা।
মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনা।
সুরা কাহফ তেলাওয়াত করা।
ফজিলত পূর্ণ আমল:
মুসনাদে আহমাদ এর ৫৮১ নং হাদিসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করল, আগে আগে মসজিদে গমন করল, হেঁটে মসজিদে গেল, ইমামের কাছাকাছি বসল, মনোযোগ দিয়ে খুতবা শুনল, কোনো কথা বলল না, আল্লাহ তায়ালা তাকে প্রতি কদমে এক বছরের নফল ইবাদতের সওয়াব দান করবেন।শুক্রবারের নামাজ:আজানের পরপর নামাজের জন্য মসজিদে প্রবেশ করা উত্তম। এবং মনোযোগের সঙ্গে খুতবা শোনাও ওয়াজিব।
শুক্রবার রাতের আমল
জুম্মার রাত (বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত) ও জুম্মার দিনে নবী করিম (সা.) এর প্রতি বেশি বেশি দরুদ পাঠের কথা বলা হয়েছে। এমনিতেই যে কোনো সময়ে একবার দরুদ শরিফ পাঠ করলে আল্লাহ তায়ালা পাঠকারীকে দশটা রহমত দান করেন এবং ফেরেশতারা তার জন্য দশবার রহমতের দোয়া করেন। জুম্মার নামাজের পূর্বে দুই খুতবার মাঝখানে হাত না উঠিয়ে মনে মনে দোয়া করা।
পি এস/এন আই
প্রকাশক ও সম্পাদক- আলি আবরার । নিরালা, খুলনা থেকে প্রকাশিত