
সুন্দরবন অভ্যন্তরে পারশে পোনা আহরণে উপকূলীয় সিন্ডিকেটগুলো সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সুন্দরবন ঘেঁষা জনপদ কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ ও সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার জেলেরা নিষিদ্ধ নেটজাল ছেকে পারশে মাছের পোনা আহরণ করে। এসব জেলেদের নিয়ন্ত্রণ করে বনবিভাগ, কোস্ট গার্ড, পুলিশ ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করতে গড়ে উঠে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। লক্ষ লক্ষ টাকা বিনিয়োগে এ সিন্ডিকেটটি সক্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রশাসনের সাথে দেনদার করতে তৎপর তারা। এদিকে, গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের অধীনস্থ নীলকমল বন টহল ফাঁড়ির বঙ্গবন্ধুর চর এলাকায় অভিযান চালিয়ে পোনা ধরার অপরাধে দু’টি ইঞ্জিন চালিত ট্রলার জব্দসহ ১৬ জেলেকে আটক করেছে বন বিভাগ।
সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ভোর সাড়ে ৪টার দিকে নীলকমল টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ জহিরুল ইসলামের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে এই সকল ট্রলারসহ জেলেদের আটক করে। আটককৃত জেলেরা হলেন, পাইকগাছা উপজেলার মিঠু গাজী, আব্দুর রাজ্জাক টুটুল, ইসলাম গাজী, এনামুল গাজী, আলী হোসেন, আল-আমীন, নুরুজ্জামান, রুহুল আমিন মোল্যা, লিটু গাজী। দাকোপ উপজেলার রুবেল গাজী, আলী হাসান শেখ, জাহাঙ্গীর শেখ, ইউসুফ শেখ, ফজলুর রহমান ও বাচ্চু ফকির।
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) ড. আবু নাসের মোহসীন হোসেন বলেন, এ সব্যাপারে বন আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আটক জেলেদেরকে কয়রা উপজেলা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী ও খালে অবাধে চলছে পারশে মাছের পোনা নিধন। মৎস্য প্রজনন এলাকা বা নিষিদ্ধ বনাঞ্চল ও বনের বিভিন্ন নদ-নদীতে নেটজাল দিয়ে পোনা ধরতে গিয়ে শতাধিক প্রজাতির জলজ সম্পদ নষ্ট করারও অভিযোগ উঠেছে। সুন্দরবনের আলোর কোল, দুবলার চর, বাটলুরচর, ছাচানাংলা, পশুর, আগুন জ্বালা, কালির চর, গেড়া চালকি, বজবজা, হংসরাজ, আন্দারমানিক, ঢাংমারী, ছিচখালী ও মজ্জত নদী থেকে বিপুল পরিমাণ পারশে মাছের নিষিদ্ধ পোনা আহরণ করে। এক্ষেত্রে মনো ফিলামেন্ট নেট ব্যবহার করায় পারশে পোনাসহ নিধন হচ্ছে বাগদা, গলদা ও বিভিন্ন প্রজাতি মাছের পোনা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জেলে জানান, দ্রুতগামী ট্রলারের মাধ্যমে প্রতিটি দলে ৮/১০ জন জেলে দুইশ’-তিনশ’ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৪০-৫০ মিটার প্রস্থ নেট জালের মাধ্যমে প্রতি টানায় কয়েক মন বিভিন্ন প্রজাতির পোনা ধরে নষ্ট করছে। এভাবে ২০-২৫টি দল প্রতিদিন পোনা শিকার অব্যাহত রেখেছে। ঊর্ধ্বতন কর্তা ব্যক্তিরা সুন্দরবনে অভিযানে আসলে অসাধু বন কর্মচারীরা আগেই জেলেদের জানিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ জেলেরা বনের মধ্যে পালিয়ে থেকে অভিযান শেষ হলে আবারও পোনা ধরতে থাকে।
পশুর নদী ওয়াটার কিপারের (সুন্দরবন কেন্দ্রিক পেশাজীবী সংগঠক) সমন্বয়ক মোঃ নুর আলম শেখ জানান, একশ্রেণির মহাজন অতিরিক্ত মুনাফার লোভে গরীব জেলেদেরকে হাজার হাজার টাকা অগ্রিম দিয়ে পোনা নিধনের জন্য সুন্দরবনে পাঠায়। গোন চুক্তিতে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এতে সহযোগিতা করছে কতিপয় বন কর্মকর্তা-কর্মচারী। পারশে পোনা আহরণের নামে হাজারো প্রজাতির জলজপ্রাণি নিধন করছে জেলেরা। অবিলম্বে অবৈধভাবে পারশে পোনা আহরণ বন্ধ করা উচিত। বন কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে অসাধু জেলেরা নিষিদ্ধ এলাকায় ঢুকে এ পোনা নিধন করছে।