কাশ্মীরে জঙ্গিদের গুলিতে ২৬ পর্যটক নিহতের প্রতিশোধ নিতে আগামী ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে ভারত পাকিস্তানে হামলা চালাতে পারে আশঙ্কা করছেন দেশটির তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার। তিনি বলেছেন, আগামী ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে ভারত, এমন ‘বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য’ পাকিস্তানের হাতে আছে।
মঙ্গলবার রাতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এমন মন্তব্য করেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে পাকিস্তানের প্রথমসারির গণমাধ্যম ডন।
একই দিন রাতে এক জরুরি বৈঠকে গত সপ্তাহে কাশ্মীরে প্রাণঘাতী হামলার ঘটনার জবাব দিতে নরেন্দ্র মোদি সশস্ত্র বাহিনীকে ‘অভিযান পরিচালনার পূর্ণ স্বাধীনতা’ দেয়ার খবরের মধ্যেই এই আশঙ্কা প্রকাশ করলেন আতাউল্লাহ তারার।
হামলার জবাব দিতে সেনাবাহিনীকে ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ দিলেন মোদি
গুজরাটে ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে আটকদের অধিকাংশই ভারতীয় মুসলমান
ভারতের এই সিদ্ধান্তের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ভারত পেহেলগামের ঘটনায় জড়িত থাকার ভিত্তিহীন ও বানোয়াট অভিযোগের অজুহাত দেখিয়ে আগামী ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নিতে চায় এমন ‘বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য’ পাকিস্তানের কাছে আছে।
তিনি বলেন, পাকিস্তান এ অঞ্চলে ভারতের স্বঘোষিত বিচারক ও সাজা কার্যকরের ভূমিকা তীব্রভাবে প্রত্যাখ্যান করছে। দেশটির এ আচরণ বেপরোয়া।
পাকিস্তান নিজেই সন্ত্রাসবাদের বড় ভুক্তভোগী দাবি করে তিনি বলেন, এই অভিশাপের যন্ত্রণা গভীরভাবে অনুধাবন করে। আমরা বিশ্বের যেকোনো জায়গায় সবসময় সব ধরনের সন্ত্রাসবাদ এবং এর বহিঃপ্রকাশের নিন্দা জানিয়ে আসছি। দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তান সত্য নিরূপণের জন্য বিশেষজ্ঞদের একটি নিরপেক্ষ কমিশনের মাধ্যমে বিশ্বাসযোগ্য, স্বচ্ছ এবং স্বাধীন তদন্তের আন্তরিক প্রস্তাব দিয়েছে।
তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যবশত যুক্তির পথ অনুসরণ করার পরিবর্তে ভারত স্পষ্টতই অযৌক্তিকতা এবং সংঘাতের বিপজ্জনক পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার পরিণতি সমগ্র অঞ্চল এবং এর বাইরেও হবে বিপর্যয়কর। বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত এড়িয়ে যাওয়াই ভারতের আসল মতলব প্রকাশের জন্য যথেষ্ট প্রমাণ।
আতাউল্লাহ সতর্ক করে বলেন, ভারতের এ ধরনের যেকোনো সামরিক অভিযানের জবাব নিশ্চিতভাবে এবং দৃঢ়তার সঙ্গেই দেওয়া হবে। যেকোনো মূল্যে পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডগত অখণ্ডতা রক্ষায় দেশটির সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই এই বাস্তবতা সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে যে পাল্টাপাল্টি উত্তেজনা সৃষ্টি এবং এর পরবর্তী পরিণতির দায়ভার সরাসরি ভারতের ওপর বর্তাবে।
এর আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তিন বাহিনীর প্রধান, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন।
ভারতের সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে দেশটির সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু জানিয়েছে, রাতে ওই বৈঠকে নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ভারতের পক্ষ থেকে জবাব দেওয়ার সময়, লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ এবং কোন প্রক্রিয়ায় জবাব দেওয়া হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সশস্ত্র বাহিনীর ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ রয়েছে।
গত ২২ এপ্রিল পেহেলগামে পর্যটকদের নির্বিচারে গুলি হত্যা করে জঙ্গিরা। এর দায় স্বীকার করেছে দ্য রেজিস্ট্যান্স ফোর্স নামে একটি জঙ্গি দল, যারা পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর ই তাইয়্যোবা সংশ্লিষ্ট বলে দাবি ভারতীয় গোয়েন্দাদের। এই হামলার জন্য ভারত সরকার পাকিস্তানকে দায়ী করছে। তবে ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।