সরকার পরিবর্তনের পর অনেক প্রকল্প পরিচালককে এখন আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেছেন, অনেক প্রকল্পের পরিচালক পদত্যাগ করেছেন। অনেককে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তারা হয়তো দুর্নীতি করেছেন। মাতারবাড়ী প্রকল্পের পরিচালককে পাওয়া যায়নি। যাওয়ার আগে তিনি প্রকল্পের অনেক জিনিসপত্র বিক্রি করে দেন। এরকম অনেক প্রকল্পে নতুন করে পরিচালক নিয়োগ দিতে হচ্ছে। পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেছেন, রাজনৈতিক প্রকল্প, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় ও দুর্নীতির প্রকল্প বাদ দিতে গিয়ে গত চার মাসে এডিপি বাস্তবায়নের হার ধীর হয়ে এসেছে।
গতকাল সোমবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি। রাজধানীর পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে বৈঠক শেষে এ ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস একনেক বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। অন্তর্বর্তী সরকারের তৃতীয় একনেক এটি। সরকার গঠনের প্রায় চার মাসের মাথায় গতকালই প্রথমবারের মতো এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক বৈঠক হয়। আগেরগুলো রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সরকারের অন্যান্য উপদেষ্টা এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
গতকাল একনেক বৈঠকে পাঁচটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। এসব প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৯১৬ কোটি টাকা। এ ব্যয়ের মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ১ হাজার ৯৬ কোটি টাকা, বৈদেশিক ঋণ ৪ হাজার ৭৮৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা ও বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর নিজস্ব অর্থায়ন ৩২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।
বর্তমান সরকারের নতুন উন্নয়ন দর্শন ব্যাখ্যা করে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, উদ্ভাবনী এবং নতুন ধারার উন্নয়ন প্রকল্প নেবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। আধুনিক প্রযুক্তি, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প থাকবে নতুন ধারার এ উন্নয়ন পরিকল্পনায়। শিগগির এরকম কিছু নতুন প্রকল্প তৈরির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ব্রিফিংয়ে মূল্যস্ফীতি, মজুরি, সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগসহ অর্থনীতির বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা। এ বছর এডিপিতে কাটছাঁট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রতি বছরই বাজেটের থেকে কম বাস্তবায়ন হয়। এবার উন্নয়ন বাজেটে বড় অঙ্কের কাটছাঁট হবে। কারণ অনেক প্রকল্প বাদ দিতে হয়েছে।
তিনি বলেন, নতুন করে প্রস্তাব করা হয়েছে, এমন প্রকল্পের অনেকগুলোই বাদ দিতে হয়েছে। এর অনেকগুলো তো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। যেগুলো ব্যয় অনুযায়ী সুফল বয়ে আনবে বলে মনে হয়নি– সেগুলো বাদ দেওয়া হয়েছে। কাজেই বাজেট সংশোধনের প্রয়োজন দেখা দেবে।
মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা স্থবিরতা আছে। মূল্যস্ফীতির হার বেশি। জিনিসপত্রের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের জীবনকে ব্যাহত করছে। গ্রামগঞ্জের দোকানপাটে বেচাকেনা কম হচ্ছে। মানুষের আয়-ব্যয় সংকুচিত হয়েছে।বিনিয়োগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাজনৈতিক অনিশ্চিয়তার কারণে, বিশৃঙ্খলার কারণে বেসরকারি খাতে উৎপাদন যা আছে, সেখানে স্থবিরতা দেখা যাচ্ছে। এসব কারণে বেসরকারি বিনিয়োগ নেই। তার ওপর সুদের হার অনেক বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তাতে করে উদ্যোক্তারা উৎসাহিত হচ্ছেন না নতুন বিনিয়োগের ব্যাপারে। সে ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতে নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না, অন্যদিকে সরকারি উন্নয়ন ব্যয়ও যদি না বাড়ে, তাহলে তো অর্থনীতিতে মন্দা অবস্থা তৈরি হবে। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ না হলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কী হবে– জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এক বছর বিনিয়োগ শূন্য হলেও অনেক প্রবৃদ্ধি হতে পারে।’
গতকাল একনেকে অনুমোদন হওয়া প্রকল্পগুলো হচ্ছে– বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের পূর্বাঞ্চলীয় গ্রিড নেটওয়ার্কের পরিবর্ধন এবং ক্ষমতা বর্ধন প্রকল্প, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ক্যাপাসিটি বিল্ডিং অব ইউনিভার্সিটিস ইন বাংলাদেশ টু প্রোমোট ইয়ুথ এন্টারপ্রেনারশিপ প্রকল্প, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের মোংলা বন্দরে আধুনিক বর্জ্য ও নিঃসৃত তেল অপসারণ ব্যবস্থাপনা প্রকল্প, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের চট্টগ্রাম পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প (ক্যাচমেন্ট-২ ও ৪) প্রকল্প, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ইমার্জেন্সি মাল্টি সেক্টর রোহিঙ্গা ক্রাইসিস রেসপন্স প্রজেক্ট (দ্বিতীয় সংশোধিত) প্রকল্প। এ ছাড়া ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে দুটি প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন হয়েছে।